Advertisement
১৮ জানুয়ারি ২০২৫
Bowbazar

বছর ঘুরল, বাড়ি ফেরার আশায় বৌবাজারের সেই বাসিন্দারা

২ নম্বর দুর্গা পিতুরি লেনে ছিল সোনাক্ষী সরকারের বাড়ি। গত এক বছর ধরে তিনি ভাড়া আছেন বেলেঘাটার একটি বাড়িতে।

বিষাদ: মেট্রো-বিপর্যয়ের শিকার পুষ্পেন্দু হালদারের পরিজনেরা। তাঁদের ঠাঁই হয়েছে ভাড়া বাড়িতে (বাঁ দিকে)। এক বছর আগে বৌবাজারে ভেঙে পড়া একটি বাড়ি। নিজস্ব ও ফাইল চিত্র

বিষাদ: মেট্রো-বিপর্যয়ের শিকার পুষ্পেন্দু হালদারের পরিজনেরা। তাঁদের ঠাঁই হয়েছে ভাড়া বাড়িতে (বাঁ দিকে)। এক বছর আগে বৌবাজারে ভেঙে পড়া একটি বাড়ি। নিজস্ব ও ফাইল চিত্র

আর্যভট্ট খান
শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২০ ০৫:০০
Share: Save:

কেটে গেল এক বছর। মেট্রোর সুড়ঙ্গ খুঁড়তে গিয়ে বৌবাজারের দুর্গা পিতুরি লেন এবং সেকরাপাড়া লেনে ভেঙে পড়া বাড়ির বাসিন্দারা এখনও ঘরছাড়া। নিজের বাড়ি ছেড়ে ওঁরা এখন আছেন মেট্রোরই ঠিক করে দেওয়া ভাড়া বাড়িতে। ওই মানুষগুলি জানাচ্ছেন, বৌবাজারে পুরনো পাড়ায় ফের তাঁরা কবে ফিরবেন, তা এখনও অনিশ্চিত।

২ নম্বর দুর্গা পিতুরি লেনে ছিল সোনাক্ষী সরকারের বাড়ি। গত এক বছর ধরে তিনি ভাড়া আছেন বেলেঘাটার একটি বাড়িতে। সোনাক্ষী জানালেন, ৩১ অগস্টের অভিশপ্ত রাত দুঃস্বপ্নের মতো লাগে তাঁর। ওই দিন সন্ধ্যায় তাঁদের বাড়ির ঠিক উল্টো দিকের বাড়িটিতে প্রথম ফাটল দেখা যায়। কিছু ক্ষণের মধ্যেই তাঁরা বুঝতে পারেন, বড় বিপদ ঘটতে চলেছে। সোনাক্ষী বলেন, ‘‘সে দিনই গভীর রাতে মেট্রো কর্তৃপক্ষ এসে জানান, আমাদের বাড়িও বিপজ্জনক। ভেঙে পড়তে পারে যে কোনও অংশ। দ্রুত বাড়ি ছাড়তে হবে। সেই যে ১ সেপ্টেম্বর ভোরে বাড়ি ছেড়ে হোটেলে গিয়ে উঠলাম, তার পরে আর বাড়িতে সে ভাবে ঢুকতেই পারিনি। এক দিন শুধু জিনিসপত্র নিতে এসেছিলাম। তত ক্ষণে বাড়ি প্রায় ভেঙে পড়েছে।’’ তিনি জানান, আর কত দিন ভাড়া বাড়িতে থাকতে হবে, সে সম্পর্কে গত এক বছর ধরে অনেক বার মেট্রো কর্তৃপক্ষের কাছে খোঁজ নিয়েছেন। কিন্তু সুনির্দিষ্ট উত্তর মেলেনি কোনও বারই।

সেকরাপাড়া লেনের বাসিন্দা আশিস সেন এখন রয়েছেন কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিটের একটি আবাসনে। তিনি বলেন, ‘‘পয়লা সেপ্টেম্বর বাড়ি ছেড়েছিলাম। ঘটনার কয়েক দিন পরে মেট্রো কর্তৃপক্ষ ও আমাদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেট্রো কর্তৃপক্ষ তখন জানান, দেড় বছরের মধ্যে ফিরে আসতে পারব বাড়িতে। এক বছর তো পেরিয়ে গেল। তিন বছর পরেও কি ফিরতে পারা যাবে?’’

মেট্রোর সুড়ঙ্গ খুঁড়তে গিয়ে ওই বিপর্য়ের ঘটনার পরে ৭৯টি পরিবার শহরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ভাড়া বাড়িতে রয়েছেন। এ রকমই দুর্গা পিতুরি লেনের বাসিন্দা জয়দীপ বড়াল জানান, তাঁদের বড় বাড়িতে অনেক সদস্য ছিলেন। এখন ছোট ফ্ল্যাটে সবার থাকার খুবই সমস্যা। জয়দীপ বলেন, ‘‘ভাড়া বাড়িতে থাকার জন্য চুক্তির নবীকরণ করতে হবে। তখন বাড়িভাড়া বাড়লে মেট্রো তা দেবে কি না, জানি না।’’

তবে জীবন থেমে থাকে না। মেট্রোর ঠিক করা বেলেঘাটার ভাড়া বাড়িতেই একমাত্র মেয়ের বিয়ের রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করলেন সঞ্জয় বসাক। সঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম দুর্গা পিতুরি লেনের বাড়িতেই ধুমধাম করে মেয়ের বিয়ে দেব। বাড়ি অর্ধেক ভেঙে পড়ে আছে। বেশি কিছু জিনিস বার করতে পারিনি। যে ভাবে ঢিমেতালে কাজ চলছে, তাতে আগামী পাঁচ বছরেও পুরনো পাড়ায় ফিরতে পারব কি না জানি না।’’

তিনি জানান, দুর্গা পিতুরি লেনে ছিল তাঁদের যৌথ পরিবার ছিল। বাড়ি ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে সেই পরিবারও ভেঙে গিয়েছে। তিন দাদা অন্য বাড়িতে ভাড়া থাকেন। সঞ্জয়বাবু জানান, বাড়ির পাশাপাশি ছাড়তে হয়েছে নিজেদের দোকানও। দোকান না থাকায় মিলছে না ভাড়া, কমেছে উপার্জনও।

দুর্গা পিতুরি লেন থেকে বাড়ি ভাঙার প্রথম রাতেই অর্থাৎ ৩১ অগস্ট বাড়ি ছেড়েছিলেন পুষ্পেন্দু হালদার। এখন তিনি থাকেন নারকেলডাঙার একটি ফ্ল্যাটে। পুষ্পেন্দুবাবু জানান, পুরনো জায়গা এখন মাঠ হয়ে গিয়েছে। তবু সেই মাঠটাই দেখতে যান তিনি। পুষ্পেন্দুবাবুর কথায়, ‘‘নিজের পাড়ার টান তো আর উপেক্ষা করতে পারি না। কবে ফিরতে পারব পাড়ায়, আবার আড্ডা দেব পুরনো লোকজনের সঙ্গে, সেই অপেক্ষায় দিন গুনছি।’’

মেট্রো কর্তৃপক্ষ অবশ্য এখনই বাড়ি ফেরার দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করে বলতে চাননি। তাঁরা জানান, যাঁদের বাড়ি ভাঙা পড়েছে তাঁদের সকলের জন্য বাড়ি ভাড়া করে দেওয়া হয়েছে। ভাড়ার চুক্তির নবীকরণও ঠিক সময়ে হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে যাঁদের দোকানঘর ও গুদাম ভাঙা পড়েছে, তাঁদেরও বিকল্প জায়গা করে দেওয়া হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Bowbazar East West Metro
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy