আশাবাদী: বিশপস কলেজের বুথ ঘুরে দেখছেন সায়রা হালিম। মঙ্গলবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
দুশো বছরের পুরনো বিশপস কলেজ চত্বরে তাঁর উপস্থিতি পছন্দ হয়নি সবুজ পাঞ্জাবিধারী যুবকের। শাড়িতে শাসকদলের প্রার্থীর নামের ব্যাজ আঁটা এক মহিলাও তেড়ে গেলেন বাম প্রার্থীর দিকে! ‘‘কী ভাবছেন, আপনি খুব ‘পঢ়ি-লিখি’ (শিক্ষিত)? এত মিডিয়া কেন আপনার সঙ্গে?’’
একরোখা মহিলা তাঁদের দিকে দৃকপাত করলেন না। আধা-সামরিক বাহিনীর জওয়ানদের কাছে গিয়ে শান্ত স্বরে বোঝালেন, ‘‘আপনাদের উপরে আমার ভরসা আছে! আপনারা কিন্তু ভোটার কার্ড ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেবেন না।’’ ভোট কেন্দ্রে বালিগঞ্জের বাম প্রার্থী সায়রা শাহ হালিমকে কটূক্তি করা সেই মহিলাই পরে সংবাদমাধ্যমের ভিড় দেখে তল্লাট ছাড়তে ঊর্ধ্বশ্বাসে চম্পট দিলেন। একটু বাদে সিপিএমের এজেন্ট এসে সায়রাকে বললেন, ‘‘আমি ছাড়া পাশের দুটো বুথে এজেন্ট নেই। ওরা চাপ তৈরি করছিল!’’
বেনিয়াপুকুরের মিল্লি আমিন কলেজ বা বিশপস কলেজে সকালের দিকেই খানিক ‘চড়া আঁচ’ দেখার পরে কেউ কেউ সায়রাকে নিষেধ করেন, দুপুরে ও-দিকটায় যাবেন না! সন্ধ্যা পর্যন্ত বাম প্রার্থীর সফর কিন্তু চালু থাকল। ৮৫০০ ভোটারের লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের ভোট কেন্দ্র, বিশপস কলেজ, মহাদেবী বিড়লা স্কুল, লরেটো হাউজ় বা অ্যালবেনি হলে তাঁকে একাধিক বার দেখা গিয়েছে।
গত বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের অন্যতম ভরসা এনআরসি-বিরোধী মঞ্চ এ বার সায়রাকেই যোগ্যতম প্রার্থী হিসেবে বেছে নিতে বলেছে। সায়রা নিজেও সংখ্যালঘু ও বালিগঞ্জের ‘সংস্কৃতিবান বাঙালি’র সমর্থন নিয়ে আশাবাদী। কিন্তু দিনের শেষে সংখ্যালঘু ভোটার-অধ্যুষিত ৬০, ৬১ নম্বর ওয়ার্ডের পরিস্থিতিই সায়রাকে চিন্তায় রেখেছে।
শ্বশুরমশাই, বিধানসভার সব থেকে দীর্ঘ সময়ের স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিমের বৌমার রাজনৈতিক কাজকর্মে হাতেখড়ি স্বামী ফুয়াদ হালিম ২০১১ সালে প্রথম বার ভোটে দাঁড়ানোর পরে। ফুয়াদ এ দিন কিড স্ট্রিটের বাড়িতে সন্ধ্যায় কমরেডদের খাবারের আয়োজনে ব্যস্ত থেকেছেন। সায়রার বাবা, লেফটেন্যান্ট জেনারেল জ়মিরুদ্দিন শাহ এবং মা সাবেয়া দিল্লির বাড়ি ছেড়ে দেড় মাস ধরে কলকাতায় পড়ে। সায়রার বড় মেয়েও (লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্সের ছাত্রী) এখন ছুটিতে কলকাতায়। মহাদেবী বিড়লা স্কুল থেকে বাম প্রার্থী বেরোনোর সময়েই গুঞ্জন, ‘জানেন, ইনি নাসিরুদ্দিন শাহের ভাইঝি’। ‘‘চাচা (নাসিরুদ্দিন) আমার বাবাকে মনে করে আজ আমার জন্য শুভেচ্ছা-বার্তা পাঠিয়েছেন’’, লাজুক স্বরে বললেন সায়রা।
দুপুরে আধ ঘণ্টাটাক সিপিএমের জেলা অফিস ও বিকেলে কিড স্ট্রিটের বাড়ি ছাড়া দীর্ঘ দগ্ধ দিনে পথেই ছিলেন সায়রা। প্রিয় বন্ধু রচনা জৈন সিংহ, কমরেড তথা পারিবারিক বন্ধু দাউদ সুভাসি, কমরেড রাজেন্দ্র প্রসাদ ছোট গাড়িতে তাঁর সঙ্গী। কংগ্রেস প্রার্থী কামরুজ্জামান চৌধুরীর গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। বাড়ির কাছে জটলা সায়রার গাড়ি ঘিরে ধরলেও বিশেষ আমল দিলেন না। ইলিয়ট রোডের কাছে সৈফি হল স্কুলে তাঁর এজেন্ট রোহিতকে ব্লেড চালিয়ে ‘আক্রান্ত’ করার খবর পেয়েই সেখানে হাজির হন। লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে কেন্দ্রীয় বাহিনী বাম প্রার্থীকে জানিয়েছেন, কয়েক জন লোক বার বার যাতায়াত করছেন। শুনে কলকাতা পুলিশ বা নির্বাচন কমিশনের সেক্টর অফিসারকে বিষয়টি দেখতে বলেছেন সায়রা। সন্ধ্যায় বেনিয়াপুকুরে দলের কমরেডদের ইফতার-পর্বেও উপস্থিত বাম প্রার্থী।
মাঝে নানা প্রসঙ্গে আলাপচারিতায় নদিয়ার ধর্ষণ-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে বললেন, ‘‘আবার জঘন্য নারীবিদ্বেষী কথা, তা-ও নাবালিকার বিষয়ে। সুজেট জর্ডন পানশালায় যান, কী পোশাক পরেন, তা নিয়েও ওঁরা বলেছিলেন।’’ কিন্তু কী হবে ভোট-ফলে? সিপিএম কর্মীদের আশা, আগের থেকে ফল ভাল হবে! সায়রা তাঁর নিজের লেখা ‘শের’ শোনালেন, ‘অব হাওয়া হি করেঙ্গে রোশনি কা ফৈসলা, জিস দিয়ে মে জান রহেগি, ওয়হি দিয়া রহ জায়েগি!’ সেই স্বরে প্রতিকূলতার সামনে ‘দিয়া’ বা প্রদীপের নিষ্কম্প শিখার প্রত্যয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy