লোকসান কমাতে বিমা করা হচ্ছে পাচারের সোনারও। ফাইল চিত্র
শুধুই শিক্ষা বা স্বাস্থ্য বিমা নয়। এখন বিমা করা হচ্ছে পাচার হওয়া সোনারও! তাই গোয়েন্দাদের হাতে সোনা ধরা পড়ে গেলেও বড় লোকসানের মুখ দেখতে হচ্ছে না পাচারকারীকে। তদন্তে নেমে ওই তথ্য হাতে এসেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের হাতে।
কখনও বিমানবন্দরে, কখনও সীমান্ত এলাকায় অথবা শহরের আনাচেকানাচে অনেক সময়েই চোরাই সোনা ধরা পড়ছে গোয়েন্দাদের হাতে। সেই সোনা চলে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের কোষাগারে। মনে করা হয়েছিল, এর ফলে প্রভূত ক্ষতির মুখে পড়ছেন পাচারকারীরা। তাই লোকসানের ভয়ে হয়তো পাচারকারীরা ভবিষ্যতে চোরাচালান বন্ধ রাখবেন বলে অনুমান করেছিলেন তদন্তকারীরা।
কিন্তু তদন্তে নেমে দেখা যাচ্ছে, বাস্তবের ছবি পুরোপুরি উল্টো! ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স (ডিআরআই)-এর আধিকারিকেরা জানতে পেরেছেন, বিভিন্ন পথ দিয়ে ভারতে পাচার হওয়া সোনার প্রতিটি টুকরোই বিমা করানো থাকছে। তবে তা কোনও সংস্থার বিমা নয়। পাচারকারীদের নিজস্ব সিন্ডিকেটের তরফে করা হয় ওই বিমা। এর ফলে পাচার হওয়ার পথে কখনও সেই সোনা ধরা পড়ে গেলে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ভাগাভাগি হয়ে যাচ্ছে একাধিক পাচারকারীদের মধ্যে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি আর্থিক বছরে ডিআরআইয়ের হাতে
ধরা পড়া ৮৬ কিলোগ্রাম সোনার বাজারদর প্রায় ৩৪ কোটি টাকা। আধিকারিকদের মতে, এই আর্থিক লোকসান ভাগাভাগি হয়ে গিয়েছে পাচারকারীদের নিজেদের মধ্যেই।
ডিআরআই কর্তারা জানাচ্ছেন, এখনও পর্যন্ত যত সোনা ধরা পড়ছে, তা মূলত দুবাই থেকে আসে। ব্যাঙ্কক, বাংলাদেশ এবং মায়ানমার— এই তিনটি পথ দিয়ে দুবাই থেকে ভারতে ওই সোনা ঢোকার চেষ্টা করে। দুবাই থেকে ব্যাঙ্কক হয়ে বিমানে, মায়ানমার থেকে মণিপুর সীমান্ত এলাকা মোরে দিয়ে আর নয়তো বাংলাদেশ থেকে উত্তর ২৪ পরগনা সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে ঢুকে পড়ে চোরাই সোনা।
গোয়েন্দারা স্বীকার করছেন, এই তিন রাস্তা দিয়ে যত সোনা পাচার হচ্ছে, তার খুব সামান্য অংশই এখনও পর্যন্ত তাঁদের হাতে ধরা পড়েছে। এর জন্য সোনার দাম বাবদ যেটুকু আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, তা ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন পাচারকারীরা। কী ভাবে? এক কর্তার কথায়, ‘‘ধরুন, দুবাই থেকে এক কিলোগ্রাম চোরাই সোনা বাংলাদেশে ঢোকার সময়ে ধরা পড়ল। সে ক্ষেত্রে সোনার দাম বাবদ প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকার ক্ষতি ভাগ হবে দুবাইয়ের প্রেরক এবং বাংলাদেশের প্রাপকের মধ্যে। আবার যে সোনা বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে ঢোকার সময়ে ধরা পড়ছে, সেই লোকসান ভাগ করে নিচ্ছেন দুবাই, বাংলাদেশ ও ভারতের লোক। এ ভাবে সোনা যত বেশি হাতবদল হচ্ছে, ততই মাথাপিছু লোকসানের পরিমাণ কমছে।’’
তবে ডিআরআই সূত্রের খবর, পাচার হওয়া এই সোনা-সহ যে বা যাঁরা ধরা পড়ছেন, তাঁদের সঙ্গে আসল সিন্ডিকেটের কোনও যোগসূত্র নেই। ফলে তাঁরা ধরা পড়লেও আসল পাচারকারীর সন্ধান পাওয়া মুশকিল হচ্ছে। যেমন, সম্প্রতি সল্টলেকে এক অটোচালক সোনা-সহ ধরা পড়ার পরে জানা যায়, মাসিক ২০ হাজার টাকা বেতনে সোনা পাচারের কাজ করছিলেন তিনি। উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত থেকে চোরাই সোনা নিয়ে আসা তরুণীরা মাত্র ৫০০ টাকার বিনিময়ে ওই কাজ করে থাকেন। কিন্তু মূল পাচারকারীদের সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগাযোগ থাকে না। ফলে সোনা পাচার করতে গিয়ে কেউ ধরা পড়লেও পাচারকারী চক্রের মাথারা রয়ে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy