দরজা বন্ধে বাধা দিলেই ৫০০ টাকা জরিমানার নিয়ম আরও কড়া করছে কলকাতা মেট্রো। —ফাইল ছবি
মেট্রোয় ওঠার জন্য শেষ মুহূর্তে দু’দরজার মাঝে নিজের হাত ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। সেটাই কাল হয়েছিল সজল কাঞ্জিলালের। বন্ধ দরজায় হাত আটকানো সজলকে টেনে-হেঁচড়ে সুড়ঙ্গে নিয়ে ফেলেছিল চলন্ত মেট্রো। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই বৃদ্ধের। কী ভাবে, কেন ওই দুর্ঘটনা ঘটেছিল তা নিয়ে তদন্ত চলছে। উঠেছে নানা প্রশ্ন। তার মধ্যেই এ বার যাত্রী সুরক্ষায় কড়া পদক্ষেপ করছে কলকাতা মেট্রো। দরজা বন্ধের সময় যদি কোনও যাত্রী তাতে বাধা দেন, তা হলে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হবে। মেট্রো সূত্রে জানানো হয়েছে, এই নিয়ম আগে থেকেই ছিল। তবে কলকাতায় এত দিন তেমন ভাবে কার্যকর ছিল না। এ বার তা কড়া ভাবে মানা হবে বলেই মেট্রোর দাবি।
বিভিন্ন স্টেশনে প্রতি দিন একাধিক বার ছবিটা দেখা যায়। মেট্রো প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে বেরনোর ঠিক আগের মুহূর্তে যখন তার দরজা বন্ধ হচ্ছে, তখনই কোনও কোনও যাত্রী তাঁদের হাত, পা, শরীরের একটা অংশ, ব্যাগ, ছাতা— নানা কিছু দিয়েই ওই দরজার মাঝে বাধা তৈরি করেন। দরজায় লাগানো সেন্সরের কারণে তা খুলেও যায় ফের। আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসাবে ওই সেন্সর লাগানো থাকে দরজায়। কিন্তুযাত্রীদের একাংশ সেটাকেই বন্ধ হয়ে আসা দরজা খোলার ‘চাবি’ হিসাবে ব্যবহার করেন। এ বার তাতেই রাশ টানতে চাইছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
কোনও যাত্রীবন্ধ হতে যাওয়া দরজা খুলতে নিয়ম ভাঙছেন কি না, তা নজরে রাখবে স্টেশনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আরপিএফ। তা ছাড়াও স্টেশন ম্যানেজারের ঘর থেকেও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি চালানো হবে বলে মেট্রো সূত্রে জানানো হয়েছে। মেট্রো রেলের এক কর্তা বুধবার বলেন, ‘‘কলকাতা মেট্রো রেল বোর্ডের আওতায়। জরিমানার এই বিধান রেলের নিয়মের মধ্যেই রয়েছে। সেই নিয়ম এ বার কড়া হাতে মানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বিষয়টি নজরে রাখবে আরপিএফ।’’
পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশনে গত শনিবার দুই দরজার মাঝে হাত আটকা পড়ে শেষে মৃত্যু হয় বৃদ্ধ সজল কাঞ্জিলালের। সেই ঘটনার তদন্ত করছেন কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটি (মেট্রো সার্কল) জনককুমার গর্গ। একই সঙ্গে তদন্ত শুরু করেছে কলকাতা পুলিশও। এ দিন ওই এসি রেকটি পরীক্ষা করে দেখার কথা ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের। কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা প্রথমে শেক্সপিয়র সরণি থানায় যান। সেখান থেকে তদন্তকারী দলের সঙ্গে তাঁরা যান পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশনে। সেখান থেকে তাঁদের যাওয়ার কথা নোয়াপাড়া। ফরেন্সিক এবং ওই রেক পরীক্ষার জন্য মেট্রো কর্তৃপক্ষের সাহায্য চেয়েছে কলকাতা পুলিশ। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘মেধা’ সিরিজের ওই রেকটি এই মুহূর্তে রয়েছে নোয়াপাড়া কারসেডে। সেখানেই ফরেন্সিক পরীক্ষা করা হবে।
নোয়াপাড়া গিয়ে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা কী কী পরীক্ষা করে দেখবেন? সূত্রের খবর, তাঁরাএ দিন নোয়াপাড়া গিয়েওই এসি রেকটি ভাল করে পরীক্ষা করবেন। তার পর মোটরম্যান (চালক) এবং কনডাক্টিং মোটরম্যান (গার্ড)-এরকেবিন থেকে প্ল্যাটফর্মের কতটা দেখা যায়, তা দেখবেন। সেই সঙ্গে খতিয়ে দেখবেন রেকের দরজা খোলা-বন্ধের খুঁটিনাটি প্রযুক্তি। ওই রেকের প্রযুক্তি এবং সেই সঙ্গে বাস্তবে তা কতটা কার্যকর,সেটাও খতিয়ে দেখা হবে বলে সূত্রের খবর। মেধা সিরিজের ওই রেকের কেবিনে সিসিক্যামেরার মনিটর থাকে। যা দেখার দায়িত্ব মূলত গার্ডের। সেই মনিটরে চোখ রাখলে প্ল্যাটফর্মের কতটা দেখা যায় তা-ও দেখা হবে।
এ দিনই বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। সেখানে বলা হয়েছে, শনিবারের ওই দুর্ঘটনার বিষয়ে কারও কিছু জানা থাকলে বা কারও কাছে কোনও তথ্য থাকলে তা কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটি (মেট্রো সার্কল) জনককুমার গর্গকে ব্যক্তি ভাবে দেখা করে বা লিখিত ভাবে জানানো যাবে।অন্য দিকে, গত সোমবারই কলকাতা পুলিশের তরফে চিঠি দিয়ে মেট্রোর কাছে শনিবারের ঘটনার সিসিফুটেজ চাওয়া হয়। কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবরসেই ফুটেজ এখনও তাদের হাতে এসে পৌঁছয়নি। তদন্তকারীদের একাংশের অভিযোগ, ফুটেজ দিতে টালবাহানা করছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy