অসহায়: আবাসনের বাইরে ফুটপাতে শুয়ে শম্ভুনাথ দে। —নিজস্ব চিত্র
পথে অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকা বয়স্কদের সাহায্যে এগিয়ে না-আসার একাধিক অভিযোগ উঠেছে গত কয়েক দিনে। অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকা যে কোনও ব্যক্তিকে করোনা সংক্রমিত ভেবে নিয়ে অনেকেই কাছে ঘেঁষতে চাইছেন না বলে দাবি পুলিশ-প্রশাসনের। অভিযোগ, এ বার হাতে চোট পাওয়া এক বৃদ্ধের পাশেও একই কারণে এগিয়ে এলেন না মানিকতলার বদ্রিদাস টেম্পল স্ট্রিটের একটি আবাসনের প্রায় পঞ্চাশটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা। উপরন্তু তাঁকে তাঁর ঘরেও ঢুকতে দিলেন না!
আহত ওই ব্যক্তির নাম শম্ভুনাথ দে। বয়স ৭০। প্রতিবেশী ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই আবাসনেই ১৫ বছর ধরে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করছেন তিনি।
সারা রাত রাস্তার ধারে পড়ে থাকার পরে রবিবার দুপুরে মানিকতলা থানার পুলিশ গিয়ে শম্ভুনাথবাবুকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়। বর্তমানে ওই বৃদ্ধ ওই হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসাধীন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, তাঁর বাঁ কাঁধের হাড় ভেঙে গিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, শম্ভুনাথবাবু অবিবাহিত। তাঁর দূর সম্পর্কের কয়েক জন আত্মীয় তেলেঙ্গাবাগান এলাকায় থাকেন। বদ্রিদাস টেম্পল স্ট্রিটের ‘শুভেচ্ছা’ আবাসনের বাসিন্দাদের গাড়ি রাখার জায়গার পাশেই রয়েছে নিরাপত্তারক্ষীর ঘর। কাজের সূত্রে সেখানেই থাকেন বৃদ্ধ। দিন পনেরো আগে পড়ে গিয়ে বাঁ কাঁধে চোট পান তিনি। শনিবার মানিকতলা থানায় ওই আবাসনের বাসিন্দারাই ফোন করে জানান, তাঁদের নিরাপত্তারক্ষীর সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ গিয়ে দেখে, নিজের ঘরের চৌকিতে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন ওই বৃদ্ধ। পুলিশকর্মীরাই অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। অভিযোগ, প্রাথমিক চিকিৎসার পরে শয্যা ফাঁকা নেই জানিয়ে সেখান থেকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
শম্ভুনাথবাবুর দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় সুজাতা ঘরামি বলেন, ‘‘আর জি কর হাসপাতাল শনিবার শুধু কয়েকটি ইঞ্জেকশন দিয়েই ছেড়ে দিয়েছিল। এর পরে কাকুকে পুলিশ ওই আবাসনে তাঁর ঘরে রাখতে গেলে সেখানকার বাসিন্দারা আর ঢুকতে দেননি।’’ এর পরে ওই আবাসনের গেটের বাইরে ফুটপাতেই বৃদ্ধকে শুইয়ে রেখে যায় পুলিশ। তাঁকে ওই অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে এ দিন সকালে স্থানীয়েরা ফের মানিকতলা থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে বৃদ্ধকে আর জি কর হাসপাতালে ভর্তি করায়।
অসুস্থ ওই বৃদ্ধকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন পুলিশকর্মীরা। রবিবার, মানিতকলায়। নিজস্ব চিত্র
ঘটনায় ওই আবাসনের বাসিন্দাদের পাশাপাশি পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়েরা। তাঁদের প্রশ্ন, এক জন অসুস্থকে তাঁর ঘরে ঢুকতে বাধা দিলেন আবাসনের কিছু বাসিন্দা, আর পুলিশ সেটা মেনে নিয়ে তাঁকে ফুটপাতে রেখে চলে গেল? যদিও মানিকতলা থানার এক তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকের দাবি, “এ ক্ষেত্রে আইনের পথে যতটা করা সম্ভব, আমরা ততটাই করতে পেরেছি।”
এ দিন সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, আবাসনের মূল গেটের বাইরে খোলা শৌচালয়ের পাশে ফুটপাতে শুয়ে কাতরাচ্ছেন বৃদ্ধ। নড়াচড়ার ক্ষমতা নেই। কী হয়েছে জানতে চাওয়ায় বৃদ্ধ বলেন, ‘‘আমাকে ঘরে ঢুকতে দিচ্ছে না। যাঁদের জন্য এত বছর কাজ করলাম, তাঁরাই এ রকম করছেন!’’ মেঘদূত নামে এক ব্যক্তি নিজেকে ওই আবাসনের আবাসিক কমিটির প্রধান দাবি করে বললেন, ‘‘দু’বছর হল এখানে এসেছি। বেশি কিছু বলতে পারব না।’’ এক বৃদ্ধের সঙ্গে এই ব্যবহার কেন? নিজের পুরো নাম বলতে না চাওয়া ওই ব্যক্তি উত্তর না দিয়ে পুলিশের সামনেই দরজা বন্ধ করে দেন।
তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘বৃদ্ধের আত্মীয়েরাও তাঁর দায়িত্ব নিতে চাইছেন না। হাসপাতাল ভর্তি না নিলে কী হত জানি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy