Advertisement
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
R G Kar Hospital Vandalized

আরজি করে ভাঙচুরের ঘটনার তদন্ত কোন পর্যায়ে? কী উদ্দেশ্যেই বা হামলা? প্রশ্নে পুলিশের ভূমিকা

কলকাতা পুলিশের কোনও কর্তাই এই প্রসঙ্গে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি। পুলিশ সূত্রে শুধু দাবি করা হয়েছে, চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ থাকায় কিছুটা ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল।

তছনছ: ১৪ অগস্ট মাঝরাতে হামলার পরে এমনই অবস্থা হয়েছিল আর জি করের জরুরি বিভাগের।

তছনছ: ১৪ অগস্ট মাঝরাতে হামলার পরে এমনই অবস্থা হয়েছিল আর জি করের জরুরি বিভাগের। ফাইল চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস, চন্দন বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:৪৩
Share: Save:

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনার তদন্তে বহু প্রশ্নের উত্তর মেলেনি এখনও। ঘটনার পরে ২৫ দিনের বেশি পেরিয়ে গেলেও জানা যায়নি, তাতে জড়িত এক জনই, না কি একাধিক? এই পরিস্থিতিতে কবে সত্যিটা জানা যাবে, সেই প্রশ্নে ক্ষোভ এবং হতাশা বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, ১৪ অগস্ট রাতে আর জি করে ঢুকে ভাঙচুরের ঘটনার তদন্তই বা কোন পর্যায়ে? দেখা যাচ্ছে, বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতারির খবর ছাড়া এ বিষয়ে আর কিছুই জানায়নি পুলিশ। এমনকি, সেই রাতে কী উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়েছিল, স্পষ্ট করা হয়নি তা-ও। এই পরিস্থিতিতে অনেকেরই প্রশ্ন, ‘‘তবে কি তথ্যপ্রমাণ লোপাটের বড়সড় উদ্দেশ্য নিয়েই হামলা হয়েছিল সে রাতে?’’

কলকাতা পুলিশের কোনও কর্তাই এই প্রসঙ্গে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি। পুলিশ সূত্রে শুধু দাবি করা হয়েছে, চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ থাকায় কিছুটা ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। সেই ক্ষোভ আর রাগেই হাসপাতালকে নিশানা করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে ‘ভুয়ো খবর’ প্রচার হওয়ার জেরেও নাকি রাগ তৈরি হয়েছিল পুলিশের উপরে। তাই হাসপাতালের পাশাপাশি নিশানা করা হয়েছিল উর্দিধারীদেরও। নগরপাল বিনীত গোয়েলও হামলার রাতে হাসপাতালে পৌঁছে মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘আজ যা হয়েছে, তার দায় ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছেন যাঁরা, তাঁরা নেবেন কি?’’ এমনকি, সরাসরি সংবাদমাধ্যমকেও নিশানা করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। যদিও ওই হামলার পিছনে চিকিৎসা না পাওয়ার ক্ষোভ এবং পুলিশের উপরে পুঞ্জীভূত রাগই একমাত্র কারণ, এমন তত্ত্ব মানতে নারাজ অনেকেই। তাঁদের যুক্তি, আর জি করে হামলা হয়েছিল ১৪ অগস্ট রাতে। অর্থাৎ, খুন এবং ধর্ষণের খবর প্রকাশ্যে আসার পাঁচ দিনের মাথায়। পাঁচ দিন চিকিৎসা পরিষেবা না পাওয়াতেই যদি এত রাগ তৈরি হয়ে থাকে, তা হলে তো সেই রাগ আরও অনেকটা বাড়ার কথা পরবর্তী এক মাসে। এই সময়ের মধ্যে তা হলে এমন হামলার ঘটনা আরও ঘটল না কেন? প্রসঙ্গত, ওই ঘটনায় ধৃতদের ৩০ জনকে শুক্রবার শিয়ালদহ আদালতে তোলা হলে তাঁদের ১২ দিনের জেল হেফাজত হয়েছে।

পুলিশের উপরে রাগের তত্ত্ব নিয়ে অনেকের যুক্তি, তা হলে তো হাসপাতালের বদলে পুলিশ ব্যারাক, থানা বা লালবাজারকে নিশানা করার কথা! এই প্রসঙ্গে এক সাধারণ নাগরিকের মন্তব্য, ‘‘পুলিশের প্রকাশ করা ভিডিয়োতেই তো আর জি করে ঢুকে জরুরি বিভাগে ভাঙচুর চালাতে দেখা গিয়েছে। এমনও শোনা গিয়েছে, হামলাকারীদের কেউ কেউ বলছেন, ‘সেমিনার রুমের (যা খুন এবং ধর্ষণের ঘটনাস্থল বলে এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে) দিকে চল।’ তা হলে পুলিশকে নিশানা করার এই তত্ত্ব খাটে কি?’’ ফলে, ওই হামলার উদ্দেশ্য কী ছিল, সেটাই প্রধান প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। পুলিশের তরফে সরকারি ভাবে কিছু না জানানো হলেও ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় পুলিশকর্তারা দাবি করেছিলেন, সংগঠিত হামলার চরিত্র দেখা গিয়েছিল সেই রাতে। এক পুলিশকর্তা মন্তব্য করেছিলেন, মাওবাদী আন্দোলনের সময়ে এমন বেশ কিছু ঘটনা প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাঁর। এর পিছনে কোন মাথা ‘প্রধান’ হিসাবে কলকাঠি নেড়েছে, তা-ও খুঁজে বার করার চেষ্টা হচ্ছে বলে দাবি করেছিলেন তিনি। এর জন্য সে রাতে ওই জায়গায় থাকা নেতাদের কল ডিটেল রেকর্ড খতিয়ে দেখার পরিকল্পনাও হয়েছে বলে দাবি ছিল তাঁর। কিন্তু এক মাস পেরোতে চললেও ১৪ অগস্টের ঘটনার কোনও সুনির্দিষ্ট তদন্তের দিশা পুলিশের তরফে দেখানো হয়নি।

উল্টে খোঁজ করে জানা গিয়েছে, ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত গ্রেফতারির সংখ্যা পঞ্চাশও পেরোয়নি। যাঁরা ধরা পড়েছেন, তাঁদের কেউই বড় কোনও সংগঠক নন। ধৃতদের মধ্যে এক জন বিধান সরণির কার্ষ্ণিরাজ গুপ্ত। তাঁর পরিবারের দাবি, কার্ষ্ণিরাজ
অতীতে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে ব্যবসা করেন। সেই রাতে তিনি এবং তাঁর দুই সঙ্গী, শান্তনু ঘোষ ও অভিজিৎ সাউ ভাঙচুরের ঘটনার পরে আর জি করের দিকে গিয়েছিলেন। কার্ষ্ণিরাজের মা রিঙ্কু গুপ্তের দাবি, ‘‘বাড়ির সিসি
ক্যামেরার ফুটেজ আছে, ওরা রাত ১২টা ৫ থেকে ১টা ৭ পর্যন্ত বাড়িতেই ছিল। তার পরে ওখানে গিয়েছে। অথচ, এই ফুটেজ পুলিশ দেখতে তো চায়ইনি, জামিনও দেয়নি। উল্টে নতুন নতুন মামলায় জড়ানো হচ্ছে। আমরাও পাল্টা মামলা করার পরিকল্পনা করছি।’’

একই রকম দাবি মানিকতলার সৌরভ দে এবং সৌম্যদীপ মাহিষের পরিবারের। সৌরভের পিসি বাসনা দে বলেন, ‘‘এত দিনেও পুলিশ জানতে পারল না, কী কারণে হামলা হল?’’ সৌম্যদীপের মা রাখি মাহিষ
বলেন, ‘‘সে রাতে তো হাজার হাজার লোক আর জি করে গিয়েছিলেন। পুলিশ কেন হামলাকারী হিসাবে বেছে বেছে কয়েক জনকে ধরল?’’
প্রসঙ্গত, এ বিষয়ে পুলিশ দাবি করেছিল, ঘটনার রাতে আর জি করে পাঁচ-সাত হাজার লোক হামলা করেছে। সমাজমাধ্যমে পুলিশের এই পোস্ট ঘিরে বিতর্কও হয়। অনেকেই জানতে চান, যেখানে কয়েকশো লোকের জমায়েতের খবরও থাকে পুলিশের কাছে, সেখানে পাঁচ হাজার লোক হামলা করল, আর পুলিশ আগাম জানল না? পাঁচ হাজার লোকের হামলা, অথচ গ্রেফতারির সংখ্যা পঞ্চাশও পেরোয়নি কেন, এই প্রশ্নও উঠেছে। বহু প্রশ্নের মতো এ বিষয়েও উত্তর নেই লালবাজারের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

R G Kar Medical College and Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE