Advertisement
E-Paper

‘একই ভুল আর নয়’, ডাক্তারদের কাছে আর্জি চাকরিপ্রার্থীদের

চাকরিপ্রার্থীরা জানাচ্ছেন, সে সময়ে লোকসভা নির্বাচন একদম দোরগোড়ায় চলে এসেছিল। ফলে মুখ্যমন্ত্রী তখন নির্বাচনী আচরণবিধির মধ্যে পড়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন।

সুরন্দ্রনাথ আইন কলেজের প্রক্তনীদের মিছিল।

সুরন্দ্রনাথ আইন কলেজের প্রক্তনীদের মিছিল। ছবি: সুমন বল্লভ।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৪২
Share
Save

২০১৯ সালের ২৭ মার্চ। পাঁচ বছর আগে ঠিক একই ভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসে পৌঁছেছিলেন ২০১৬-র এসএলএসটি নবম থেকে দ্বাদশের চাকরিপ্রার্থীদের ধর্না মঞ্চে। প্রেস ক্লাবে তখন চাকরিপ্রার্থীদের অনশন ও ধর্নার ২৮ দিন অতিক্রান্ত। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেখানেও মুখ্যমন্ত্রী দ্রুত সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যা শুনে ধর্না তুলে নিয়েছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। কিন্তু অভিযোগ, আজও সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। তাই আর জি কর-কাণ্ডের পরে জুনিয়র চিকিৎসকদের পাঁচ দফা দাবিতে অনড় থাকারই আর্জি জানাচ্ছেন আন্দোলনরত ওই চাকরিপ্রার্থীরা।

নবম থেকে দ্বাদশের চাকরিপ্রার্থীরা জানাচ্ছেন, নিয়োগের দাবিতে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে বর্তমানে তাঁদের ধর্না-অবস্থানের ১৩০০ দিন অতিক্রান্ত। তাঁদেরই এক জন অভিষেক সেন বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নিয়োগের সেই প্রতিশ্রুতির অপেক্ষায় আজও রয়েছি।’’ কারণ, মুখ্যমন্ত্রীর সে দিনের আশ্বাসের পরের দিনই তাঁরা আন্দোলন তুলে নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি আজও পূর্ণ হয়নি। তাই আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের কাছে ওই চাকরিপ্রার্থীদের আর্জি, তাঁরাও যেন আর সেই একই ভুল না করেন। প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসলেও নিজেদের পাঁচ দফা দাবিতে যেন অনড় থাকেন তাঁরা। সমাজমাধ্যমেও সেই ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিয়ে কেউ কেউ পোস্ট দিচ্ছেন, ‘হাইলি সাসপিশাস। ওঁর বিশ্বাসযোগ্যতা শূন্য।’

সে দিন নবম থেকে দ্বাদশের চাকরিপ্রার্থীদের ধর্না মঞ্চে এসে কী বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, তারই একটি ভিডিয়ো শনিবার নিজেদের মধ্যে চালাচালি করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। সেই ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীকে পাশে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, ‘‘আমি চাই, যাঁরা মেধা তালিকায় আছেন, তাঁরা যেন সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হন। যে রাজনৈতিক দলেরই হোক না কেন। আমি যদি দেখি দাবিগুলি ন্যায্য, তা হলে রাজনৈতিক দল দেখি না। আপনারা চিঠি দিয়ে আবেদন করেছিলেন বলে এসেছি। যদি আপনারা বিশ্বাস করেন, বলব, একটু অপেক্ষা করুন। যে হেতু ভোট রয়েছে, তাই আমি এখন চাইলেই হবে না। আদর্শ আচরণবিধির মধ্যে ফেঁসে যাবে। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে পার্থদা কমিটি তৈরি করেছিলেন। সেই কমিটির সঙ্গে কথা বলে বলব, একটা সমাধান তৈরি হোক।’’

চাকরিপ্রার্থীরা জানাচ্ছেন, সে সময়ে লোকসভা নির্বাচন একদম দোরগোড়ায় চলে এসেছিল। ফলে মুখ্যমন্ত্রী তখন নির্বাচনী আচরণবিধির মধ্যে পড়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। এক চাকরিপ্রার্থী ইলিয়াস বিশ্বাস বলেন, ‘‘২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের পরে আরও একটি লোকসভা নির্বাচন হয়ে গেল। এখনও নবম থেকে দ্বাদশের চাকরিপ্রার্থীরা বসে আছেন গান্ধী মূর্তির পাদদেশে। মুখ্যমন্ত্রীর কি সত্যিই সদিচ্ছা ছিল?’’

সেই প্রতিশ্রুতির পরে কেটেছে পাঁচ বছরের বেশি। সেই সময়ে কোন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে নবম থেকে দ্বাদশের ওই চাকরিপ্রার্থীদের? তাঁরা জানাচ্ছেন, আদালতের নির্দেশে ৬৫ জনের নিয়োগ হয়েছে। সরকার সুপারনিউমেরারি পোস্ট তৈরি করে নিয়োগে উদ্যোগী হয়েছিল। কিন্তু সেই সুপারনিউমেরারি পদে যোগ্যদের সঙ্গে অযোগ্যদেরও রেখে দেওয়ার প্রচেষ্টা ছিল বলে হাই কোর্ট তা বাতিল করে দেয়। অভিষেক বলেন, ‘‘সরকার বার বার বলছে যে, আইনি জটে আটকে আছে। কিন্তু সেই আইনি জট খোলার কোনও আন্তরিক উদ্যোগ সরকারের পক্ষ থেকে দেখতে পাইনি। মেধা তালিকাভুক্ত নবম থেকে দ্বাদশের চার হাজারেরও বেশি চাকরিপ্রার্থী এখনও মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মতো নিয়োগের অপেক্ষায় বসে আছেন। যাঁদের নিয়োগ হয়েছে, তাঁদের অনেকে সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন। কারও আবার নম্বর বাড়িয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সিবিআই তদন্তেই সেটা প্রকাশ পেয়েছে।’’

চাকরিপ্রার্থীরা জানাচ্ছেন, গান্ধী মূর্তির পাদদেশ ছাড়াও মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক, গ্রুপ সি-গ্রুপ ডি মিলিয়ে বেশ কয়েকটি চাকরিপ্রার্থীর দল বছরের পর বছর নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন করে চলেছে। কিন্তু সেখানে আর এক বারও গিয়ে দাঁড়াননি মুখ্যমন্ত্রী।

অভিষেক বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজে আর না এলেও ২০২২ সালের ৩ মে দুপুরে তিনি আমাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন। তখনও তিনি নিজে বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। সেই আশ্বাসের পরেও কেটে গেল তিন বছরের বেশি সময়। কিন্তু কথা রাখেননি মুখ্যমন্ত্রী।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

R G Kar Medical College and Hospital

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}