এই বাড়িতেই খুন হন বৃদ্ধ বিশ্বজিৎ বসু। —ফাইল চিত্র
ব্রড স্ট্রিটের বৃদ্ধ খুনে এখনও অন্ধকারে পুলিশ। তবে গোয়েন্দারা নিশ্চিত, রাত ১০টা ০৭ মিনিট থেকে ১০টা ৪০ মিনিটের মধ্যে খুন করা হয় বৃদ্ধকে। রহস্য বেড়েছে খুনের অস্ত্র নিয়েও। বৃদ্ধের দেহের পাশে পড়ে থাকা রক্তমাখা ছুরিটি আদৌ খুনের অস্ত্র কি না, তা নিয়ে সন্দিহান ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ এবং অটোপ্সি সার্জনরা।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, জেরায় বিজয়িতা জানিয়েছেন, বুধবার ১০টা ০৭ মিনিটে তাঁর বাবা বিশ্বজিৎ বসু তাঁকে ফোন করেছিলেন। জানতে চেয়েছিলেন, বিজয়িতা কখন ফিরবেন?
এক তদন্তকারী বলেন, বিজয়িতা বাড়ি পৌঁছন ১০টা ৪০ মিনিট নাগাদ। তখন তিনি বাবাকে ফোন করেন। বিজয়িতার দাবি, ওই সময় কোনও অপরিচিত ব্যক্তি ফোনটা ধরেন যিনি হিন্দিভাষী। ওই ব্যক্তি দাবি করেন, তিনি পার্ক সার্কাস এলাকায় ওই ফোনটি কুড়িয়ে পেয়েছেন। তার পর বার বার ফোন করার পরেও ওই ব্যক্তি আর ফোন তোলেননি। সেই তথ্য অনুযায়ী এর মধ্যেই আততায়ীরা হত্যা করে বিশ্বজিৎবাবুকে।
আরও একটি তথ্য খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। বিজয়িতা পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, ঘটনার প্রায় এক মাস আগে ভোর সাড়ে ৩টে নাগাদ কয়েক জন দুষ্কৃতী তাঁদের বাড়িতে ঢুকে পড়েছিল। সম্ভবত চুরির উদ্দেশ্যে। সেই সময় একটি অভিযোগও তিনি দায়ের করেন কড়েয়া থানায়। গোয়েন্দা প্রধান প্রবীন ত্রিপাঠি বলেন, ওই তথ্য আদৌ সঠিক কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশের কাছে বিজয়িতা জানিয়েছিলেন, খুনের দিন রাতে তিনি তাঁর বন্ধুর সঙ্গে কসবার একটি মলে সিনেমা দেখতে দিয়েছিলেন। পুলিশ ওই মলের সিসিটিভি ফুটেজ ও টিকিট খতিয়ে দেখেছে। জানা গিয়েছে, তিনি ওই সময় সিনেমা দেখতেই গিয়েছিলেন।
তবে গোয়েন্দাদের ধারণা, খুনের পিছনে বড়সড় ছক রয়েছে। সেই কারণেই পুলিশ খুনের পিছনে সম্পত্তি বিক্রির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে দেখছে। সূত্রের খবর, বিজয়িতার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর পরিচিত এক প্রোমোটারের সঙ্গে ব্রড স্ট্রিটের ওই জমি-বাড়ি বিক্রির কথাবার্তা চলছিল বসু পরিবারের। ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম স্থির হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনও কারণে ওই ব্যক্তিকে জমি বিক্রি করা থেকে পিছিয়ে আসেন বিশ্বজিৎবাবু। কেন তিনি বিক্রি করতে রাজি হননি তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা।
আরও পডু়ন: ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেরলে ঢুকছে মৌসুমী বায়ু, চার জেলায় জারি সতর্কতা, বর্ষার অপেক্ষায় বাংলা
আরও পড়ুন: গজলডোবায় জমি বিক্ষোভে মন্ত্রী গৌতম দেবকে গো ব্যাক ধ্বনি, কালো পতাকা
অন্যদিকে, চেয়ারে বসা অবস্থায় বৃদ্ধের দেহের পাশে একটি রক্তমাখা ছুরি পাওয়া গিয়েছিল। সেটি সাধারণ সব্জি এবং ফল কাটার ছুরি। প্রাথমিকভাবে তদন্তকারীদের ধারণা হয়েছিল, ওই ছুরি দিয়েই বৃদ্ধের গলার নলি কাটা হয়েছিল। কিন্তু ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা এবং অটোপ্সি সার্জনরা মনে করছেন যে ওই ছুরি দিয়ে আদৌ গলার নলি কাটা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে খুনের অস্ত্র অন্য কিছু যা আততায়ীরা হয় নিয়ে পালিয়েছে নয়তো অন্য কোথাও ফেলে দিয়েছে। সেই খুনের অস্ত্রও খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা। তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, ঘরে বৃদ্ধের রাতের খাওয়ার থালা পাওয়া গিয়েছে। সেই সঙ্গে কয়েকটি রক্তের দাগ পাওয়া গিয়েছে যাতে আপাত ভাবে মনে হচ্ছে যেন কোনও ভারী কিছু ছেঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখান থেকে তাঁদের ধারণা, খুন করে বৃদ্ধকে চেয়ারে বসানো হয়েছে। তবে গোয়েন্দাদের অন্য একটি অংশ ওই তত্ত্ব মানতে নারাজ। তাঁরা বলেন, গলার নলি কেটে খুন করা হলে যে পরিমাণ রক্তপাত হবে সেরকম রক্তের ছাপ ঘরে অন্য কোথাও পাওয়া যায়নি। সর্বোপরি, খুনি বা খুনিরা বৃদ্ধকে খুন করে কেন চেয়ারে বসাবে সেই মোটিভও জোরাল হচ্ছে না। সব মিলিয়ে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রহস্য আরও বাড়ছে বৃদ্ধ খুন ঘিরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy