Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
railway

‘কাছাকাছি থাকার সম্পর্কে করোনাও ভাঙন ধরাতে পারবে না’

প্রায় সাড়ে সাত মাস বন্ধ থাকার পরে আনলক-পর্বে সাধারণের জন্য লোকাল ট্রেনের চাকা গড়ানোর প্রথম দিন ছিল বুধবার।

 দমদম স্টেশনে ট্রেন থেকে নামছেন যাত্রীরা। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

দমদম স্টেশনে ট্রেন থেকে নামছেন যাত্রীরা। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২০ ০২:১১
Share: Save:

‘‘বাসে পুরো সময়টাই দাঁড়িয়ে এসেছি। কিসের দু’জন? চাপুন তো, চাপুন!’’ দরদর করে ঘামতে থাকা এবং মাস্ক খুলে গলার কাছে নেমে আসা যুবকের সুরেই আর এক মধ্যবয়সির মন্তব্য, ‘‘করোনার ভয় যাঁরা পাচ্ছেন, তাঁরা দয়া করে ট্যাক্সি ধরুন। আমরা তিন জনের জায়গায় বরাবর চার জন
বসতেই অভ্যস্ত। কাছাকাছি থাকার সম্পর্কে করোনাও ভাঙন ধরাতে পারবে না!’’

প্রায় সাড়ে সাত মাস বন্ধ থাকার পরে আনলক-পর্বে সাধারণের জন্য লোকাল ট্রেনের চাকা গড়ানোর প্রথম দিন ছিল বুধবার। সকালে অফিসের ব্যস্ত সময়ে তো বটেই, সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরতা রেল-জনতাকেও দেখা গেল, দূরত্ব-বিধি মানার কোনও চেষ্টাই নেই তাঁদের। মাস্ক পরে ট্রেনযাত্রার নিয়মানুবর্তিতার যে চিত্র দিনের শুরুতে তবু দেখা গিয়েছিল, বেলা বাড়তে তা-ও ক্রমেই উধাও। অভিযোগ, স্টেশন চত্বরে রেল পুলিশের নজরদারি সে ভাবে ছিল না। তা ছাড়া, করোনা-বিধি মেনে চলার ঘোষণাও একটা সময়ের পরে বন্ধ হয়ে যায় স্টেশন মাস্টারের ঘর থেকে। স্টেশনে ঢোকা ও বেরোনোর পথে নজরদারিও বন্ধ হয়ে যায় বেলা পড়তে। যা দিনের শেষে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকাকালীন প্রথম দিনেই যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে পরে কী হবে? কালীপুজো বা দীপাবলিতেই বা রেলের ভিড় সামাল দেওয়া হবে কী ভাবে?
রেলের অবশ্য দাবি, সবটাই হয়েছে পরিকল্পনা মাফিক এবং সুষ্ঠু ভাবে। এ দিন শিয়ালদহ ডিভিশনে ৪১৩টি ট্রেন চালানোর কথা ছিল। তার মধ্যে সকালের ব্যস্ত সময়ে শিয়ালদহগামী কিছু ট্রেনে এবং সন্ধ্যায় শিয়ালদহ থেকে ছেড়ে যাওয়া কয়েকটি ট্রেনে কিছুটা ভিড় থাকলেও স্টেশনগুলি ছিল মূলত ফাঁকাই। তার মধ্যেই স্টেশনে আগত যাত্রীদের মাস্ক পরতে বলা হয়েছে এবং স্যানিটাইজ়ার দেওয়া হয়েছে।

এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ দমদম স্টেশনে নেমেই মেট্রোর জন্য ছুটতে শুরু করা এক ব্যক্তি ভিড়ের মধ্যেই বললেন, ‘‘ভিড় নিয়ে ভাবছিই না। এত দিন বাদে কম টাকায় কাজে যেতে পারছি, এটাই বড় কথা।’’ শিয়ালদহ স্টেশনে নামা বৌবাজারের সোনার কারিগর রাজীব ঘোষ বললেন, ‘‘সাড়ে সাত মাস কাজ ছিল না। আবার কাজের খোঁজে যাচ্ছি।’’ বিধাননগর স্টেশনে ছুটেও ট্রেন ধরতে না পারার বিরক্তিতে মাস্ক খুলে ফেলা এক মহিলা আবার বললেন, ‘‘ট্রেন চালু হলে কী হতে পারে, সকলেই জানতেন। তাই প্রশ্ন তুলে লাভ নেই।’’

শিয়ালদহ স্টেশনের দক্ষিণ শাখায় ভিড়ের মধ্যে দিয়েই সন্ধ্যায় ট্রেন ধরার জন্য এগোনো সরকারি কর্মী শ্যামল কর্মকারের আবার আক্ষেপ, ‘‘এত দিন ভালই ছিলাম। সকলের জন্য ট্রেন চালু করে ভিড় বাড়িয়ে দিল। রেলের লাগানো স্টিকার ঢেকে দিয়ে সব আসনেই চার জন করে বসছেন। আমাদেরও এ ভাবেই যেতে হবে এখন থেকে!’’
বিধাননগর স্টেশনে দেখা গেল, সন্তান কোলে বেরিয়ে পড়েছেন মাস্কহীন দম্পতি। তাঁদেরই এক জন বললেন, ‘‘শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে বিজয়ার প্রণাম এ বার হবে না ধরে নিয়েছিলাম। সেখানে ট্রেনে চড়ে বিজয়া করতে যাচ্ছি। করোনার ভয় পেলে চলবে!’’

অন্য বিষয়গুলি:

railway Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy