প্রশাসনের প্রতিনিধিদের সামনে বাজি নিয়ে হাজির ব্যবসায়ীরা। শনিবার, টালা পার্কে। —নিজস্ব চিত্র।
শুরু হওয়ার আগেই প্রশ্নের মুখে পড়ে গেল কলকাতার বাজি বাজার। সেখানে যে সমস্ত বাজি বিক্রি হওয়ার কথা, শনিবার সেগুলি পরীক্ষা করতে গিয়েই চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হল টালা পার্কে। এক সময়ে ওই পরীক্ষা বন্ধই হয়ে যেতে বসেছিল এ দিন। প্রায় চার ঘণ্টা টালবাহানার পরে ৩৩টির মধ্যে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষায় টিকে থাকে মাত্র ২০টি বাজি। যে বাজিগুলির পরীক্ষা হয়েছে, তার মধ্যে শুধুমাত্র একটিই ছিল শব্দবাজি। বাকি সবই আতশবাজি গোত্রের। সেগুলির শব্দ নয়, আলো এবং ধোঁয়া পরীক্ষা হওয়ার কথা। কিন্তু শব্দ মাপার যন্ত্র থাকলেও এ দিন দেখা যায়নি ধোঁয়া পরীক্ষার কোনও ব্যবস্থা! কার্যত শব্দ মাপার যন্ত্রের সামনেই এর পরে পরীক্ষা হয় সব ধরনের বাজিরই!
এই ধরনের পরীক্ষাকে বাজি ব্যবসায়ীদের একাংশই হাস্যকর বলে দাবি করেছেন। তাঁদের বড় অংশেরই দাবি, কলকাতা পুলিশের তত্ত্বাবধানে বহু বছর ধরে বাজির পরীক্ষা চললেও কোনও বারই শব্দ মাপার যন্ত্রের সামনে তারাবাতি বা ফুলঝুরির পরীক্ষা হতে দেখেননি তাঁরা। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, পরীক্ষাতেই যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে বাজির বাজারে কী হবে? কী ভাবেই বা পুলিশ-প্রশাসন এবং রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ নজরদারি চালাবে?
এ দিন বিশৃঙ্খলার শুরু সকাল থেকেই। টালা পার্কে বেলা ১১টার মধ্যে বেহালা, কালিকাপুর, টালা এবং ময়দানের বাজি বাজারের প্রতিনিধি, পুলিশ ও দমকলকর্মীরা পৌঁছে গেলেও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের লোকজন দেরি করে আসায় কাজ শুরু হয় ১২টার পর। প্রথমেই জটিলতা তৈরি হয় ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ বা নিরি-র শংসাপত্র নিয়ে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্মীরা দাবি করেন, নিরি-র শংসাপত্র রয়েছে যে সমস্ত বাজির, শুধুমাত্র সেগুলিকেই পরীক্ষার পরবর্তী ধাপে এগোতে দেওয়া হবে। তাতেই বাতিল হয়ে যায় ২০টি বাজি। সেগুলির বাক্সের গায়ে নিরি-র নামে লোগো এবং কিউআর কোড থাকলেও পুলিশের মোবাইলে থাকা অ্যাপে কোড স্ক্যান করে নিরি-র শংসাপত্র খোলেনি।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রতিনিধিরা এর পরে দাবি করেন, মোবাইলে দেখা গেলেই হবে না, নিরি-র শংসাপত্রের প্রতিলিপিও বার করে আনতে হবে। কিন্তু কোথা থেকে আলাদা আলাদা বাজির জন্য শংসাপত্র বার করানো যাবে, তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। সমস্যা মেটাতে কলকাতা পুলিশের ডিসি (রিজ়ার্ভ ফোর্স) অভিষেক গুপ্ত এক পুলিশকর্মীকে থানায় পাঠিয়ে সেখানকার কম্পিউটার থেকে প্রতিলিপি বার করিয়ে আনেন। এর পরে জটিলতা তৈরি হয়, কেন চকলেট বোমার মতো বাজির শব্দ পরীক্ষা হবে না, তা নিয়ে। একটি বাজির ক্ষেত্রেও নিরি-র শংসাপত্র দেখাতে না পারায় তত ক্ষণে বাতিল হয়ে গিয়েছে ময়দান বাজি বাজারের সব বাজি। সেখানকার কর্তারাই চকলেট বোমা পরীক্ষার দাবি তোলেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সেই দাবি টেকেনি।
এর পরে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রতিনিধিরা দাবি করেন, যে হেতু নিরি-র কোনও প্রতিনিধি উপস্থিত নেই, তাই শংসাপত্রের প্রতিলিপিতে পুলিশকেই সই করে দিতে হবে। এতেই নতুন করে জল ঘোলা হয়। পুলিশের কেউই সই করতে রাজি হননি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই নিয়েই কেটে যায়। পরে পুলিশের তরফে পর্ষদ-কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সমাধান বার করা হয়। এর পরে জটিলতা তৈরি হয়, যে সমস্ত বাজির পরীক্ষা হবে, তার সবটাই পর্ষদের প্রতিনিধিরা সঙ্গে নিয়ে যাবেন বলায়। বাজি ব্যবসায়ীদের একাংশ আপত্তি জানিয়ে দাবি করেন, তা হলে পর্ষদকে এখানেই পরীক্ষায় পাশ করা বাজির শংসাপত্র দিয়ে যেতে হবে। বেঁকে বসেন পর্ষদের প্রতিনিধিরা। বাজির পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। শেষে সেই জটিলতাও কাটায় পুলিশ।
কিন্তু যেখানে পরীক্ষা হওয়া বাজির মধ্যে ১২টাই আতশবাজি, সেখানে শব্দ মাপার যন্ত্রে এই পরীক্ষার কার্যকারিতা কী? টালা পার্কে উপস্থিত দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রতিনিধি সন্দীপ সোরেনের উত্তর, ‘‘যা আছে, তা দিয়েই পরীক্ষা করা হচ্ছে।’’ ধোঁয়া মাপার যন্ত্র আনা হয়নি কেন? উত্তর মেলেনি। প্রশ্ন উঠেছে, পরীক্ষার জন্য বাজি বেছে এনেছিলেন বাজি বাজারের মাথারা। সব জেনেশুনে পাশ করবে না, এমন বাজি নিশ্চয়ই তাঁরা পরীক্ষার জন্য আনবেন না! তা হলে ৩৩টির মধ্যে ২০টি বাজি পরীক্ষায় বসার আগেই বাতিল হয়ে যায় কী ভাবে? তবে কি বাজারে পরীক্ষায় পাশ করার মতো বাজির অভাব রয়েছে? এ বিষয়েই বা নজরদারি চালানো হবে কী ভাবে? বেআইনি বাজি বিক্রি রুখতে এ বার পুলিশ কী করবে?
বাজি সংক্রান্ত বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কলকাতা পুলিশের ডিসি (রিজ়ার্ভ ফোর্স) অভিষেক গুপ্ত বললেন, ‘‘যখন-তখন হানা দেওয়া হবে। তাতেই সব ধরা পড়বে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy