বাসস্থান: ইলিয়ট পার্কে পুকুরের পাশে হাঁটার রাস্তা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
খোদ মুখ্যমন্ত্রী হাঁটেন পার্কে। তাই নজরদারি চালাতে গোটা পার্ক মুড়ে ফেলা হয়েছিল সিসি ক্যামেরায়। কিন্তু সেই উদ্যানে সাপের অবাধ বিচরণ আটকাবে কে?
প্রশ্নটা উঠেছে বিড়লা তারামণ্ডলের কাছে ইলিয়ট পার্ক নিয়ে। সেখানে যে সাপ ঘুরে বেড়ায়, তা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। সম্প্রতি এসএসকেএম হাসপাতালে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি জানান, এক দিন ওই পার্কে হাঁটার সময়ে ফণা তুলে থাকা দু’টি সাপ দেখেছিলেন তিনি। আর একটি সাপ আবার সাঁতার কেটে উঠে আসছিল উপরে। তিন-তিনটি সাপের মুখোমুখি হওয়ার পর থেকে অবশ্য গরমে ও বর্ষায় ওই পার্কে হাঁটায় ‘ইতি’ টেনেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বছর দেড়েক আগের এক বিকেলে ওই ঘটনার পরে নড়েচড়ে বসেছিল কলকাতা পুরসভা ও বন দফতর। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর সর্প-আতঙ্কের জেরে অভিযান চালানো হয়েছিল ইলিয়ট পার্কে। তাতে ‘গ্রেফতার’ও হয়েছিল বেশ কয়েকটি সাপ। এমনকি, মাস দু’য়েক আগেও অভিযান চালিয়ে ওই পার্ক থেকে বন দফতর পাকড়াও করেছিল কয়েকটি ঢোঁড়া ও দাঁড়াশ সাপকে। কিন্তু বাকিরা? পার্ক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, তারা বহাল তবিয়তেই রয়েছে পুকুরে। তবে ওই সমস্ত সাপের বিষ নেই।
সাপের বিষ থাক বা না থাক, তাতে অবশ্য কিছু যায় আসে না আষাঢ়ের দুপুরে ইলিয়ট পার্কে ভিড় জমানো মানুষের। সেলসের কাজের ফাঁকে মাঝেমধ্যেই ওই পার্কে এসে কিছু ক্ষণ জিরিয়ে নেন ঝন্টু পাল। বললেন, ‘‘পুকুরে তো সাপ থাকবেই। তাই অন্ধকারে ওই পুকুরের পাশ দিয়ে হাঁটাচলা করাটা বিপজ্জনক। আমি অবশ্য দুপুরে এখনও পর্যন্ত কোনও দিন পার্কে সাপ দেখিনি।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কলেজপড়ুয়া তরুণ ও তরুণী অবশ্য সাপের কথা শুনে হেসে বললেন, ‘‘দুপুরে মাত্র তিন ঘণ্টা সাধারণের জন্য খোলা থাকে পার্ক। সেই সময়ে সাপ নিশ্চয়ই কাউকে ভয় দেখাবে না।’’
প্রতিদিন ভোর পাঁচটা থেকে সকাল ন’টা এবং দুপুর একটা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত খোলা থাকে ইলিয়ট পার্ক। প্রায় ৬৪ বিঘা জমিতে গড়ে ওঠা ওই পার্কের চার দিক ছোট-বড় গাছে ঘেরা। মাঝখান দিয়ে এঁকেবেঁকে চলে গিয়েছে পেভার ব্লক বসানো বেশ কয়েকটি হাঁটার পথ। পার্কের ভিতরে রয়েছে দু’টি ছোট ও একটি বড় বাঁধানো পুকুর। ছোট পুকুর দু’টিতে ফুটেছে রঙিন শালুক ফুল। জলে ভেসে থাকা পাতার উপরে ঠিকরে পড়ছে রোদ। ‘‘ওই পাতার উপরেই শুয়ে রোদ পোহায় ঢোঁড়া সাপগুলি, খুব একটা ছোটাছুটি করে না,’’ বললেন পার্কের এক কর্মী। তবে বর্ষায় পুকুর টইটম্বুর হয়ে গেলে তখন এক-আধটা সাপ জল ছেড়ে বাঁধানো রাস্তায় চলে আসে। যদিও সেই সাপ এখনও পর্যন্ত কাউকে ‘কাটেনি’ বলেও দাবি কর্মীদের।
ইলিয়ট পার্কের পাঁচিলের ধার ঘেঁষে যে বাঁধানো রাস্তা চলে গিয়েছে, সেখানেই বিকেলে হাঁটতেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই রাস্তার পাশেই রয়েছে বড় পুকুরটি। বছর দেড়েক আগে এক বিকেলে সেখানে হাঁটার সময়েই ওই পুকুরের জলে একটি সাপকে সাঁতার কেটে উপরে উঠে আসতে দেখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আর পুকুর ঘেঁষা রাস্তার পাশের ঘাসে দেখেছিলেন ফণা তোলা দু’টি সাপকে।
সেই পুকুরের পাশেই চেয়ারে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে বসে ছিলেন এক যুবক। মুখ্যমন্ত্রীর ‘সাপ-দর্শন’ যে ওই জায়গাতেই হয়েছিল, তা শুনে তড়িঘড়ি উঠে পড়লেন তাঁরা। অন্যত্র গিয়ে বসার ফাঁকেই গোবিন্দ পাত্র নামে হাওড়ার বাসিন্দা ওই যুবক বললেন, ‘‘বিষ থাক বা না থাক, সাপ তো! সাপ মানেই ভয়ের ব্যাপার।’’ তবে ইলিয়ট পার্কে আসা মানুষের মন থেকে সাপের আতঙ্ক কাটাতে পুরসভার উদ্যান বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বললেন, ‘‘ওই ঘটনার পরে বন দফতর বেশ কয়েকটা সাপ ধরেছিল। এখনও মাঝেমধ্যে বন দফতরকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালানো হয়।’’
পার্কে বেড়াতে আসা দু’-এক জন আবার রসিকতা করে বললেন, ‘‘সাপমুক্ত পার্ক করতে এ বার কি বাবুরাম সাপুড়েকে ডাকা হবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy