প্রতীকী ছবি।
কখনও বয়স বাড়িয়ে বাচ্চাদের নামে তৈরি করানো হচ্ছে ভুয়ো আধার কার্ড। পরে বলা হচ্ছে, অপুষ্টির কারণে সে ভাবে ওজন বাড়েনি, তাই এমন চেহারা। কখনও আবার বাচ্চাদের দলে যুক্ত করা হচ্ছে দু’-তিন জন বাবা-মা অথবা বাচ্চাদেরই পরিবারের কাউকে। যাতে আপাত ভাবে দেখলে মনে হয়, তারা পরিবারের সঙ্গে বেড়াতে যাচ্ছে! এই মুহূর্তে দেশ জুড়ে এমন ভাবেই নাবালক-নাবালিকা পাচার চলছে বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার ভোরে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে খবর পেয়ে এমনই একটি পাচারের ছক বানচাল করেছে আরপিএফ। উদ্ধার করা হয়েছে ১৭ জন কিশোরকে। ধরা পড়েছে তাদের সঙ্গে থাকা তিন যুবক।
সূত্রের খবর, উদ্ধার হওয়া কিশোরদের বয়স ১২ থেকে ১৭-র মধ্যে। সোমবার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে রেলরক্ষী বাহিনীর কাছে খবর আসে, বিহারের কাটিহার থেকে কয়েক জন কিশোরকে পাচারের চেষ্টা করা হচ্ছে। জানা যায়, রাধিকাপুর এক্সপ্রেসে তাদের কলকাতায় নিয়ে আসা হবে। কাটিহারের কাছে বারসোই স্টেশন থেকে তারা ট্রেনে উঠবে। খবর পাওয়া মাত্র তৎপর হয় আরপিএফ। প্রথমে মালদহ থেকে সাধারণ পোশাকে তারা ওই কিশোরদের উপরে নজরদারি চালাবে বলে ঠিক হয়। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। শেষে নিউ ফরাক্কা থেকে আরপিএফ কর্মীরা চেষ্টা করেন।
তখনই ট্রেনের এস-১ কামরায় খোঁজ মেলে ওই কিশোরদের। আরপিএফ কর্মীরা কথা বলে জানতে পারেন, কলকাতা স্টেশনে নেমে চিৎপুরের দিকে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। সেখানে গিয়ে কয়েকটি দলের সঙ্গে ভাগ হয়ে কেউ পরিচারকের কাজে যোগ দেবে, কেউ যুক্ত হবে নির্মাণকাজে। কারও আবার ভিন্ রাজ্যে জরির কাজে যোগ দিতে যাওয়ার কথা। ওই কিশোরদের সঙ্গেই কথা বলে খোঁজ মেলে তিন যুবকের। কিশোরেরা জানায়, ২২-২৪ বছর বয়সি ওই যুবকেরা তাদের কাজ পাইয়ে দিতে নিয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার ভোর পাঁচটা ২৫ মিনিটে রাধিকাপুর এক্সপ্রেস কলকাতা স্টেশনে পৌঁছতেই তিন যুবক-সহ আটক করা হয় ওই কিশোরদের। সকলকে নিয়ে যাওয়া হয় আরপিএফ অফিসে। সেখানে আসে রেল পুলিশ, শ্রম দফতর এবং শিশু অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। উদ্ধার হওয়া কিশোরদের শিশুকল্যাণ কমিটির সামনে হাজির করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখান থেকে তাদের হোমে পাঠানো হতে পারে।
তদন্তকারী আরপিএফ অফিসার রুহি শর্মা বলেন, ‘‘এমন পাচার রোধের উদ্দেশ্যে কাজ করা, শিশু অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে সম্প্রতি মউ সাক্ষর হয়েছে আরপিএফের। সেই সূত্রে রেলপথে পাচার রুখতে কড়াকড়ি করা হয়েছে।’’ ওই সংগঠনের তরফে অরিজিৎ অধিকারী বলেন, ‘‘২০১৩ সালের ক্রিমিনাল অ্যামেন্ডমেন্ট আইনে স্পষ্ট বলা আছে, লাভের জন্য বাচ্চাদের অন্যত্র নিয়ে যাওয়া পাচারের মধ্যে পড়ে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭০ ধারায় কড়া শাস্তির বিধানও রয়েছে। তার পরেও আইনরক্ষকদের একাংশের অসচেতনতায় ভুয়ো আধার কার্ড বানিয়ে বা পরিজনকে সঙ্গে পাঠিয়ে রমরমিয়ে পাচার চলছে।’’
ওই সংগঠনের অধিকর্তা মণীশ শর্মার দাবি, ‘‘পশ্চিমবঙ্গকে এমন পাচার কারবারের অন্যতম উৎসস্থল ধরা হয়। পরিবারকে প্রথমে কয়েক হাজার টাকা দিয়ে বাচ্চাদের তাদের সঙ্গে পাঠিয়ে দিতে রাজি করায় পাচারকারীরা। পরে তারা বাচ্চা পিছু হাজার হাজার টাকা কামায়। অন্য দিকে, কাজের নামে ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা নিদারুণ অত্যাচার চলে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy