Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

অবরোধে থমকে বাইপাস, যানজটে ভোগান্তি

ইএম বাইপাস দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে গিয়ে কেমন ভোগান্তি হয়েছে, তা শুনিয়েছেন এক বৃদ্ধ, ৮৫ বছরের প্রভাত রোহাতগি। তিনি জানান, সায়েন্স সিটি ছাড়িয়ে আরও একটু উত্তরের দিকে এগোতেই কমে এসেছিল গাড়ির গতি।

হয়রানি: অবরুদ্ধ ই এম বাইপাস।

হয়রানি: অবরুদ্ধ ই এম বাইপাস।

সুনন্দ ঘোষ ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:১৭
Share: Save:

বাসের ধাক্কায় দুই তরুণের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ হল রাজপথ। যার জেরে খেসারত দিতে হল বহু মানুষকে। কেউ যানজটে আটকে বিমান ধরতে পারলেন না, কেউ বা সময় মতো পৌঁছতে পারলেন না রেল স্টেশনে। কেউ আবার অ্যাপ-ক্যাবে উঠে ঘুরপথে দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছে গুণাগার দিলেন প্রায় তিন গুণ ভাড়া!

ইএম বাইপাস দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে গিয়ে কেমন ভোগান্তি হয়েছে, তা শুনিয়েছেন এক বৃদ্ধ, ৮৫ বছরের প্রভাত রোহাতগি। তিনি জানান, সায়েন্স সিটি ছাড়িয়ে আরও একটু উত্তরের দিকে এগোতেই কমে এসেছিল গাড়ির গতি। শনিবার তখন বেলা প্রায় সাড়ে ১১টা। দুপুর দেড়টায় ছাড়বে দিল্লির উড়ান। ৮০ বছরের স্ত্রী শশিপ্রভাকে নিয়ে বালিগঞ্জের বাড়ি থেকে হিসেব করেই রওনা হয়েছিলেন প্রভাতবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘১২টার মধ্যে বিমানবন্দরে পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল। রবিবার সকালে দিল্লিতে এক আত্মীয়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান আছে।’’

কিন্তু গাড়ি মেট্রোপলিটন মোড়ের আগেই দাঁড়িয়ে যায়। সামনে, পাশে সার সার গাড়ি। এক চুলও নড়ছে না। গাড়ি থেকে মুখ বাড়িয়ে কথা বলে বৃদ্ধ দম্পতি জানার চেষ্টা করেন, ঠিক কী হয়েছে? শোনেন, কাছে কোথাও দুর্ঘটনা ঘটেছে। গাড়ি জ্বলছে, রাস্তা অবরুদ্ধ। তা হলে উপায়?

পাশের গাড়িতে থাকা এক ব্যক্তি বৃদ্ধকে জানান, তিনিও উড়ান ধরতে যাচ্ছেন। মেট্রোপলিটন থেকে বাঁ দিকে নেমে গিয়ে ভিতর দিয়ে এগিয়ে গেলে সুবিধা হবে। তিনি যাচ্ছেন ওই পথে। অগত্যা গাড়ি নিয়ে সেই ভদ্রলোকের গাড়ির পিছু নেন প্রভাতবাবু। বিমানবন্দরে যখন পৌঁছলেন, তত ক্ষণে উড়ান উড়ে গিয়েছে। প্রভাতবাবু জানান, অলিগলি পেরোতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন তাঁর গাড়িচালক। শেষে কোনও রকমে বেলেঘাটা মেন রোডে পৌঁছে আবার যানজটে পড়েন। ফলে আরও দেরি হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, ইএম বাইপাস অবরুদ্ধ হওয়ায় সল্টলেক এবং কলকাতার অন্যান্য রাস্তাতেও যানজট হয়। মা এবং এ জে সি বসু রোড উড়ালপুলেও যান চলাচল ব্যাহত হয়।

উপায় না দেখে মালপত্র নিয়ে পায়ে হেঁটেই যাত্রা। শনিবার।

চিংড়িঘাটার দুর্ঘটনার জেরে অনেক যাত্রীই যে আটকে পড়েছেন, তা জানতে পেরে প্রতিটি বিমান সংস্থাই দুপুরের পরের উড়ানগুলি কিছুটা করে দেরিতে ছাড়ে। দেড়টার যে উড়ানে প্রভাতবাবুর দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল, সেটি দুটোয় ছাড়ে। তাতেও অবশ্য লাভ হয়নি তাঁর। কারণ, তিনিও পৌঁছন ওই দুটো নাগাদ। উড়ান সংস্থা অবশ্য ২টো ৫০ মিনিটের পরের উড়ানেই অশীতিপর ওই দম্পতিকে দিল্লি পাঠিয়ে দেয়, আগের টিকিটেই।

সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা অশোক সারদা এ দিন দুপুরে পরিবার নিয়ে দিল্লি যেতে গিয়ে একই সমস্যায় পড়েন। তিনি প্রভাতবাবুর মতো ‘গাইড’ পাননি। তাই তাঁকে চিংড়িঘাটার মুখে আড়াই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বিমানবন্দরে যখন পৌঁছন, ততক্ষণে উড়ান ছেড়ে দিয়েছে। এ দিন অন্য অনেকের মতো অশোকবাবুকেও অন্য উড়ানে দিল্লি যাওয়ার বন্দোবস্ত করে দেওয়া হয়।

কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, অবরোধের জেরে আটকে পড়া যাত্রীদের জন্য এ দিন দুপুরের পরে বিভিন্ন সংস্থার প্রায় ৯টি উড়ান গড়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট দেরিতে ছাড়ে। তাই দেরিতে পৌঁছেও অনেকে উড়ান ধরতে পেরেছেন। আবার প্রভাতবাবুর মতো অনেকের আসতে এতটাই দেরি হয়ে যায় যে, উড়ান দেরিতে ছাড়ার সুযোগও তাঁরা নিতে পারেননি। তবে উড়ান ‘মিস’ করা অধিকাংশ যাত্রীকেই এ দিন অতিরিক্ত টাকা না নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে বিমান সংস্থাগুলির তরফে দাবি করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি বিমানের পাইলট ও বিমানসেবিকারা নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে এসে পৌঁছনোর ফলেও এ দিন কিছু উড়ান দেরিতে ছাড়ে।

দুপুরে সল্টলেক থেকে ক্যাব ভাড়া করেছিলেন এক ব্যক্তি। ধর্মতলা পৌঁছতে অন্য দিন তাঁর সময় লাগে ৪৫ মিনিট। এ দিন যানজটে আটকে এবং তার পরে ঘুরপথে গন্তব্যে পৌঁছতে তাঁর লেগেছে তিন ঘণ্টা। অন্যান্য দিন ২০০ টাকার মতো ভা়ড়া লাগে। এ দিন তাঁকে দিতে হয়েছে প্রায় ৬০০ টাকা!

বিমানযাত্রীদের পাশাপাশি এ দিন সমস্যায় পড়েন ট্রেনযাত্রীরাও। চিংড়িঘাটার ওই দুর্ঘটনার পরে বাইপাস অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় অনেকেই সময়মতো হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশনে ঠিক সময়ে পৌঁছতে পারেননি। নিত্যযাত্রীদের পাশাপাশি দূরপাল্লার কিছু যাত্রীও এ দিন ট্রেন ধরতে পারেননি বলে জানা গিয়েছে।

ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy