Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

মেয়র সুভাষের খোঁজে ৬৭টি প্রশ্ন পুরসভায়!

এখনও পর্যন্ত কলকাতা পুর ইতিহাসে যত সংখ্যক ‘রেজ়োলিউশন’ বা প্রস্তাব পাশ হয়েছে, তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হল এটি! এমনটাই জানাচ্ছেন পুরকর্তাদের একাংশ।

ঐতিহাসিক: (১) মূল পুর ভবনের একতলায় রাখা সুভাষচন্দ্র বসুর ব্যবহৃত টেবিল-চেয়ার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

ঐতিহাসিক: (১) মূল পুর ভবনের একতলায় রাখা সুভাষচন্দ্র বসুর ব্যবহৃত টেবিল-চেয়ার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৯ ০১:১৫
Share: Save:

‘রেজ়োলিউশন নম্বর ৮২৪’।

এখনও পর্যন্ত কলকাতা পুর ইতিহাসে যত সংখ্যক ‘রেজ়োলিউশন’ বা প্রস্তাব পাশ হয়েছে, তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হল এটি! এমনটাই জানাচ্ছেন পুরকর্তাদের একাংশ।

কেন? এই ‘রেজ়োলিউশন’ অনুযায়ীই সুভাষচন্দ্র বসু কলকাতার মেয়র হয়েছিলেন! প্রায় নব্বই বছরের পুরনো সেই নথি নিয়েই আপাতত ব্যস্ততা তৈরি হয়েছে পুর প্রশাসনের অন্দরে। কারণ, কত ভোটে জিতে সুভাষচন্দ্র বসু কলকাতার মেয়র হয়েছিলেন, মেয়র থাকাকালীন তিনি কত বেতন পেতেন, সে বেতন কি নগদে দেওয়া হত, মেয়র থাকাকালীন কত দিন সুভাষ অফিসে হাজিরা দিয়েছিলেন-সহ এমন একাধিক প্রশ্ন তথ্য জানার অধিকার আইনে জানতে চেয়েছেন জনৈক ব্যক্তি। সেই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েই পুরনো নথির ভাণ্ডারে খোঁজ পড়েছে।

তা-ও প্রায় নব্বই বছরের পুরনো নথি! যা এত দিন সযত্নে সংরক্ষিত ছিল টাউন হলে। এমনিতে পুরসভার পুরনো সমস্ত বৈঠকের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য টাউন হলে বাঁধানো অবস্থায় সংরক্ষিত রয়েছে। প্রয়োজন মতো সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে নেন পুরকর্তারা। আরটিআই-এর উত্তর দেওয়ার জন্য সে রকমই এক নথি থেকে সুভাষচন্দ্রের মেয়র হওয়া সংক্রান্ত ঘটনাপ্রবাহের তথ্য সংগ্রহ করছেন পুরকর্তারা।

সংশ্লিষ্ট নথির তারিখ হল ১৯৩০ সালের ২২ অগস্ট। সে নথি জানাচ্ছে, সুভাষচন্দ্র মেয়র হতে পারবেন কি না, তা নিয়ে পুর অন্দরে এক সময়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কারণ, এক পক্ষের দাবি ছিল, সুভাষচন্দ্র অল্ডারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হলেও তিনি তখনও শপথ গ্রহণ করেননি। ফলে তিনি মেয়র পদের যোগ্য প্রার্থী কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল সেই পক্ষ। ওই পক্ষের তরফে আর এক জনের নাম মেয়র হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছিল। যদিও সে দাবি উড়িয়ে আর এক পক্ষের তরফে বলা হয়, মেয়র পদের জন্য সুভাষচন্দ্র একদমই যোগ্য প্রার্থী। তাদের দাবি ছিল, অতীতেও এমন নিদর্শন রয়েছে যে, শপথগ্রহণের আগে অন্য কেউ মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। যেমন যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত। যদিও এই ‘দোলাচলতা’র মধ্যে সুভাষচন্দ্র মেয়র হবেন কি না, শেষ পর্যন্ত তা ভোটাভুটির উপরে ছেড়ে দেওয়া হয়।

গুরুত্বপূর্ণ সেই রেজ়োলিউশনের প্রতিলিপি। ছবি: কলকাতা পুরসভার সৌজন্যে

তথ্য বলছে, শেষ পর্যন্ত সুভাষচন্দ্র ২৪ ভোটে পরাজিত করেছিলেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র পদপ্রার্থী উনসুদ দৌলাকে। সুভাষের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ছিল ৪৪। সেখানে উনসুদ দৌলা পেয়েছিলেন ২০টি ভোট। নথিটি শেষ হচ্ছে ‘রেজ়োলিউশন নম্বর ৮২৪’-এর উল্লেখ করে। যেখানে বলা হচ্ছে,—‘দ্যাট মিস্টার সুভাষ চন্দ্র বোস বি ইলেক্টেড মেয়র অব দ্য কর্পোরেশন অব ক্যালকাটা ফর দ্য রিমেনিং পিরিয়ড অব দ্য ইয়ার ১৯৩০-’৩১।’

ইতিহাসবিদ রজতকান্ত রায় বলছেন, ‘‘মেয়র হিসেবে হিন্দু-মুসলিম ঐক্য রক্ষা ও দারিদ্র্য নিবারণের জন্য সুভাষচন্দ্র বসু কাজ করেছিলেন। পুরসভার সিইও থাকাকালীনই অবশ্য তিনি ওই কাজের উপরে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু মেয়র হিসেবে তা আরও জোরদার ভাবে করতে থাকেন। যদিও পর্যাপ্ত সময় তিনি হাতে পাননি। তাড়াহুড়োর মধ্যেই তাঁকে কাজ করতে হয়েছিল।’’

পুরসভা সূত্রের খবর, সম্প্রতি আরটিআই আইনের মাধ্যমে সুভাষচন্দ্রের মেয়র হওয়া সংক্রান্ত ৬৭টি প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হয়েছে। শুধু প্রশ্নই নয়, সুভাষচন্দ্র বসুর মেয়র সংক্রান্ত যদি কোনও নথি থাকে, তারও প্রতিলিপি চাওয়া হয়েছে। পুরকর্তারা সে তথ্যের উত্তর তৈরি করছেন। তাতে সামান্যতমও যাতে ভুল না থাকে সে কারণে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে তা যাচাই করা হচ্ছে। উত্তরের খসড়া তৈরি করে তা চূড়ান্ত করতে তাতে কাটাছেঁড়াও চলছে। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘সুভাষচন্দ্র বসু পুরসভার চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার ছিলেন ১৯২৪-১৯২৮ সাল পর্যন্ত। মেয়র হন ১৯৩০ সালের অগস্টে। ফলে সে সংক্রান্ত তথ্যে যাতে কোনও ভুলচুক না হয়, পুরনো নথি ঘেঁটে-ঘেঁটে তাই সংগ্রহ করা হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

KMC Subhas Chandra Bose RTI Mayor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy