Advertisement
২১ ডিসেম্বর ২০২৪

ভোটের দেওয়াল মুছে বাসিন্দারা সাজালেন পাড়া

পুজোর আগে পাড়ার সৌন্দর্য ফেরাতে ভোটের দেওয়াল লিখন মুছে এ ভাবেই সেখানে ছবি আঁকা শুরু করেছেন যাদবপুর সন্ধ্যাবাজার সংলগ্ন নস্করপাড়ার বাসিন্দারা। খুদেদের নিয়ে প্রথমে ছবি আঁকার কাজ শুরু করেন ওই পাড়ার মহিলারাই।

 আঁকিবুঁকি: পাড়ার দেওয়ালে আঁকছে কমবয়সিরা। ছবি: সুদীপ ঘোষ

আঁকিবুঁকি: পাড়ার দেওয়ালে আঁকছে কমবয়সিরা। ছবি: সুদীপ ঘোষ

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৪০
Share: Save:

কাস্তে-হাতুড়ি-তারা ঢাকা পড়েছে নারীমূর্তির আদলে আঁকা গাছের ছবিতে। জোড়াফুল মুছে তুলিতে ধরা পড়েছে রাজস্থানের জলকষ্টের চিত্র। আরও একটি দেওয়ালের ভোট প্রচার আবার ঢাকা পড়েছে প্লাস্টিক ব্যবহারের খারাপ দিক নিয়ে আঁকা ছবিতে।

পুজোর আগে পাড়ার সৌন্দর্য ফেরাতে ভোটের দেওয়াল লিখন মুছে এ ভাবেই সেখানে ছবি আঁকা শুরু করেছেন যাদবপুর সন্ধ্যাবাজার সংলগ্ন নস্করপাড়ার বাসিন্দারা। খুদেদের নিয়ে প্রথমে ছবি আঁকার কাজ শুরু করেন ওই পাড়ার মহিলারাই। ইতিমধ্যেই এ রকম চারটি দেওয়ালে আঁকা শেষ হয়েছে। আরও কয়েকটিতেও পুজোর আগেই আঁকা শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। তাঁরা বলছেন, ‘‘ভোটের ফল প্রকাশের পরে যাঁদের দেওয়াল লিখন মুছে দেওয়ার কথা ছিল, তাঁরা দেননি। তাই আমরাই সে সব মুছে বিভিন্ন ছবি আঁকা শুরু করেছি। পুজোর সময়ে ভোট প্রচারের দেওয়াল দেখতে মোটেও ভাল লাগে না।’’

ওই নস্করপাড়া রোডেই যাদবপুর সম্মিলনী ক্লাবের ৬০ বছরের পুরনো পুজো হচ্ছে। মণ্ডপের সামনের প্রায় ১০ ফুট চওড়া রাস্তার দু’দিকের দেওয়ালকেই মূলত ছবি আঁকার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। পাড়ায় ঢুকতেই একটি পাম্প-ঘরের দেওয়ালে আঁকা হয়েছে রাজস্থানের জলকষ্টের ছবি। ছবি আঁকার অন্যতম উদ্যোক্তা রীতা পাল বললেন, ‘‘এই সময়ের সব থেকে বড় সমস্যা জল নিয়েই। ছবিতে আমরা দেখানোর চেষ্টা করেছি, কী ভাবে রাজস্থানের এক গ্রামের মেয়ের গোটা দিনটাই জলের ব্যবস্থা করতে কেটে যায়।’’ কয়েক পা এগিয়েই আর একটি দেওয়ালে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নারীমূর্তির আদলে আঁকা গাছের ছবি। রীতাদেবীদের বক্তব্য, গাছই প্রাণ। সেই গাছেই মাতৃরূপ ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘দুর্গাপুজোর সঙ্গে এই ছবি সব থেকে ভাল মেলে। এ রকমই প্লাস্টিকের সমস্যা নিয়ে ছবি এঁকেছি আমরা। কাউকে জলের নীচে ডুবিয়ে রাখলে কী অবস্থা হতে পারে, তা দেখিয়ে প্লাস্টিকের কারণে সামুদ্রিক প্রাণীদের সমস্যাও দেখানোর চেষ্টা হয়েছে।’’ জোরকদমে কাজ চললেও বৃষ্টির জন্য পুজোর আগে সব দেওয়ালে ছবি আঁকা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তা যাচ্ছে না উদ্যোক্তাদের। দীপঙ্কর ঘোষ নামে এক উদ্যোক্তা বললেন, ‘‘হাতে খুব কম সময়। বৃষ্টির জন্য কাজ প্রতিদিন পিছিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত শেষ করতে হবে।’’

কিন্তু ভোট প্রচারের দেওয়াল লিখন তো রাজনৈতিক দলগুলিরই মোছার কথা! গত লোকসভা নির্বাচনে যাদবপুরের ওই কেন্দ্র থেকে ভোটে জিতেছেন তৃণমূলের মিমি চক্রবর্তী। তাঁকে ফোন করা হলে তিনি তা ধরেননি। এমনকি মেসেজেরও উত্তর দেননি। এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ১১ নম্বর বরোর অন্তর্গত। সেখানকার তৃণমূলের বরো চেয়ারম্যান তারকেশ্বর চক্রবর্তী অবশ্য বললেন, ‘‘এ রকম তো হওয়ার কথা নয়। সব জায়গায় আমরাই দেওয়াল মুছেছি। এখানে হয়নি কেন দেখছি। তবে এই দেওয়াল আঁকার উদ্যোগটা খুব ভাল।’’ মিমির বিরুদ্ধে ভোটে লড়েছিলেন সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তিনি বিষয়টি শুনে বললেন, ‘‘ঠিক করেছে। দেওয়াল তো রাজনৈতিক দলগুলিরই মোছার কথা। এর পরেও হয়তো আমাদের শিক্ষা হবে না।’’

ওই পাড়া অবশ্য বলছে, রাজনৈতিক বিতর্ক নয়, পাড়ার সৌন্দর্য ফেরানোই তাঁদের মূল লক্ষ্য।

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2019 Wall Painting
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy