Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
lockdown

কাজ নেই, টাকা নেই, কোথায় যাব! অগত্যা রেললাইনে মানিকেরা

মরিয়া হয়ে শ্রমিকদের ২০ জনের একটি দল দিন চারেক আগে রেললাইন ধরেই হাঁটতে শুরু করেছিলেন মালদহ ফিরবেন বলে!

মরিয়া: ইছাপুর স্টেশন চত্বরে সেই শ্রমিকেরা। নিজস্ব চিত্র

মরিয়া: ইছাপুর স্টেশন চত্বরে সেই শ্রমিকেরা। নিজস্ব চিত্র

সন্দীপন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২০ ০৩:৪২
Share: Save:

অওরঙ্গাবাদে মালগাড়ির নীচে ১৬ জন পরিযায়ী শ্রমিকদের পিষে যাওয়ার ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে। সেই একই রকম ঝুঁকি নিয়ে এ রাজ্যেও এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বাড়ি পৌঁছতে রেললাইন ধরে হাঁটতে শুরু করেছিলেন এক দল শ্রমিক। তবে মাঝপথে সহায়তা পেয়ে এবং এলাকার বিধায়কের ব্যবস্থা করা গাড়িতে চেপে শেষমেশ গ্রামে পৌঁছলেন তাঁরা। লকডাউনের মধ্যে গোটা দেশেই খেটে খাওয়া মানুষের জীবন কী সঙ্গিন অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে, তার ফের ইঙ্গিত দিয়ে গেল এই ঘটনা!

ধনঞ্জয় মণ্ডল, মানিক কুমার মণ্ডলদের সাকিন মালদহ জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লক। সোনারপুর রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় সিগন্যালের কেব্‌ল লাগানো ও সারানোর ঠিকা শ্রমিক এঁরা। কাজের জন্য অস্থায়ী ঠিকানা নরেন্দ্রপুরের কাছে। লকডাউনের সময় থেকে কাজ বন্ধ। হাত তুলে নিয়েছে ঠিকাদার সংস্থা। মরিয়া হয়ে শ্রমিকদের ২০ জনের দল দিনচারেক আগে রেললাইন ধরেই হাঁটতে শুরু করেছিলেন মালদহ ফিরে যাবেন বলে! শিয়ালদহে জিআরপি তাঁদের আটকায়। বাধ্য হয়ে এ বার তাঁরা রাস্তা ধরে হাঁটতে শুরু করেন। কিছু দূর এগিয়ে এসে উল্টোডাঙার কাছে ৯ জন ফের নেমে যান রেললাইনে। বাকি ১১ জন পথে সব্জি, দুধের গাড়ি ধরাধরি করে এগোতে থাকেন। লাইন ধরে এক দল হাঁটছে খবর পেয়ে উত্তর ২৪ পরগনার ইছাপুর স্টেশনে তাঁদের আটকান প্রদেশ কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া বিভাগের কো-অর্ডিনেটর অশোক ভট্টাচার্য। তিনিই নোয়াপাড়া শহর কংগ্রেসের সভাপতি। যোগাযোগ করা হয় হরিশ্চন্দ্রপুরের কংগ্রেস বিধায়ক মোস্তাক আলমের সঙ্গে। প্রশাসনিক অনুমতি নিয়ে গাড়ি পাঠান বিধায়ক। সতীর্থদের অশোক ওই ৯ জনকে খাইয়ে-দাইয়ে, হাতে কিছু টাকা দিয়ে তুলে দেন গাড়িতে। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় তাঁদের নিয়ে পৌঁছেছে গাড়ি। বাকি ১১ জনও এ গাড়ি-সে গাড়ি চেপে এ দিনই পৌঁছেছেন হরিশ্চন্দ্রপুর।

কেন হাঁটছিলেন ওই ভাবে? মানিক বলছেন, ‘‘৪০-৪৫ দিন কাজ নেই। হাতে টাকা নেই। কোম্পানি (ঠিকাদার) বলে দিয়েছে কিছু করতে পারবে না। আমরা ওখানে কাউকে চিনি না। ভাবলাম, কম খেয়ে একটু কষ্ট করে রেললাইন ধরেই বাড়ি ফিরে যাব।’’ অন্য জেলা থেকে এসেছেন আপাতত তাঁদের অবশ্য থাকতে হচ্ছে ১৪ দিনের কোয়রান্টিনে। মানিক যোগ করছেন, ‘‘যেখানে খাবার পেতাম, এক বেলা খেতাম। রোদ একটু পড়লে হাঁটতাম। তার পরে অশোকবাবু ব্যবস্থা করলেন।’’

আরও পড়ুন: লকডাউন যেন উঠেই গিয়েছে, বলছে জটলা

সদ্য খোলা অফিসে, দোকানে নজরদারি পুলিশের

অশোকের বক্তব্য, ‘‘কিছু শ্রমিক মানুষ অসহায় হয়ে রেললাইন ধরে হেঁটে ফিরতে চাইছেন, মানুষ হয়ে এটা মেনে নেওয়া যায়?’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র, লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী থেকে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বা বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী সকলেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যন্ত দরবার করছেন পরিযায়ীদের ফেরানোর জন্য। কেন্দ্র ও রাজ্য ‘দায়’ চাপাচ্ছে পরস্পরের ঘাড়ে। আর মানিক, ধনঞ্জয়েরা হাঁটছেন!

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

Congress MLA Lockdown Labourers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy