যুব মোর্চার মিছিল থেকে জুতো দেখানো হচ্ছে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
মিছিল ছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘বাঁচানো’র ডাক দিয়ে। বিজেপি যুব মোর্চার আয়োজনে সেই মিছিল থেকে শুক্রবার জুতো দেখানো হল বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে! জুতো এবং জলের বোতল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের দিকে ছোড়া হয়েছে বলেও অভিযোগ। মিছিলে শোনা গিয়েছে ‘গোলি মারো শালোঁ কো’ স্লোগানও। প্রতিবাদের নামে এমন আচরণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএম ও কংগ্রেস। যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল খাঁ অবশ্য দাবি করেছেন, যাঁরা এই কাজ করেছে, তাঁরা সংগঠনের কেউ নন।
যাদবপুরে মিছিলের সামনের সারিতে এ দিন ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপির একাধিক নেতা-বিধায়ক। এর আগে যাদবপুরে যুব মোর্চার ধর্নায় শুভেন্দুর অংশগ্রহণের দিনে তাঁকে কালো পতাকা দেখানো ঘিরে যে ঘটনা ঘটেছিল, তার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে কড়া নিরাপত্তার বন্দোবস্ত রাখা হয়েছিল এ দিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে পৌঁছে মিছিলের একাংশ যখন জুতো মারা, গুলি করা-সহ নানা হুমকি দিচ্ছে, সেই সময়ে বিরোধী দলনেতা ছিলেন অনেকটাই পিছনে। তবে পরে এই প্রসঙ্গে শুভেন্দুর মন্তব্য, ‘‘আমাদের ছেলেরা ভাল। ওদের প্রবৃত্তি হবে না হাতে জুতো নেওয়ার। ওরাই (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী) জুতো দেখিয়েছে। প্ররোচনা দিয়েছে। ওদের দাওয়াই, আড়ং ধোলাই!”
ছাত্র-মৃত্যুর প্রতিবাদ এবং র্যাগিংমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার দাবিতে যুব মোর্চার মিছিল ছিল গোলপার্ক থেকে যাদবপুর পর্যন্ত। কিন্তু মিছিলে বেশির ভাগ প্ল্যাকার্ড-পোস্টারই ছিল সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই-কে হুঁশিয়ারি এবং ‘মার্ক্সবাদে’র বিরোধিতায়। মিছিল যত বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে এগিয়েছে, তার মেজাজ তত চড়া হয়েছে। গেরুয়া শিবিরের হুঁশিয়ারিমূলক স্লোগানের নিশানায় এসএফআই থেকে প্রবীণ বাম নেতা বিমান বসু, বাদ যায়নি কেউই। ছাত্র-মৃত্যু বা বিচারের দাবি তখন কার্যত উধাও! স্লোগান বা জুতো-বোতল ছোড়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি ইন্দ্রনীল অবশ্য পরে দাবি করেছেন, ‘‘ওঁরা দলের কেউ নয়। আগে থেকেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে কিছু বহিরাগত হাজির হয়েছিল। প্ররোচনা দেওয়ার চেষ্টা করছিল। আমরা প্ররোচনায় পা দিইনি।”
মিছিলের আক্রমণাত্মক চেহারা দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে মানববন্ধন করে দাঁড়িয়েছিলেন শিক্ষকদের একাংশ। পড়ুয়াদের ফটকের বাইরে বেরোতে দেয়নি পুলিশ। ফলে, বিজেপি নেতারা কাদের ‘প্ররোচনা’র কথা বলছেন, তা খুব পরিষ্কার হয়নি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (জুটা) সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেছেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে যাতে কোনও অশান্তি না ছড়ায় বা পড়ুয়াদের ক্ষতি না হয়, তার জন্য ছাত্রদের আড়াল করে আমরা দাঁড়িয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে জুতো ছোড়া ও জুতো দেখানো খুবই নিন্দনীয়।’’ ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়ছে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-ও।
বিজেপি যুব মোর্চার মিছিল ঘিরে এ দিনের ঘটনার জেরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্কও। রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘‘যারা এ ভাবে হিংসা ছড়াতে চেয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক। একটা অপরাধের পরে আরও একটা অপরাধের প্রকাশ্য ঘোষণা রয়েছে এই স্লোগানে। আদালতের রক্ষাকবচ পেয়ে যাঁরা হিংসাশ্রয়ী হয়ে উঠছেন, তাঁদের সম্পর্কে আদালতেরই ভাবা উচিত।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর সংযোজন, ‘‘মনে রাখতে হবে, ইউজিসি-র রিপোর্টে যে উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ র্যাগিংয়ে শীর্ষ স্থানে, সেই দু’টি রাজ্যেই এই শুভেন্দুদের দলের শাসন।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘প্রতিবাদের নামে শিক্ষা ধ্বংসের মনোভাব থেকে বিশৃঙ্খলা দেখা গিয়েছে যাদবপুরের রাস্তায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে জুতো দেখানো হচ্ছে, পড়ুয়াদের উদ্দেশে ‘গোলি মারো’ বলা হচ্ছে! যে বিজেপি কলকাতায় বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙায় অভিযুক্ত, তাদের কাছে আর কী প্রত্যাশা করা যায়? এই বিজেপিকে বাংলায় নিয়ে এসেছে তৃণমূল। মানুষকে বলব, এদের বর্জন করুন!’’ প্রদেশ কংগ্রেসের নেতা শুভঙ্কর সরকারেরও মত, ‘‘একটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে এই আচরণ খুবই নিন্দনীয়। যাদবপুর নিয়ে আরও মিছিল, প্রতিবাদ হয়েছে। কোথাও এমন হয়নি। মিছিলে এসে যাঁরা এমন করলেন, তাঁদের নিরস্ত করা উচিত ছিল নেতৃত্বের।’’
এই ঘটনাকে সমর্থনই করেছেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওঁরা (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী) যদি মন্ত্রীকে চাঁটি মারতে পারে, তা হলে জুতোও খেতে পারে! ওঁরা মন্ত্রী থাকাকালীন বাবুল সুপ্রিয়কে চাঁটি মেরেছিল। ওদের কি চা খাওয়ানো হবে? মুখে না বলে কাজে করতে হবে!’’ অধুনা তৃণমূল সরকারের পর্যটনমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বলেছেন, “র্যাগিংয়ের ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন বাম এবং অতি বামেরা দায়ী, তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আমার আছে। আমি একটা গোটা দিন এর বিরুদ্ধে একা লড়াই করেছি।’’ বাবুলের ঘনিষ্ঠ সূত্রের আরও দাবি, তাঁর প্রসঙ্গ এখন যাঁরা তুলছেন, সে দিন তাঁরা ওঁর পাশে তো দাঁড়াননি! বরং, সারা দিন বাবুল যে ‘ধৈর্য’ ধরেছিলেন, রাতে গিয়ে বামেদের কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে তাঁরা সব কিছুতে জল ঢেলে দিয়েছিলেন!
একই বিষয়ে এ দিন এবিভিপি-র মিছিল আটকে দেয় পুলিশ। প্রতিবাদে সংগঠনের সদস্যেরা রাস্তায় বসে পড়লে পুলিশ চার মহিলা-সহ ৬৪ জনকে করে গ্রেফতার করে যাদবপুর থানায় নিয়ে যায়। তাঁদের আজ, শনিবার আদালতে তোলা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy