Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Hatibagan

রেমাল থেকে জোড়া রোড শোয়ের ধাক্কা, মাথায় হাত হাতিবাগানের ব্যবসায়ীদের

পর পর কয়েক দিন ধরে এই জোড়া ধাক্কায় হাতিবাগানে ব্যবসা কার্যত লাটে ওঠার জোগাড়। মঙ্গলবার ঝাঁপ বন্ধ করতে বাধ্য হওয়ার পরে বুধবার দোকান খুললেও ‘খাতা’ খুলতে পারলেন না অধিকাংশ ব্যবসায়ী।

অচেনা: ভোটের মিছিলের জেরে হাতিবাগান চত্বরের ফুটপাতের দোকানগুলিতে দেখা নেই ক্রেতাদের। বুধবার।

অচেনা: ভোটের মিছিলের জেরে হাতিবাগান চত্বরের ফুটপাতের দোকানগুলিতে দেখা নেই ক্রেতাদের। বুধবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

চন্দন বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২৪ ০৮:০০
Share: Save:

ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’-এর জেরে দু’দিন টানা ঝড়বৃষ্টি। তার পরে দুই রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীর রোড শো। পর পর কয়েক দিন ধরে এই জোড়া ধাক্কায় হাতিবাগানে ব্যবসা কার্যত লাটে ওঠার জোগাড়। মঙ্গলবার ঝাঁপ বন্ধ করতে বাধ্য হওয়ার পরে বুধবার দোকান খুললেও ‘খাতা’ খুলতে পারলেন না অধিকাংশ ব্যবসায়ী। মন্দা বাজারের সঙ্গে ভোটের আবহে মিছিল-মিটিংয়ের জেরে কার্যত ধরাশায়ী অবস্থা হল তাঁদের।

বুধবার শ্যামবাজার থেকে হাতিবাগানের সামনে দিয়ে স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ি পর্যন্ত রোড শো করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই পথে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রোড শো করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ শুরু হওয়া সেই রোড শো শেষ হতেই লেগে গিয়েছিল বেশ কয়েক ঘণ্টা।

হাতিবাগান এলাকায় পর পর এমন রাজনৈতিক সমাবেশ-মিছিলের জেরে ব্যবসা প্রায় লাটে ওঠার জোগাড় বলে জানাচ্ছেন সেখানকার ব্যবসায়ীদের একাংশ। গত কয়েক দিনে তাঁরা দোকানও ঠিক মতো খুলতে পারেননি বলে দাবি তাঁদের। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ‘রেমাল’-এর আশঙ্কায় রবিবার হাতিবাগানের বড় দোকান ও ফুটপাতের দোকানগুলির অধিকাংশ বন্ধ ছিল। হাতে গোনা কয়েকটি দোকান খোলা থাকলেও ঝড়বৃষ্টির মধ্যে ক্রেতার দেখা মেলেনি।

পরের দিন, সোমবার দিনভর টানা বৃষ্টির মধ্যে দোকান খুলে রাখলেও বিকেলের পরে ফুটপাতের অধিকাংশ দোকানিকেই ঝাঁপ বন্ধ করতে হয়। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর রোড শোয়ের নিরাপত্তাজনিত কারণে এক দিন আগে থেকেই ফুটপাতের দোকান বন্ধ রাখার কথা বলা হয় বলে দাবি দোকানিদের। সে দিন থেকেই রাস্তার দু’ধারে ব্যারিকেড বাঁধা-সহ অন্যান্য কাজ শুরু হয়েছিল।

এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘এলাকা কার্যত দুর্গে পরিণত করে ফেলা হয়। প্রধানমন্ত্রীর রোড শোয়ের আগের দিন কয়েক জন এলাকায় ঢুকতে পারলেও পরের দিন গোটা এলাকাই চলে যায় পুলিশের ঘেরাটোপে। ব্যবসা করব কী, ফুটপাতের দোকানের ধারে-কাছে আসতে পারিনি!’’ হাতিবাগান চত্বরের আশপাশে বড় দোকানগুলির কয়েকটি সে দিন খুললেও বিধিনিষেধের কড়াকড়ির ঠেলায় ক্রেতাদের কেউই ওই এলাকায় পা দেননি।

একই পথে বুধবার মিছিল করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই মিছিলেরও প্রভাব পড়েছে হাতিবাগানের কেনাকাটায়। এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা গেল, ফুটপাতের দোকানগুলি খুলতে দিলেও অধিকাংশ দোকানেই ক্রেতার দেখা নেই। রাস্তার দু’পাশ দড়ি দিয়ে আটকানো, গোটা এলাকা পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। আশপাশের রাস্তাগুলিতেও কড়া হাতে যান নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ফাঁকা দোকানে বসে সে সবই দেখছিলেন ব্যবসায়ী মহম্মদ ফিরোজ। কেনাকাটার কথা জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, ‘‘আর ব্যবসা! কে আসবে এখন এই পথে? আসতে চাইলেও পুলিশের যা কড়াকড়ি, কেউ তো আসতেই পারবেন না।’’

আর এক ব্যবসায়ী অনন্ত রায়ের কথায়, ‘‘আজ তো তা-ও দোকান খুলতে দিয়েছে। মঙ্গলবার সেটাও দেয়নি। তবে দোকান খুললেও আদৌ বিক্রিবাটা কিছু হবে বলে মনে হচ্ছে না।’’ কেনাকাটা করতে হাতিবাগান চত্বরে এলেও ঝামেলা এড়াতে অনেকেই এ দিন কিছু ক্ষণ পরেই বাড়ির পথ ধরেছেন। যেমন, সোদপুর থেকে বান্ধবীদের সঙ্গে এ দিন হাতিবাগানে আসা ঐশী সমাদ্দার বললেন, ‘‘একে অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ, তার উপরে পুলিশের কড়াকড়ি। দোকানে দোকানে ঘুরতে না পারলে কি আর কেনাকাটা করা যায়?’’

প্রথমে ঝড়, তার পরে টানা মিছিলের জেরে ব্যবসায় যে বড় প্রভাব পড়েছে, তা মেনে নিয়েছেন ‘হাতিবাগান বাজার মার্চেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি রঞ্জন রায়। তিনি বলেন, ‘‘এমনিতেই অনলাইনে কেনাকাটার দাপটে আমাদের ব্যবসা কড়া চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে ভোটের আগে মিটিং-মিছিল। সাময়িক অসুবিধা হলেও মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Hatibagan Street hawkers Cyclone Remal Road Show
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE