অসহায়: ট্যাক্সি পরিষেবা ফের চালু হতেই চালকদের থেকে তোলা চেয়ে চাপ বেড়েছে বলে অভিযোগ। ছবি: সুমন বল্লভ
নেপথ্যে তিনিই। সবই তাঁর মগজের খেলা।
ধর্মতলা যাবেন বলে মহানায়ক উত্তমকুমার মেট্রো স্টেশনের সামনে ট্যাক্সি দাঁড় করিয়েছিলেন এক যাত্রী। চালক সাফ জানালেন, মিটারের উপরে ৩০টাকা বেশি লাগবে। গাড়ি জীবাণুমুক্ত করার দাম (স্যানিটাইজ়েশন ফি)। ছোঁয়াচের আশঙ্কায় গণপরিবহণ এড়াতে চেয়ে যাত্রীটি চালকের শর্ত মেনেই চেপে বসলেন ট্যাক্সিতে।
বাড়তি ভাড়া চেয়ে যাত্রীদের হেনস্থা করার অভ্যাস এ শহরের বহু ট্যাক্সিচালকেরই রয়েছে। তা বলে গাড়ি জীবাণুমুক্ত করার জন্য অতিরিক্ত দাম!
বিষয়টি খোলসা করেছেন এই শহরেরই কোনও কোনও ট্যাক্সিচালক। তাঁরা জানান, এই স্যানিটাইজ়েশন ফি- আসলে বিভিন্ন ট্যাক্সিস্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণকারী দাদাদেরই মস্তিস্কপ্রসূত।
এক চালকের অভিযোগ, ‘‘লকডাউনে তিন মাস ট্যাক্সি বন্ধ ছিল। দাদাদেরও রোজগার বন্ধ ছিল। এখন সব কিছু চালু হওয়ার পরে দাদারা তিন মাসের রোজগার পুষিয়ে নিতে চাইছেন। আমাদের সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তোলার অঙ্ক বাড়াতে প্রয়োজনে যাত্রীর থেকে স্যানিটাইজ়েশন ফি নিতে হবে।’’
মহানায়ক উত্তমকুমার স্টেশন থেকে ট্যাক্সি ধরা ওই যাত্রীর কথায়, ‘‘ট্যাক্সিচালক প্রথমে আমায় জানান ছোঁয়াচের ঝুঁকি এড়াতে এক জন যাত্রী নামার পরেই তিনি গাড়ি জীবাণুমুক্ত করেন। কিন্তু কেন এত বেশি টাকা তা জানতে চেয়ে ওই চালককে একটু জোরাজুরি করি। তখন তিনি স্যানিটাইজ়েশন ফি-এর পিছনে দাদার টাকা তোলার বিষয়টি জানান।’’
করোনার পরিস্থিতিতে ছোঁয়াচের ঝুঁকি এড়াতে ট্যাক্সিতে যাতায়াত করছেন অনেকেই। নানা ফিকিরে তাঁদের থেকে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
রাস্তায় ঘুরে দেখা গেল হলুদ ট্যাক্সি মিটারের থেকে শেয়ারে যেতে বেশি উৎসাহী। এক চালক বলেন, “মিটারের চেয়ে শেয়ারে বেশি টাকা ওঠে। দাদাদের নির্দেশ কম যাত্রী হলেও ছাড় মিলবে না। প্রয়োজনে যাত্রীদের থেকে ভাড়ার সঙ্গে স্যানিটাইজ়েশন ফি নিতে হবে।”
শহরের কয়েকটি ট্যাক্সিস্ট্যান্ড ঘুরে জানা গেল, চালকদের রোজগারে টান পড়লেও দাদারা কাউকেই ছাড়ছেন না। প্রতিদিন প্রতি ট্রিপে তাঁরা চালকদের থেকে টাকা নিচ্ছেন। হাওড়া, শিয়ালদহ কিংবা বিমানবন্দরের মতো বড় বড় স্ট্যান্ডের মতো ছোট ছোট বহু ট্যাক্সিস্ট্যান্ডেই তোলা না দিয়ে যাত্রী তুলতে পারছেন না ট্যাক্সিচালকেরা। উল্টোডাঙা রুটের এক ট্যাক্সিচালক বলেন, “লকডাউনের পরে জুলুম আরও বেড়েছে। আগে একটি ট্রিপে স্ট্যান্ডের দাদাকে ১০ বা ২০ টাকা দিতে হত। এখন ৩০ টাকা নিচ্ছে।’’
লকডাউনে ট্যাক্সিতে যাতায়াতকারী সল্টলেকের বাসিন্দা এক যাত্রীর মন্তব্য, ‘‘ট্যাক্সির দাদারা তো নিজেদের এলাকায় জনদরদী ভাবমূর্তি বজায় রাখতে তিন মাস সমাজসেবা করেছেন। সেই খরচ তো আমাদের থেকেই উসুল করা হবে।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, ছোট ছোট স্ট্যান্ড থেকেই এখন মাসে লক্ষাধিক টাকা আদায় করছেন দাদারা। একটি স্ট্যান্ড থেকে দিনে গড়ে একশোটি ট্যাক্সি ৩০ টাকা করে তোলা দিলেও মাসে ৯০ হাজার টাকা পৌঁছয় দাদাদের পকেটে।
শোভাবাজার এলাকার এক ট্যাক্সিচালকের কথায়, ‘‘দাদাদের লোকজন আমাদের উপরে নজর রাখেন। টাকা তোলেন। দাদারা সচরাচর সামনে আসেন না। জলে বাস করে কুমিরের সঙ্গে কি শত্রুতা করা যায়?’’
বাম জমানায় বিমানবন্দর এলাকায় এ ভাবে ট্যাক্সির থেকে টাকা তোলা এক ব্যক্তির কথায়, ‘‘আমরা টাকা নিলেও অন্তত রসিদ দিতাম। এখন তো সব স্ট্যান্ডই তৃণমূল পরিচালিত প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সিমেনস ইউনিয়নের। রসিদের বালাই নেই। চালকেরা গাড়ি বার করতে ভয় পাচ্ছেন।’’
প্রোগেসিভ ট্যাক্সিমেনস ইউনিয়নের সভাপতি মদন মিত্রের দাবি, ‘‘করোনার অজুহাতে কিছু অসাধু ট্যাক্সিচালক বেশি ভাড়া নিচ্ছেন বলে শুনেছি। তবে এখন শহরের প্রায় সব ট্যাক্সি বুথই আমাদের। এখানে কোনও জুলুমবাজি বা দাদাগিরি নেই। আমরা সুষ্ঠু ভাবে স্ট্যান্ডগুলি পরিচালনা করি। ছোট ছোট ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের অসাধু চক্র এমনটা করতে পারে। অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেব।”
বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের তরফে বিমল গুহ বলেন, “দাদাগিরির কোনও অভিযোগ কানে এলেই আমাদের কাছে অভিযোগ জানান। আমরা ব্যবস্থা নেব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy