আর জি কর হাসপাতাল থেকে টেলিমেডিসিন পরিষেবা দিচ্ছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। শনিবার। নিজস্ব চিত্র Sourced by the ABP
সুপ্রিম কোর্ট থেকে মুখ্যমন্ত্রী, সকলেই অনুরোধ করেছেন কাজে যোগ দেওয়ার। কিন্তু দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় জুনিয়র চিকিৎসকেরা। ফলে, রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই বহির্বিভাগে যেমন রোগী-ভোগান্তি অব্যাহত, তেমনই পূর্ব পরিকল্পিত অস্ত্রোপচারের দিনও পিছিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। দৈনিক কোথায়, কত রোগী বহির্বিভাগে আসছেন এবং কতগুলি করে অস্ত্রোপচার হচ্ছে, তার পরিসংখ্যান স্বাস্থ্য ভবনে পাঠাতে হয় প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজকে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে দৈনিক অস্ত্রোপচারের সংখ্য়া কমেছে আর জি কর-কাণ্ডের পরে। পাশাপাশি, বহির্বিভাগেও রোগী আসছেন আগের তুলনায় কম। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা কৌস্তভ নায়েক বলেন, ‘‘সিনিয়র চিকিৎসকদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তাঁরা যতটা সম্ভব পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু পুরোটা যে সম্ভব হচ্ছে, তেমনটা নয়।’’ অন্য দিকে, আন্দোলনকারী আবাসিক চিকিৎসকেরাও দাবি করছেন, তাঁরা কাজ বন্ধ রাখলেও সিনিয়র চিকিৎসকেরা রোগী পরিষেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। জরুরি পরিষেবা কোথাও বন্ধ নেই। বহির্বিভাগও চলছে।
কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি পুরোপুরি তেমনটা নয় বলে অভিযোগ রোগীর পরিজনদের। যেমন, শনিবার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পিঠে টিউমার নিয়ে আসা কুলতলির এক রোগীর পরিজনদের কথায়, ‘‘আগে থেকে ঠিক করা ছিল সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই অস্ত্রোপচার হবে। এখন বলছে, আরও কয়েক দিন পরে আসতে। আমরা ডাক্তারদের আন্দোলন বন্ধ করতে বলছি না। কিন্তু আমরা পরিষেবাও যাতে পাই, সেই দিকটাও তো দেখতে হবে।’’
কোথায় দৈনিক কত রোগী বহির্বিভাগে আসছেন বা কত অস্ত্রোপচার হচ্ছে, তা খোলসা করতে নারাজ প্রায় সব মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষই। যদিও সূত্রের খবর, সর্বত্রই সংখ্যাটি কম। যেমন, গত ১ থেকে ৮ অগস্ট এসএসকেএমে জরুরি ও পূর্বপরিকল্পিত অস্ত্রোপচার হয়েছিল ৯২৪টি। সেখানে ৯ থেকে ২০ অগস্টে সেই সংখ্যা কমে হয়েছে ৪৬৫টি। আবার, কামারহাটি সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে এত দিন অল্পবিস্তর কাজ করছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ। কিন্তু শুক্রবার রাত থেকে সকলেই পুরোপুরি কর্মবিরতি শুরু করেছেন। জানা যাচ্ছে, আর জি করের ঘটনার আগে সেখানে স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি, অস্থি, শল্য ও চক্ষু বিভাগে যত অস্ত্রোপচার (১০ দিনের হিসাবে) হত, সেই সংখ্যা চার-পাঁচ গুণ কমেছে। গত ২০ থেকে ২৯ অগস্ট পর্যন্ত ওই হাসপাতালে সিজ়ারিয়ান ৯০টি, স্ত্রীরোগে ২১, অস্থিতে ২৬, শল্যতে ৫০ এবং চক্ষু বিভাগে ২৫টি অস্ত্রোপচার হয়েছে। এক কর্তার কথায়, ‘‘সিনিয়র চিকিৎসকেরাও অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। খবর নিয়ে দেখা গিয়েছে, তাঁরা সত্যিই অসুস্থ। ফলে অস্ত্রোপচারের সংখ্যা আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’’
অন্য দিকে, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের দাবি কেমোথেরাপি, রেডিয়োথেরাপিতে কোনও রোগীকে ফেরানো হচ্ছে না। শল্য বিভাগে আগে যেখানে দৈনিক ৩০-৩৫টি অস্ত্রোপচার হত, সেই সংখ্যা ৪-৫টি করে কমেছে। আর জি করে ২২ অগস্ট বহির্বিভাগে রোগী এসেছিলেন ৯৪২ জন। ৩০ অগস্ট সেখানে রোগী বেড়েছে বলেই দাবি কর্তৃপক্ষের। তাঁদের দাবি, ওই দিন রোগী এসেছেন ২২৬৬ জন। ওই রাতে জরুরি বিভাগে আসা ৮০ জনের মধ্যে ৩১ জন ভর্তি হয়েছেন। আগে হাসপাতালে রোজ অস্ত্রোপচার হত ২০-২৫টি। এখন হচ্ছে ৪-৫টি। তবে সোমবার থেকে প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে অস্ত্রোপচার চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
অন্য দিকে, কর্মবিরতি চালালেও ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট’-এর তরফে টেলিমেডিসিন পরিষেবা ‘অভয়া ক্লিনিক’ চালু করা হয়েছে। যোগাযোগ করতে হবে ৮৭৭৭৫৬৫২৫১, ৮৭৭৭৫৬৯৩৯৯, ৮৭৭৭৫৭৯৫১৭ ও ৬২৯০৩২৬০৭৯ হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে। আর জি করে প্রতিদিন বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ থেকে জুনিয়র চিকিৎসকেরা গিয়ে ওই পরিষেবা দেবেন। যত দিন আন্দোলন চলবে, তত দিন ওই ক্লিনিক চলবে। প্রথম দিন প্রায় ৫০০ রোগী ওই পরিষেবা নিয়েছেন বলেই দাবি জুনিয়র চিকিৎসকদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy