আর্তনাদ: সিঁথি থানার সামনে মৃত রাজকুমার সাউয়ের ছেলে অমিত। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
সিঁথি থানায় এক প্রৌঢ়ের মৃত্যু এবং পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগকে ঘিরে সোমবার রাতে উত্তাল হয়ে উঠল সিঁথি এলাকা। মৃতের পরিবার এবং এলাকার বাসিন্দারা সন্ধে থেকে পুলিশের শাস্তি চেয়ে থানার সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। রাতে তার মধ্যে রাজনীতির রং লাগে। মৃত ব্যক্তি তাদের সমর্থক বলে দাবি করে ভিড় জমান বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। পাল্টা লোক আনে তৃণমূলও। পুলিশের সামনেই দু’পক্ষ খণ্ডযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। মৃত রাজকুমার সাউ (৫৩) পাইকপাড়ার বাসিন্দা। বাড়ির পাশেই তাঁর কাগজ ও লোহার ছাঁটের দোকান।
অভিযোগ, থানায় জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে তাঁকে মারধর করা হয়, এমনকি বিদ্যুতের ‘শক’ও দেওয়া হয়। তার জেরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই প্রৌঢ়। পরে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। যদিও মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশের দাবি, রাজকুমার সাউ (৫৩) আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, তাঁকে মৃত অবস্থাতেই আনা হয়েছিল। মঙ্গলবার ময়না-তদন্ত হবে।
ঘটনার সূত্রপাত সোমবার বেলার দিকে। সূত্রের খবর, সিঁথি এলাকার এক নির্মীয়মাণ বহুতল থেকে কল ও শৌচাগারের সরঞ্জাম চুরির অভিযোগে আসুরা বিবি নামে এক মহিলাকে আটক করেছিল পুলিশ। সেই সরঞ্জাম রাজকুমারের দোকানে বিক্রি করা হয়েছিল বলে পুলিশের সন্দেহ। রাজকুমারবাবুর ছেলে বিজয়ের অভিযোগ, বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ পুলিশ রাজা মণীন্দ্র রোডের বাড়িতে গিয়ে রাজকুমারকে নিয়ে আসে। তখন বলা হয়েছিল, এক সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করতে হবে। বিজয়ের কথায়, ‘‘বাবা সকাল থেকে কিছু খায়নি। সে সময় পুজো করতে যাচ্ছিল। কিন্তু পুলিশ জোর করেই নিয়ে আসে। আমিও এসেছিলাম। কিন্তু আমাকে ভিতরে যেতে দেওয়া হয়নি। বিকেলে থানা জানায়, বাবা অসুস্থ। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে গিয়ে দেখি, সব শেষ!’’
আরও পড়ুন: শ্বশুরবাড়িতে বধূর রহস্যমৃত্যু, নিগ্রহের অভিযোগ
কয়েক বছর আগে সিঁথি থানাতেই ‘জিজ্ঞাসাবাদের সময়’ এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছিল। অভিযুক্ত ছিলেন এক মহিলা এসআই। এ দিনও রাজকুমারের বাড়ির লোকেরা এক এসআই-এর নামে অভিযোগ করেন। আসুরা বিবিও থানার বাইরে দাঁড়িয়ে অভিযোগ করেন, পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের নামে রাজকুমারকে বুকে লাথি মারে এবং বিদ্যুতের শক দেয়। আসুরার বক্তব্য, ‘‘আমি অন্তঃসত্ত্বা। আমাকেও মারধর করা হয়েছে, সারা দিন খেতে দেওয়া হয়নি।’’ রাজকুমারের আইনজীবী অমর্ত্য দে-র অভিযোগ, ‘‘রাজকুমার সুস্থ শরীরে থানায় গিয়েছিলেন। জেরার আগেও সুস্থ ছিলেন। থানায় তাঁকে খাবার-ওষুধ কিছুই দেওয়া হয়নি, যা দেওয়ার কথা।’’
মৃত রাজকুমার সাউ। —নিজস্ব চিত্র।
আসুরার কাছ থেকে বিজয় জেনেছেন, প্রথমে রাজকুমারকে বলা হয় আসুরা তাঁর কাছে কল বিক্রি করেছেন। পরে বলা হয়, ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার জিনিসপত্র বিক্রি করা হয়েছে এবং ছাড় পেতে হলে হয় টাকা নয় সমপরিমাণ জিনিস কিনে দিতে হবে। এমনকি, এক সময় ৫০ হাজার টাকাতেও রফা করার কথা বলা হয়। আসুরা যে চুরি করে তাঁর দোকানে জিনিসপত্র বিক্রি করেছেন, তা স্বীকার করতেও রাজকুমারকে বারবার চাপ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ দিন সন্ধ্যায় দোষী পুলিশ অফিসারদের শাস্তি চেয়ে থানার সামনে বিক্ষোভ দেখান রাজকুমারের পরিবার-পরিজনেরা। পুলিশের অভিযোগ, তাঁরা থানার ভিতরে ঢুকে ভাঙচুর করেছেন। যদিও মৃতের পরিজনেরা তা অস্বীকার করেছেন। রাতে ডিসি নর্থ জয়িতা বসু থানায় যান। এলাকাবাসী তখনও বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। থানার গেট কিছু ক্ষণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ দিকে মৃত ব্যক্তি বিজেপি সমর্থক বলে দাবি করে জড়ো হয়ে যান বিজেপির লোকজন। তৃণমূলও পাল্টা লোক জড়ো করে। পুলিশের সামনেই দু’দলে মারামারি বেধে যায়। চার নম্বর ওয়ার্ডের পুরপিতা গৌতম হালদার ঘটনাস্থলে পৌঁছলে গোলমাল আরও বাড়ে। লাঠি, বাঁশ নিয়ে তৃণমূলের লোকজন বিজেপি কর্মীদের তাড়া করেছিল বলে অভিযোগ। কিছুক্ষণ পর পুলিশ সক্রিয় হয়ে এলাকা খালি করে দেয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy