তল্লাশি: বিস্ফোরণের পরে এলাকার দোকানে বাজির খোঁজ পুলিশের। রবিবার রাতে, মহেশতলায়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
বাতাসে বারুদের গন্ধ। মোবাইলের টর্চের ভরসায় অন্ধকারে হেঁটে যেতে যেতেই দেখা যাচ্ছিল, কোথাও রাস্তার ধারে বস্তায় ভরা বাজি উপচে পড়ছে। কোথাও আবার খোলা পড়ে রয়েছে নানা রকমের বাজি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জেগেছিল, কালীপুজোর সময়ে বড়বাজারের বাজি বাজারেও কি একসঙ্গে এত বাজি বিক্রি হতে দেখা যায়? তারাবাজি, ফুলঝুরি থেকে শুরু করে তুবড়ি, রংমশাল, রকেট, চরকি তো বটেই, এমনকি, রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখা গেল লম্বা আকৃতির শেলও। অন্ধকারে রাস্তার পাশে ডাঁই হয়ে থাকা বাজির স্তূপ দেখে আতঙ্কও জাগছিল। মনে হচ্ছিল, এত সব বেআইনি বাজির মধ্যে বোমাও লুকিয়ে নেই তো?
বজবজ থানা এলাকার নন্দরামপুরের এই দাসপাড়াতেই ঘণ্টা চারেক আগে, রাত ৮টা নাগাদ একটি বাড়ির ছাদে বিস্ফোরণ হয়। তাতে দুই মহিলা যমুনা দাস ও জয়শ্রী ঘাঁটি এবং এক নাবালিকা পম্পা ঘাঁটির মৃত্যু হয়েছে। বছর দশেকের পম্পার মা জয়শ্রী। ওই বাড়িতে বাজি তৈরির অভিযোগ উঠেছে। তবে এলাকার ব্যবসায়ীদের দাবি, তৈরি নয়, বিক্রির জন্য বাজি মজুত করা হত সেখানে। ঘটনার পরেই এলাকায় শুরু হয়েছে পুলিশি তৎপরতা। শুরু হয়েছে বাজি উদ্ধারের অভিযানও।
রবিবার তখন রাত ১২টা ৫। গা-ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকা অধিকাংশ বাড়ির ভিতরে আলো জ্বলছে। পাড়া জেগে থাকলেও অদ্ভুত নিস্তব্ধতা চার দিকে। নিস্তব্ধতা ভাঙছে বাড়িতে বাড়িতে পুলিশের কড়া নাড়ার আওয়াজ। ‘‘কে আছেন বাড়িতে?’’ অধিকাংশ বাড়িতেই পুরুষেরা নেই। মহিলারাই খুলে দিচ্ছেন দরজা। তার পরেই সেই সব বাড়িতে শুরু হচ্ছে পুলিশের তল্লাশি। কিছু ক্ষণের মধ্যেই বাড়ির ভিতর থেকে বেরোচ্ছে পেটি পেটি বাজি। মিলছে বাজি বানানোর লোহার ছাঁচও।
তা হলে পুরো পাড়াটাই কি বারুদের স্তূপের উপরে দাঁড়িয়ে? যে বাড়ি আর দোকান থেকে বাজি উদ্ধার হচ্ছে, সেগুলো শুধুই বাজি তৈরির কারখানা, না কি সেখানে বোমাও তৈরি হয়? বেআইনি বাজি তৈরির বিষয়টি এত দিন পুলিশের নজরেই বা আসেনি কেন? ঝাঁকে ঝাঁকে প্রশ্ন ধেয়ে এলেও উত্তর মেলেনি একটিরও। রাস্তার ধারে পর পর টিন দিয়ে তৈরি মনোহারি দোকান, মুদিখানা বা চায়ের দোকান। এক পুলিশকর্তা বললেন, ‘‘তালা ভেঙে ফেলো সব দোকানের।’’ লোহার রডে চাড় দিয়ে তালা খোলা হল একটি উপহার বিক্রির দোকানের। সামনে সাজানো সুগন্ধী থেকে শুরু করে পুতুল, পেন, পেনসিল বক্স। সেই পুতুল আর সুগন্ধী সরিয়ে দোকানের পিছনে যেতেই মিলল পেটি পেটি বাজি।
গলির ভিতরে একটি বাড়ি থেকে আবার উদ্ধার হল শুধু তারাবাজি। ধানের গোলায় ধান রাখার মতোই ওই বাড়ির উঠোনে তারাবাজি স্তূপীকৃত হতে থাকল। বাড়ির এক মহিলা শোভনা বিবি জানান, ছেলেরা সব কাজে গিয়েছেন। এত রাতে কোন কাজে? উত্তর নেই। বাজি বানানোর লাইসেন্স আছে? শোভনার উত্তর, ‘‘লাইসেন্স এখনও হয়নি। করতে দেব।’’ তিনি জানান, গত একসপ্তাহ ধরে তৈরি হয়েছে এই তারাবাজি। সোমবারই কোম্পানির লোকের এই সব তারাবাজি নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। শোভনার পাশে বসা, তাঁর মা লায়লা বিবি বলেন, ‘‘কী করব? পেটের দায়ে বারুদের উপরে বসে কাজ করতে হয়।’’ ওই বাড়ির উল্টো দিকে একটি বাজির গুদামেও সার সার পেটি ভর্তি বাজি। সেখানে সুরক্ষা-ব্যবস্থা তো দূর, নেই একটি অগ্নি-নির্বাপকও।
আটক হওয়া বাজি এতক্ষণ থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল অটো, টোটোয় চাপিয়ে। পেটি তুলতে তুলতে এক সময়ে ক্লান্ত হয়ে পড়লেন পুলিশকর্মীরা। বাজেয়াপ্ত হওয়া বিপুল বাজি অটো-টোটোয় ধরছে না দেখে এক পুলিশকর্তা ছোট ট্রাক নিয়ে আসার নির্দেশ দিলেন। ট্রাক এলে বাজি তোলার কাজ ফের শুরু হল। ঘড়িতে তখন রাত দেড়টা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy