সন্দীপ ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে আট দিনের সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিল আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালত। তাঁকে ১০ দিনের জন্য হেফাজতে চেয়ে আদালতে আর্জি জানিয়েছিল সিবিআই।
আদালতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির তরফে দাবি করা হয়, তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের জন্য আর্থিক দুর্নীতির মামলায় ধৃত সন্দীপকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। আদালতে সিবিআইয়ের আরও দাবি ছিল, আর্থিক দুর্নীতির একটি বড় চক্র রয়েছে। কারা এই চক্রে রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে জানায় তদন্তকারী সংস্থাটি। সওয়াল জবাব পর্বে সন্দীপের আইনজীবী জানান, তাঁর মক্কেল তদন্তে সহযোগিতা করেছেন। এই যুক্তিতে সিবিআই হেফাজতের মেয়াদ কমানোর আর্জি জানান তিনি। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে সন্দীপকে ১০ দিনের জন্য সিবিআই হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিশেষ আদালতের বিচারক।
মঙ্গলবার দুপুরে গাড়িতে চাপিয়ে সন্দীপকে নিজ়াম প্যালেসের সিবিআই দফতর থেকে বার করার সময় নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। সন্দীপের গাড়ি ঘিরে ধরে ‘চোর-চোর’ স্লোগান দিতে থাকেন কয়েক জন। সেই সব কাটিয়েই সন্দীপকে নিয়ে আদালতের উদ্দেশে রওনা দেন সিবিআই আধিকারিকেরা। আদালত চত্বরেও সন্দীপের গাড়ি ঘিরে হইহট্টগোল শুরু হয়।
সোমবার সন্দীপের সঙ্গে সিবিআই গ্রেফতার করে চিকিৎসার সরঞ্জাম সরবরাহ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, হাওড়ার সাঁকরাইলের বাসিন্দা বিপ্লব সিংহ এবং একটি ওষুধের দোকানের মালিক সুমন হাজরাকে। গ্রেফতার করা হয় সন্দীপের নিরাপত্তারক্ষী আফসর আলিকে। মঙ্গলবার এই তিন জনকেও আদালতে হাজির করায় সিবিআই। এই তিন জনকে আট দিনের সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিশেষ আদালতের বিচারক।
টানা ১৫ দিন সিবিআইয়ের জেরার মুখোমুখি হওয়ার পর সোমবার সন্ধ্যায় গ্রেফতার হন সন্দীপ। গত ১৬ অগস্ট থেকে টানা ১৫ দিন সিবিআই জেরার মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাঁকে। শুধু গত শনি এবং রবিবার আরজি করের প্রাক্তন এই অধ্যক্ষকে জেরা করা হয়নি। সোমবার আবার তাঁকে তলব করা হয়েছিল সিজিও কমপ্লেক্সে। সন্ধ্যায় সেখান থেকে বার করে সিবিআই আধিকারিকেরা সন্দীপকে নিয়ে যান নিজ়াম প্যালেসে। তার পরেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে জানানো হয়, গ্রেফতার করা হয়েছে সন্দীপকে। সিবিআই সূত্রে জানানো হয়, আর্থিক দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন সন্দীপ।
গত ৯ অগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে মহিলা চিকিৎসক পড়ুয়ার ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পর থেকেই তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে নানা মহলে। তদন্তভার হাতে পাওয়ার পর গত ১৫ অগস্ট তাঁকে প্রথম বার তলব করে সিবিআই। সেই দিন হাজিরা দেননি সন্দীপ। পরদিন অবশ্য সল্টলেকের রাস্তা থেকে সিবিআইয়ের গাড়িতে ওঠেন তিনি। সেই গাড়িতে সিবিআইয়ের এক আধিকারিকও ছিলেন। সন্দীপ যান সিজিও কমপ্লেক্সের সিবিআই দফতরে। তার পর থেকে ২৪ অগস্ট পর্যন্ত টানা ৯ দিন তাঁকে তলব করা হয় সিজিওতে। দৈনিক ১০ থেকে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত সিবিআই দফতরে থাকতে হয়েছিল সন্দীপকে।
গত ২৫ অগস্ট সকালে সন্দীপের বেলেঘাটার বাড়িতে হানা দেয় সিবিআইয়ের একটি দল। ৭৫ মিনিট তাদের বাড়ির বাইরে অপেক্ষা করিয়ে রাখার পর দরজা খোলেন সন্দীপ। ভিতরে ঢোকেন সিবিআই কর্তারা। ওই দিন সিবিআই তাঁর বাড়িতেই সন্দীপকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে আরজি করে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। এ ছাড়া, ওই হাসপাতালে আর্থিক অনিয়মের মামলার তদন্তভারও সিবিআইয়ের হাতে দিয়েছে আদালত। দু’টি মামলাতেই কেন্দ্রীয় সংস্থার জোড়া আতশকাচের নীচে ছিলেন আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ। আর্থিক অনিয়মের মামলায় ২৪ অগস্ট এফআইআরও করেছে সিবিআই। সূত্রের খবর, সেই এফআইআরের ভিত্তিতেই সন্দীপের বাড়িতে পৌঁছেছিল সিবিআইয়ের দল। তার মাঝে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে সন্দীপ-সহ মোট সাত জনের পলিগ্রাফ পরীক্ষাও করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy