ডেঙ্গি-আতঙ্কে ফুলপ্যান্ট পরে স্কুলে এসেছে খুদে পড়ুয়া। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
সেপ্টেম্বরের ভরা গরমে শীতের পোশাক পরে স্কুলে যেতে হচ্ছে পড়ুয়াদের। স্কুলের নির্দেশ, ছেলেদের সবাইকে পরতে হবে ফুলপ্যান্ট। সঙ্গে ফুলশার্ট পরলে আরও ভাল। মেয়েদের ক্ষেত্রে স্কার্টের নীচে পরতে হবে লেগিংস।
আবহাওয়ায় গরম কমার বিন্দুমাত্র লক্ষণ দেখা না গেলেও স্কুলের পোশাকে ‘শীতের ছোঁয়া’ আসলে ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তের কারণে। বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, শরীর ঢাকা পোশাক পরলে মশার কামড় খাওয়ার আশঙ্কা খানিকটা কমে। তাঁরা অবশ্য এ-ও জানাচ্ছেন, এত সব উদ্যোগ সত্ত্বেও পড়ুয়াদের ডেঙ্গিতে সংক্রমিত হওয়া আটকানো যাচ্ছে না। ডেঙ্গির কারণে স্কুলে পড়ুয়াদের অনুপস্থিতি বাড়ছে। ফুলপ্যান্ট পরলেও গরমে অনেকেই ফুলশার্ট পরতে পারছে না। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, বেঞ্চের তলায় মশা কামড়ানোর ভয় বেশি। তাই ফুলশার্টের চেয়েও ফুলপ্যান্টে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে।
রামমোহন মিশন হাইস্কুলের অধ্যক্ষ সুজয় বিশ্বাস জানান, তাঁদের স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত ছেলেরা হাফপ্যান্ট পরে। কিন্তু তাঁরা নোটিস দিয়ে জানিয়েছেন, এখন ফুলপ্যান্ট পরে আসতে হবে, যা শীতে পরার কথা। মেয়েদের পরতে হবে লেগিংস। গরমের কারণে এ নিয়ে কয়েক জন অভিভাবক প্রথমে আপত্তি করলেও এখন ডেঙ্গির প্রকোপ দেখে সকলেই রাজি হয়েছেন। সকালে স্কুলের প্রার্থনায় ডেঙ্গি নিয়ে সচেতন করা হচ্ছে পড়ুয়াদের। ন্যাশনাল ইংলিশ হাইস্কুলের অধ্যক্ষা মৌসুমী সাহা জানালেন, তাঁদের স্কুলে ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতায় ছোট ছোট নাটক করা হচ্ছে। স্কুলের কোথাও যাতে জল জমে না থাকে, সে দিকে নজর রাখতে বলা হচ্ছে পড়ুয়াদেরও।
ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতার প্রচার এবং পড়ুয়াদের ফুলশার্ট ও ফুলপ্যান্ট পরে আসতে বলার পরেও বেশ কিছু পড়ুয়া ডেঙ্গিতে আক্রান্ত বলে জানালেন ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক রাজা দে। তিনি বলেন, ‘‘যারা এ বার মাধ্যমিক দেবে, তাদের অনেকেই প্রি-টেস্ট দিতে পারেনি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ায়। ডেঙ্গি আক্রান্ত পড়ুয়াদের অনেকেই ছুটির আবেদন জমা দিয়েছে। কয়েক জন শিক্ষকও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত।’’ ফুলশার্ট ও ফুলপ্যান্ট পরে ছাত্রদের গরম লাগতে পারে। তাই শ্রেণিকক্ষে যাতে পাখা ঠিক মতো চলে, সে দিকে নজর রেখেছেন যোধপুর পার্ক বয়েজ় স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিত সেন মজুমদার বললেন, ‘‘এই গরমে ক্লাসরুমের জানলা তো খুলে রাখতেই হচ্ছে। অথচ, জানলা খুলে রাখলে মশা ঢোকার আশঙ্কা বেড়ে যায়। ক্লাসরুমে যাতে ঠিক মতো হাওয়া খেলে, তার জন্য পাখাগুলি ঠিক মতো চলছে কি না, দেখা হচ্ছে নিয়মিত।’’
প্রতি বছরই জুলাই, অগস্ট থেকে শুরু হয় ডেঙ্গির মরসুম। সেই কারণে একতলার প্রতিটি ঘরের জানলায় মসকিটো নেট লাগিয়ে নিয়েছে কেষ্টপুর এলাকার দেশপ্রিয় বালিকা বিদ্যামন্দির। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নাজরিন নাহার বললেন, ‘‘এই গরমে তো আর জানলা বন্ধ করে রাখতে পারি না। পাশেই কেষ্টপুর খাল। তাই আমাদের স্কুলের একতলার প্রতিটি ক্লাসঘরে নেট লাগানো হয়েছে।’’ শুধু স্কুল চত্বরই নয়, স্কুলের বাইরের চত্বরও পরিষ্কার থাকা প্রয়োজন বলে মনে করছেন শিয়ালদহের টাকি গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শম্পা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘স্কুল চত্বর তো পরিষ্কার করা হচ্ছেই। তবে আমাদের স্কুলের পাশে খালপাড় পরিষ্কার করা না হলে মশার উপদ্রব কমবে না। স্থানীয় কাউন্সিলর ও পুলিশের উদ্যোগে খালপাড় পরিষ্কার করা হচ্ছে। আমাদের পড়ুয়ারাও তাতে হাত লাগিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy