Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Eid al-Adha

Eid al-Adha: সিনাগগে ইদ কাটালেন আনোয়ার, সিরাজেরা

ধর্মে মুসলিম হয়েও সিনাগগ তাঁর কাছে ঈশ্বরেরই ঘর। আনোয়ার বলেন, “ইসলাম আসলে অন্য ধর্মের দিকে আঙুল তুলতেও শেখায় না।”

যত্ন: মাগেন ডেভিড সিনাগগে পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত আনোয়ার খান। রবিবার।

যত্ন: মাগেন ডেভিড সিনাগগে পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত আনোয়ার খান। রবিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২২ ০৬:৫৮
Share: Save:

মা জমিলা খাতুন, বউ নাসিমা, দুই মেয়ে তাহসিন, আলফি বা ছেলে আরশ রয়েছে ‘দেশে’, পুরীর কাকারপুরে। ইদের ছুটিতে গ্রামে যাব যাব করেও যাওয়া হয়নি আনোয়ার খানের। রবিবার সকালে রেড রোডে নমাজ পড়তে গিয়েছিলেন। এর পরে কলকাতার মাগেন ডেভিড সিনাগগে অতিথি বরণ করেই গোটা দিনটা কাবার।

তার উপরে রবিবার! বড়বাজারের ঘিঞ্জি ভিড় থেকে রেহাই পেতে দিনটায় অনেকেই এ তল্লাটে হাজির হন কলকাতার ইহুদিদের উপাসনালয় (সিনাগগ) দেখতে। এমন দিনে আনোয়ার, তাঁর বড়দা সিরাজ বা মামা রাব্বুল খানকে ছাড়া কেমন করে চলবে? কলকাতার সিনাগগে অনেক বিদেশিও আসেন। আনোয়ার, সিরাজদের নাম শুনে হাঁ হয়ে যান! বলছে কী! মুসলিম হয়ে সিনাগগের সেবায় শামিল! এর মধ্যে আশ্চর্যের কী আছে, তা অবশ্য মাথায় ঢোকে না আনোয়ারের!

ক্যানিং স্ট্রিট ও ব্রেবোর্ন রোডের সংযোগস্থলে ১৩৮ বছরের পুরনো অপরূপ এই মাগেন ডেভিড সিনাগগে এক রকম রক্তের সম্পর্কেই তিনি জড়িয়ে। আনোয়ারের বাবা খলিল খান, দাদা (ঠাকুরদা) মহরম খানও কাজ করেছেন এই সিনাগগে। বড়দা সিরাজ রয়েছেন পাশেই পোলক স্ট্রিটের বেথ এল সিনাগগে। শুভ্র কারুকাজে স্নিগ্ধ সিনাগগটির পত্তন ১৮৫৬ সালে। কলকাতায় ইহুদিদের সংখ্যা কোভিড অতিমারির পরে কমতে কমতে ঠেকেছে মাত্র ১৫-১৬ জনে। এক জন বাদে সকলেই ষাটোর্ধ্ব। তবু অসাধারণ স্থাপত্যের সিনাগগগুলি সব সময়েই ঝকঝক করছে। বছর ছয়েক আগে ইহুদিদের নিজেদের উদ্যোগেই পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের হাতে নতুন প্রাণ পেয়েছে সিনাগগগুলি। কয়েকশো বছরের আয়ু বেড়েছে তাদের। কে জানে, কখন পর্যটকেরা আসেন। তাই আনোয়ারেরা এখন এক ফোঁটা ধুলোও জমতে দেন না।

ধর্মে মুসলিম হয়েও সিনাগগ তাঁর কাছে ঈশ্বরেরই ঘর। আনোয়ার বলেন, “ইসলাম আসলে অন্য ধর্মের দিকে আঙুল তুলতেও শেখায় না। কোনারকের কাছে আমাদের দেশের বাড়িতে মা মঙ্গলার মন্দির, প্রভু জগন্নাথের রথের মতোই সিনাগগও। ফিলিস্তিনি সাহেব, মেমসাহেবরাও বলেন সিনাগগে নমাজ পড়তে এসেছি।” সাত দশক ধরে প্যালেস্তাইনে মুসলিম-ইহুদি সংঘাতের পটভূমিতে কলকাতার এই সহাবস্থান অনেকের কাছেই বিস্ময়কর ঠেকে। কিন্তু এ শহরে একটি আন্তঃধর্ম শান্তিমঞ্চের আহ্বায়ক ওবেজ় আসলাম বোঝান, “সংঘাতটা রাজনৈতিক। ইহুদি, মুসলিমে কয়েক শতক ধরে পাশাপাশি থেকেওছে।” আসলামের দিদিমা ইহুদি ছিলেন। নিউ মার্কেটের কেক, পাউরুটি খ্যাত নাহুম পরিবারেরও তিনি ঘনিষ্ঠ।

সিরিয়ার আলেপ্পো থেকে ১৭৯৮-এ এ দেশে প্রথম পা রাখা ইহুদি শালোম কোহেনের উত্তরপুরুষ ডেভিড অ্যাশকেনাজিও বলছিলেন, “সম্ভবত খাবারের রুচির মিলটাই এ দেশে ইহুদি ও মুসলিমদের মধ্যে ভাবের প্রধান কারণ। কেউই পর্ক খান না। আগে কলকাতায় ইহুদি বাড়িতেও মুসলিম পরিচারকেরা থাকতেন!” ইহুদিদের দোকান নাহুমের পাউরুটির কারিগর বা জিউয়িশ গার্লস স্কুলের ছাত্রীরাও বেশির ভাগই মুসলিম। ইদে তাঁরাও ছুটিতে মশগুল।

কিন্তু কলকাতায় এই সম্প্রীতির আরও কিছু কারণ আছে, বললেন ডেভিড মাগেন লাগোয়া নেভেহ শালোম সিনাগগের (কলকাতার প্রাচীনতম, ১৮২৫) সেবক মাসুদ হোসেন। ইংরেজি, বাংলা মিশিয়ে বললেন, “আসল কারণ আমরা ভারতীয়। ভারতীয় সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী। ভারতের সংবিধান সব ধর্মকে সমান চোখে দেখে। এটা মানলে কিসের সমস্যা!”

ইদের বিকেলে আনোয়ার, মাসুদেরা তাই ভাঙা-ভাঙা হিব্রু শব্দে ইহুদি ধর্মগ্রন্থ তোরা রাখার ঘর ‘হেই খাই’ চেনান আগন্তুকদের। কুরবানির সঙ্গতি নেই তাঁদের। তবে পরবের মাংস তাঁদের কাছেও পৌঁছেছে। কাজের ফাঁকে সিনাগগ চত্বরে পোলাও রাঁধার তোড়জোড় চলে। কলকাতা বা ভারতের সঙ্গে পরিচিত বিলেতবাসী ইহুদি পুরোহিত বা র‌্যাবাই জোনাথন গোল্ডস্মিথ সব শুনে বললেন, “ইদানীং কিছু অন্য ধারণা তৈরি হলেও এই সম্প্রীতিই ভারতের মূল সুর। এখনও এটাই ভারতের থেকে দুনিয়ার শেখার রয়েছে। এই ভারতের দিকেই আমরা তাকিয়ে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Eid al-Adha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy