শুনশান: গ্রেফতারির পরে ফাঁকা মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়ির সামনের রাস্তা। শুক্রবার, সল্টলেকে। —নিজস্ব চিত্র।
বেলা সাড়ে ১১টা। সল্টলেকের বিসি পার্কের উল্টো দিকের গলিতে ঝাঁ-চকচকে বাড়িটির ফটকের উপরে টাঙানো শামিয়ানা। নীচে চেয়ারে গা এলিয়ে বসে দুই পুলিশকর্মী। অন্যান্য দিন ওই বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালে হাজারো প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তবেই ভিতরে যাওয়ার অনুমতি মিলত বাড়ির মালিকের দর্শনপ্রার্থীদের। কিন্তু শুক্রবারের পরিবেশ সব দিক থেকেই ছিল আলাদা। আগন্তুক বাড়ির সামনে ঘুরঘুর করলেও মোবাইলে খবর দেখতেই মগ্ন থাকলেন দুই পুলিশকর্মী।
বাড়ির নম্বর বিসি-২৪৪। সল্টলেকের ওই বাড়িতেই থাকেন রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। বর্তমানে যিনি বনমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার শেষ রাতে তাঁকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাহারায় সেখান থেকে নিয়ে গিয়েছেন ইডি-র আধিকারিকেরা। বন্ধ হয়ে গিয়েছে বাড়ির ফটক। পাতলা হয়ে গিয়েছে তাঁর বাড়ির সামনে থাকা নিরাপত্তা বেষ্টনীও।
প্রতিবেশীদের অনেকের কাছেই ‘বালুবাবু’র (জ্যোতিপ্রিয়ের ডাকনাম) গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি অবিশ্বাস্য বলে ঠেকেছে। নিরাপত্তা বেষ্টনী সহযোগে তাঁর বাড়ি থেকে বেরোনো কিংবা বাড়িতে ফেরা বিসি-২৪৪ বাড়ির প্রতিবেশীরা টের পেতেন। জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়ির অদূরে একটি দুর্ঘটনার পরে ওই গলির নিরাপত্তা আরও আঁটোসাঁটো করা হয়েছিল, জানাচ্ছেন গলির বাসিন্দারাই। কিন্তু তাঁর গ্রেফতারির পরে এ দিন সকাল থেকে কার্যত সব উধাও।
এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা গেল, একটি গার্ডরেল গলির এক কোণে রাখা। গলিটির দু’দিকে বসানো রয়েছে লোহার গার্ডরেল। সেগুলি বৃহস্পতিবার বনমন্ত্রীর বাড়িতে ইডি-র তল্লাশি চলার সময়ে গলিতে লোকজনের যাতায়াত আটকাতে বসানো হয়েছিল।
বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, টিভি দেখেই তাঁরা জেনেছেন, বৃহস্পতিবার ভোরে ইডি হানা দেয় বনমন্ত্রীর বাড়িতে। তার পরে দিনভর নানা দৃশ্যের সাক্ষী তাঁরা। গাড়ি করে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গলিতে এসে জড়ো হওয়া, ডায়াবিটিসের রোগী বনমন্ত্রীর জন্য মিষ্টি নিয়ে তৃণমূলের নেতানেত্রীদের বিজয়া সারতে আসা, গলিতে অপরিচিতদের ভিড়— ২৪ ঘণ্টায় বহু কিছু দেখেছেন সল্টলেকের ওই গলির বাসিন্দারা। তবে কোনও কিছু নিয়ে কেউই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি। এমনকি, প্রতিবেশী হিসাবে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় কেমন ছিলেন, সে প্রশ্নও এড়িয়ে গিয়েছেন তাঁরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কিছু একটা যে ঘটতে পারে, বৃহস্পতিবার বিকেলের পর থেকে অনেকেই তা আঁচ করছিলেন। কারণ, সকালের তুলনায় আচমকাই বিসি ব্লকের ওই গলিতে পুলিশের আনাগোনা বেড়ে যায়। গলির দু’টি মুখ লোহার গার্ডরেল ফেলে বন্ধ করে দেয় পুলিশ। সূত্রের খবর, বিজয়া সারার নাম করে সকালে তৃণমূলের নেতা-নেত্রীদের জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়িতে ঢুকতে চাওয়া, দলীয় সমর্থকদের বাড়ির বাইরে জড়ো হওয়ার পরে পুলিশকে তৎপর থাকতে ইডি-র তরফে বিধাননগর (উত্তর) থানায় জানানো হয় ।
এর পরেই লোহার গার্ডরেল ফেলে রাতে গলির দু’টি মুখ আটকে দেয় পুলিশ। সান্ধ্যকালীন ভ্রমণের জন্যও ওই গলিতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। গলির বাসিন্দারা বাড়ির নম্বর জানালে গার্ডরেল পেরোনোর অনুমতি মেলে। খাবার সরবরাহকারী সংস্থার লোকজনকেও গার্ডরেলের বাইরে মোটরবাইক রেখে বাড়ির নম্বর জানিয়ে গলিতে ঢুকতে দেয় পুলিশ।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই রাত ন’টা নাগাদ আচমকাই মন্ত্রীর বাড়ির সামনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সংখ্যা বাড়তে দেখা যায়। ঘটনা যে স্বাভাবিক ছন্দে এগোচ্ছে না, তখনই অনুমান করতে থাকেন পার্শ্ববর্তী বাড়ির লোকজন। গভীর রাতে মন্ত্রীর বাড়ির সামনে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের চিৎকারে অনেকেই বারান্দায় বেরিয়ে দেখতে পান, জ্যোতিপ্রিয়কে গাড়িতে তুলে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy