ভাইফোঁটা উপলক্ষে মিষ্টি কিনতে ভিড় ভবানীপুরের একটি দোকানে।
যতই দামের ছেঁকায় হাত পুড়ুক, ভাইফোঁটায় ভাইয়ের পাতে ইলিশ ভাপা বা তোপসে ফ্রাই না তুলে দিলে চলবে না।— বলছিলেন মানিকতলা বাজারে কেনাকাটা করতে আসা ইন্দ্রাণী বিশ্বাস। কলকাতার বাজারে এখন এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম ১৬০০ টাকা কেজি এবং তার বেশি ওজনের ইলিশেরদাম ১৮০০ টাকা কেজি। এ ছাড়া কেজি প্রতি বাগদা চিংড়ি ১০০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৭০০ টাকা। পাঁঠার মাংস ৮৭০ টাকা। তাতে কী! থলি হাতে মধ্যবিত্ত বাঙালির বাজার ভ্রমণ তাতে কমেনি।
যদিও এ কথা মানতে নারাজ মানিকতলা বাজারের মাছ ব্যবসায়ী প্রদীপ মণ্ডল। প্রদীপ বলছিলেন, ‘‘বাজারে মাছের যতটা চাহিদা হবে ভেবেছিলাম, ততটা কিন্তু নেই। এখন নিজে রেঁধে ভাইকে খাওয়ানোর দিন বদলে যাচ্ছে। অনেকেই ভাইকে ফোঁটা দিয়ে বাড়িতে আর রান্না করছেন না। বিভিন্ন রেস্তরাঁয় সপরিবার খেতে চলে যাচ্ছেন। ফলে কয়েক বছর আগেও যেমন ভাইফোঁটায় মাছ, মাংস কেনার চাহিদা দেখতাম, এখন উৎসবের সেই প্রথা কিছুটা হলেও কম।’’
তবে উল্টো চিত্রও অবশ্যই আছে। ভাইয়ের জন্য সকাল থেকে রান্নার যাবতীয় আয়োজন করছেন কোনও বোন। এমনকি। মিষ্টিও নিজের হাতে তৈরি করেছেন। দিল্লি থেকে দাদা আসবেন। তাই ইউটিউব দেখে কাজু বরফি, গোলাপজাম বানিয়ে ফেলেছেন টালিগঞ্জের দীপালি দাস। দীপালি বলেন, ‘‘রান্না তোকরেছিই। নিজের হাতে মিষ্টি বানিয়ে দাদার প্লেটে তুলে দিয়েছি। এর আনন্দই আলাদা।’’
প্রতি বারই ভাইফোঁটায় নতুন নতুন সন্দেশ তৈরি করেন হালুইকরেরা। মিষ্টি ব্যবসায়ী অমিতাভ দে জানান, এ বছরের ভাইফোঁটায় তাঁদের নতুন মিষ্টি ‘ভুবন মোহিনী’ এবং ‘সপ্তপদী’। অমিতাভের কথায়, ‘‘এখন মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন। তাই সপ্তপদী মিষ্টি তৈরী হয়েছে নানা রকমের শুকনো ফল দিয়ে। ভুবন মোহিনী তৈরি হয়েছে দই আর রাবড়ির মিশ্রণে।’’
ভাইফোঁটায় খাজার চাহিদা মনে রেখে, মিষ্টির দোকানগুলিতে স্থান পেয়েছে রকমারি খাজা। চিরাচরিত মিষ্টি, নতুন ধরনের মিষ্টি, না কি ফিউশন মিষ্টি? ভাইদের প্লেটে কী সাজিয়ে দেবেন বোনেরা, এ নিয়ে তাঁদের বিভ্রান্ত হতে দেখা গেল ভবানীপুর এলাকার একটি মিষ্টির দোকানে ঢুকে। ওই দোকানের কর্ণধার বিজয় সাউ বলেন, ‘‘নতুন মিষ্টি ছাড়া চিরাচরিত ‘ভাইফোঁটা’ লেখা সন্দেশ তো থাকছেই। এ ছাড়া কাজু বরফি, খাজা, আম সন্দেশ, জলভরা সন্দেশ, গজা এগুলোর চাহিদা এ বারও রয়েছে।’’ অন্য এক মিষ্টি বিক্রেতা জানালেন, নতুন ধরনের মিষ্টির পাশাপাশি, হারিয়ে যাওয়া মিষ্টি, ছানার মুড়কিও অনেকে নিয়ে যাচ্ছেন।
কাঁসার থালায় ৭ বা ১০ রকমের সন্দেশ সাজিয়ে তৈরি হয়েছে ভাইফোঁটার বিশেষ থালি। ওই থালিতেই সঙ্গে থাকছে কাঁসার বাটি। সেখানে রয়েছে ফোঁটার উপকরণ ধান আর দূর্বা। ওই দোকানের কর্মী মৌমিতা সাহা বলেন, ‘‘এই থালি বাড়ি নিয়ে গেলে আর কিছু লাগবে না। ভাইফোঁটার জন্য সম্পূর্ণ এই থালি। মিষ্টির সঙ্গে নোনতাও রয়েছে।’’
আর জি কর কাণ্ডে নির্যাতিতার বিচার মেলেনি এখনও। এ ক্ষেত্রে সবুরে বিচার মিলবে কিনা, জানা নেই। তবে বাঙালির উৎসবের শেষ পর্ব, ভাইফোঁটার মিষ্টিতে থাকছে বিচারের দাবি। অশোকনগর এলাকার এক মিষ্টির দোকানের শোকেসে রাখা সন্দেশের উপরে লেখা ‘জাস্টিস’। দোকানের কর্ণধার কমল সাহা বলেন, ‘‘দিন কয়েক আগে আমাদের এলাকারই এক বোন এসে বরাত দিয়ে গিয়েছিলেন, এই সন্দেশের।তখন আমরা ওঁর জন্য ছানা-ক্ষীর দিয়ে তৈরি করেছিলাম সন্দেশ। উপরেলিখে দেওয়া হয়েছিল ‘জাস্টিস’। অনেকে চাইছেন দেখে বেশি করে বানালাম।’’ যদিও আর জি করের নির্যাতিতার বিচারের দাবিতেএককাট্টা অনেকেই মিষ্টি তৈরির বিষয়টিকে সমালোচনার চোখে দেখছেন। তাঁদের মতে, এমন গুরুতর বিষয়কে লঘু করে দেখানো হয়েছে। যেটা অনভিপ্রেত।
এ দিকে ভাইফোঁটাকে কেন্দ্র করে আনাজের দাম বাড়েনি বলে দাবি করলেন কলকাতার আনাজ ব্যবসায়ীরা। গড়িয়াহাট বাজারের বাজার সমিতির সম্পাদক তথা রাজ্যের টাস্ক ফোর্সের সদস্য দিলীপ মণ্ডল জানালেন, কালীপুজোর সময় থেকেই বাজারদর নিয়ন্ত্রণে। বেগুন, টমেটো, ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম আগের তুলনায় কমেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy