স্বাগত: প্রথম ট্রেনের এক যাত্রীকে গোলাপ দিয়ে অভ্যর্থনা। বৃহস্পতিবার, শিয়ালদহ স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র
শিয়ালদহ পর্যন্ত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর যাত্রী পরিষেবা খুলে দেওয়ার প্রথম দিনেই সামনে এল বেশ কিছু ফাঁক-ফোকর। বৃহস্পতিবার যাত্রীদের ভিড় হতে পারে ধরে মাত্র ১৮ জন কর্মী নিয়েও দুই শিফটে শিয়ালদহ স্টেশনে যে প্রস্তুতি ছিল, তার নামমাত্র চোখে পড়েনি প্রান্তিক স্টেশন সেক্টর ফাইভে। ফলে প্রথম দিনের পরীক্ষায় তৎপরতার নিরিখে শিয়ালদহ উতরে গেলেও ডাহা ফেল সেক্টর ফাইভ। সারা দিনে কাউন্টারের বাইরে উপচে পড়া ভিড়, সন্ধ্যায় টোকেন পাওয়ার জন্য যাত্রীদের আকুতি-চেঁচামেচি মিলে খারাপ ব্যবস্থাপনার নজির হয়ে থাকল ওই স্টেশন।
কিন্তু কেন এতটা অপ্রস্তুতির ছবি? মেট্রো সূত্রের খবর, এত দিন ফুলবাগান স্টেশন থেকে সারা দিনে যত সংখ্যক যাত্রী ইস্ট-ওয়েস্টে যাতায়াত করতেন, তার প্রায় দশ গুণ বেশি যাত্রী এ দিন ওই মেট্রোয় সফর করেছেন। মেট্রো সূত্রের খবর, যেখানে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় দৈনিক গড়ে তিন হাজার যাত্রী যাতায়াত করতেন, দিনের শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ দিন সেখানে ৩১ হাজারেরও বেশি যাত্রী ওই মেট্রোপথে সফর করেছেন। এঁদের বড় অংশই সফর করেছেন শিয়ালদহ থেকে সেক্টর ফাইভের মধ্যে। আগে অনেকেই ‘কিউ আর’ কোড ব্যবহার করে টিকিট কাটতেন। এত দিন সব চেয়ে বেশি কিউ আর কোড ব্যবহার হয়েছে ওই স্টেশনেই। ফলে ভিড় কতটা বাড়তে পারে, তার আগাম ধারণা মেট্রোর কর্মীদের মধ্যে ছিল না। অভিযোগ, সল্টলেকের অফিসপাড়ার ভিড় করুণাময়ী স্টেশনে হাল্কা হয়ে যাবে, এমন মনোভাব থেকেই প্রস্তুতির পাশ দিয়ে হাঁটেননি ওই স্টেশনের আধিকারিকেরা।
এ দিন স্টাফ সিলেকশন কমিশনের কম্পিউটার নির্ভর পরীক্ষা ছিল। দুপুর ১১টার ব্যস্ত সময় ফুরোতেই ওই পরীক্ষার্থীদের ভিড় আছড়ে পড়ে সেক্টর ফাইভ স্টেশনে। এক সময়ে মেট্রোর দু’টি কাউন্টারে প্রায় ৫০০ পরীক্ষার্থীকে টোকেন কেনার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কিন্তু মেট্রোর কোনও কর্মীকে দেখা যায়নি টোকেন বিক্রির স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের সামনে দাঁড়িয়ে যাত্রীদের সাহায্য করতে। কার্ড রিচার্জ এবং টোকেন দেওয়ার কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছেন দু’টি কাউন্টারের কর্মীরা। একই ছবি ধরা পড়েছে বিকেল ৫টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যেও। উপচে পড়া ভিড় সামলাতে বাড়তি বুকিং কাউন্টার খুলতে গিয়ে মালুম হয়েছে কর্মী-সঙ্কট। স্মার্ট কার্ড না-থাকা যাত্রীদের ভিড়ে কার্যত দিশাহারা অবস্থা হয় কর্মীদের।
উল্টো দিকে, ভিড়ের আগাম অনুমান করে শিয়ালদহ স্টেশনের প্রস্তুতি ছিল অনেকটা ভাল। স্মার্ট কার্ড এবং টোকেন বিক্রি ছাড়াও কার্ড রিচার্জ করার পাঁচটি যন্ত্র থাকায় কাউন্টার অল্প থাকলেও ভিড়ের চাপ সে ভাবে পর্যুদস্ত করতে পারেনি।
এ দিন সকাল সাড়ে ৬টায় শিয়ালদহে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো স্টেশনের গেট খোলার অনেক আগে মাঝ রাতে লোকাল ধরে চলে আসেন বিমানবন্দরের এক নম্বর গেটের বাসিন্দা প্রভাত চট্টোপাধ্যায়। বনগাঁর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক প্রভাতবাবু শিয়ালদহ থেকে এ দিনের মেট্রো সফরের প্রথম যাত্রী ছিলেন। তাঁর মতোই শিয়ালদহ থেকে প্রথম মেট্রো চড়ার সাক্ষী থাকলেন প্রাক্তন রেলকর্মী সোদপুরের সুনির্মলমুখোপাধ্যায়, সল্টলেকের রাজীব রায়, বাগবাজারের বাসিন্দা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার উষ্ণীষ দত্ত। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক বছর আটাত্তরের গৌরাঙ্গ গোস্বামী আবার বাড়িতে না জানিয়েই সোদপুর থেকে শিয়ালদহ স্টেশনে চলে আসেন। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার জয়নগরের বিকাশ বর কিংবা গোচারণের দেবনারায়ণ সরকার বিকাশ ভবনের কর্মী। এঁদের কাছে মেট্রো তাই মুশকিল আসান।
প্রথম দিনের প্রথম সফরে যাত্রীদের হাতে গোলাপ তুলে দেন মেট্রোর কর্মীরা। প্রথম যাত্রী প্রভাতবাবুর হাতে ফুল তুলে দেন শিয়ালদহ স্টেশনের সুপার। প্রভাতবাবুর কথায়, ‘‘এত দিন ধরে মেট্রো নির্মাণের কথা পড়েছি। তাই প্রথম যাত্রা নিয়ে রোমাঞ্চিত ছিলাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy