Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
RG Kar Medical Hospital

প্রাণহানির পরেও পথের জট ছাড়ে না আর জি করে

স্বামীর মৃত্যুর ঠিক পাঁচ মাস এক দিনের মাথায় বাসের রেষারেষির জেরে চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হল এক মহিলার।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি। —ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২১ ০৭:৩৯
Share: Save:

স্বামীর মৃত্যুর ঠিক পাঁচ মাস এক দিনের মাথায় বাসের রেষারেষির জেরে চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হল এক মহিলার। সদ্য অভিভাবকহীন তাঁদের বছর বারোর মেয়ে প্রশ্ন করতে থাকল, ‘‘বাবার মতো মা-ও আমায় ছেড়ে চলে গেল কেন?’’ অন্য দিকে, এমন ঘটনার পরেও হুঁশ ফিরল না কারওরই। মঙ্গলবার সন্ধ্যার মতোই আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনের রাস্তায় বুধবার দিনভর চলল বেপরোয়া রাস্তা পারাপার। বন্ধ হল না বাসের রেষারেষিও। অভিযোগ, নিয়ম-ভঙ্গের দৃশ্য দেখেও কার্যত দর্শকের ভূমিকায় পুলিশ!

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কাজে যোগ দিতে দমদম রোডের মিত্রবাগান এলাকার বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আয়ার কাজ করা বছর আটত্রিশের মুন্নি সরকার। বাসে করে আর জি কর সেতু পর্যন্ত পৌঁছে কলকাতা স্টেশনের দিক থেকে রাস্তা পার হতে গিয়েই বিপত্তি। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, একই রুটের দু’টি বাস রেষারেষি করতে করতে আসছিল। তার মধ্যে একটি বাস পিষে দেয় মুন্নিদেবীকে। স্থানীয়েরাই বাসটিকে আটক করে চালককে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

মুন্নিদেবীর মৃতদেহ আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যেতেই সেখানকার কর্মীদের একাং‌শ রাস্তায় বেরিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁদের দাবি, ঘটনার সময়ে হাসপাতালের বাইরের রাস্তায় কোনও পুলিশকর্মী ছিলেন না। টালা সেতু সংস্কারের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে আর জি কর রোডের উপরে চাপ বেড়েছে। তা সত্ত্বেও মানুষের রাস্তা পারাপারের কোনও বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়নি। রাস্তার ওই অংশে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণেরও কোনও ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ। হাসপাতালের এক কর্মীর দাবি, ‘‘হাসপাতাল থেকে পুলিশকে বার বার বলেও ওই রাস্তায় কোনও হাম্পের ব্যবস্থা করা যায়নি। ফলে বন্ধ হয়নি ওই রাস্তার ঝুঁকির যাতায়াত।’’

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, ক্যানাল ইস্ট রোডে যাওয়ার এবং ক্যানাল ওয়েস্ট রোড থেকে ওই রাস্তায় আসার গাড়ির প্রবল চাপ। বেলা ১২টায় গাড়ির লম্বা লাইন এক দিকে বেলগাছিয়া সেতু পার করে, অন্য দিকে শ্যামবাজার মোড়ের কাছে চলে গিয়েছে। সব চেয়ে বিপজ্জনক অবস্থা কলকাতা স্টেশন থেকে আর জি কর সেতুর মুখে বেরোনোর রাস্তার মোড়ে। ওই অংশেই আবার রয়েছে আর জি কর সেতু থেকে গাড়ি বেরোনোর পথ। কয়েক জন সিভিক ভলান্টিয়ার যান নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালালেও ঘটনাস্থলে কোনও ট্র্যাফিক পুলিশ আধিকারিককে দেখা যায়নি। দেখা গেল, স্রেফ হাত তুলে ইশারা করার ভরসায় রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করছেন অনেকে। তাঁদেরই এক জনকে বাঁচাতে গিয়ে জোরে ব্রেক কষতে হল এক ট্যাক্সিচালককে। হঠাৎ দাঁড়িয়ে যাওয়ায় ট্যাক্সিটির পিছনে সজোরে ধাক্কা মারল আর একটি গাড়ি। যিনি রাস্তা পার হলেন তাঁর মন্তব্য, ‘‘স্বামীর জন্য ওষুধ কিনতে বেরিয়েছি। কত ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকব?’’ কলকাতা স্টেশনের রাস্তা দিয়ে আবার একের পর এক হেলমেটহীন মোটরবাইকচালককে বেরিয়ে যেতে দেখা গেল পুলিশের সামনে দিয়েই। কর্তব্যরত এক সিভিক ভলান্টিয়ার শুধু বললেন, ‘‘আমরা তো ধরার চেষ্টা করছি। না শুনলে কী করব?’’

মিত্রবাগান এলাকায় টালির ঘরে ভাড়ায় থাকতেন মুন্নিদেবী ও তাঁর বছর বারোর মেয়ে লক্ষ্মী। ঘরের দেওয়ালে ঝুলছে মুন্নিদেবীর মৃত স্বামীর ছবি। নীচে লেখা তাঁর মৃত্যুর তারিখ। এ দিন সেই ছবির নীচে বসেই লক্ষ্মী বলে, ‘‘মা রাতের খাবার করে রেখে বেরিয়েছিল। আর ফিরল না কেন?’’ তার এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না আপাতত তাকে ঘিরে থাকা প্রতিবেশীরা। সেই সঙ্গেই তাঁদের চিন্তা যাচ্ছে না। অভিভাবকহীন মেয়েটার ভবিষ্যৎ কী হবে? সদ্য মা-হারা মেয়ে অবশ্য বলে, ‘‘আমি পড়াশোনা করব, নাচ শিখব, এখানেই থাকব।
বড় হয়ে স্কুলে ইংরেজি পড়াব। মা-ও সেটাই চাইত।’’

অন্য বিষয়গুলি:

RG Kar Medical Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy