দুর্ভোগ: গোড়ালি ডোবা জলে ভাসছে শিশু বিভাগের সামনের রাস্তা। সোমবার, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: সুমন বল্লভ
সমস্যার বহিঃপ্রকাশ হওয়া মাত্রই রোগ চিহ্নিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টা পরেও নিরাময় হল কই? কলকাতা পুরসভার পাইপ ফেটে যাওয়ায় আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরের জলমগ্ন অবস্থাই তুলে দিচ্ছে সেই প্রশ্ন। যার জেরে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসে জমা জলের মধ্যে ঝুঁকির যাতায়াতে দুর্ভোগের শিকার হলেন রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা।
সোমবার পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম জানান, আর জি কর সংলগ্ন পাইপ ফেটে এর আগেও বিপত্তি ঘটেছিল। সেই সময়ে অস্থায়ী ভাবে সমস্যার সমাধান করা হয়েছিল। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি, তাতে স্থায়ী সমাধান জরুরি। তার জন্য আগামী শনি ও রবিবার, টালা পাম্পিং স্টেশন থেকে জল সরবরাহ পরিষেবা বন্ধ রাখা হবে।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরের বাইরে নীলমণি মিত্র রো-এ ৬০ ইঞ্চি ব্যাসের একটি পাইপ রবিবার আচমকা ফেটে যায়। কিছু ক্ষণের মধ্যে তা আর জি কর চত্বরকে ভাসিয়ে দেয়। পাইপ ফাটার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পাম্পের সাহায্যে জমা জল খালে ফেলার ব্যবস্থা করেন পুরসভার আধিকারিকেরা। কিন্তু এ দিন সেই পাম্পও বিকল হয়ে যায়। তবে বিপত্তির দিনে বহির্বিভাগ না থাকায় রোগীদের দুর্ভোগ মাত্রাছাড়া হয়নি।
আরও পড়ুন: ঝিমিয়ে পড়া স্কুল লকডাউনে আরও বেহাল
কিন্তু পাম্প বিকল হয়ে যাওয়ায় এ দিন সকালে স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগ, কার্ডিয়োলজি, সার্জারি, অ্যানাটমি, ন্যায্য মূল্যের দোকান, প্রশাসনিক ভবন, কলেজ বিল্ডিং যাওয়ার রাস্তায় গোড়ালির উপরে জল জমে যায়। সব চেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা হয় স্ত্রীরোগ এবং সদ্যোজাতদের চিকিৎসা ভবন সংলগ্ন এলাকায়। জমা জলের মধ্যেই সন্তানসম্ভবা মহিলা ও সদ্যোজাতদের নিয়ে পারাপার করতে গিয়ে যাতে বিপদ না হয়, তার জন্য অনবরত মাইকে ঘোষণা করতে থাকেন মেটারনিটি বিল্ডিংয়ের কর্মীরা। রাজচন্দ্রপুরের বাসিন্দা সঞ্জয় সাহার স্ত্রী সুস্মিতা সাহা ওই ভবনেই চিকিৎসাধীন। এ দিন সঞ্জয় বলেন, ‘‘জমা জলের মধ্যেই অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ও সদ্যোজাতদের নিয়ে যেতে হচ্ছে। দু’দিন ধরে এই অবস্থা চলছে। রোগীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে কিছু করা গেল না! এ ভাবেই কি রোগীদের নিয়ে পারাপার করতে হবে?’’
সার্জারি বিভাগে গত ২২ দিন ধরে চিকিৎসা চলছে বেলেঘাটার বাসিন্দা আব্দুল গফ্ফরের। তাঁর স্ত্রী আমিনা বিবি বললেন, ‘‘ঠান্ডার মধ্যেই নোংরা জল ঠেলে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এত দুর্গন্ধ যে, থাকা যাচ্ছে না।’’ এ দিন হাসপাতাল চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, জলের মধ্যেই স্ট্রেচার ঠেলে রোগীকে হাসপাতালের এক ভবন থেকে আর এক ভবনে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁদের পরিজনেরা। তারই মধ্যে অনবরত গাড়ির যাতায়াতে সেই পারাপার আরও কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে।
এ দিনের বিপত্তি প্রসঙ্গে স্থানীয় বরো কোঅর্ডিনেটর তরুণ সাহা বললেন, ‘‘পোর্টেবল পাম্প বসিয়ে জল বার করার সময়ে একটি পাম্প বিকল হয়ে পড়ে। তাতেই হাসপাতাল-সহ কয়েকটি রাস্তায় জল জমে যায়। তার পরে নতুন পাম্প বসিয়ে জল বার করে দেওয়া হয়েছে।’’
পুরসভার জল সরবরাহ দফতরের এক আধিকারিক জানান, পাইপ ফেটে গেলেও তার জন্য অবশ্য এলাকায় জল সরবরাহ বন্ধ হয়নি। পরিষেবা চালু রেখেই পাইপ মেরামতির কাজ করা হয়েছে। তবে ওই পাইপ ফাটার কারণেই হাসপাতালের বিস্তীর্ণ অংশে জল জমেছে কি না, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন বলে জানিয়েছেন পুরসভার ওই আধিকারিক।
আরও পড়ুন: স্মার্ট কার্ডে বিজ্ঞাপনের চুক্তি মেট্রোর
আর জি করের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রবীর মুখোপাধ্যয় জানান, পুরসভাকে চিঠি দিয়ে সমস্যার কথা জানানো হলে দুপুরের মধ্যে মেরামতির কাজ শুরু হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। বিকেলের পরে হাসপাতাল চত্বরে কোথাও জল জমে নেই বলে দাবি করেছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy