স্তব্ধ: দাদা-বৌদির সঙ্গে সায়ন বরা।
সবই সাজগোজ কেমন যেন ফিকে হয়ে গিয়েছে। ম্লান মুখে ঘুরছেন বর-কনেও। দিনটা বিশেষ হলেও তা নিয়ে আর যেন তেমন উত্তেজনা নেই কারও। মাঝেমধ্যে প্রতিবেশী কেউ কেউ বিয়েবাড়িতে এসে জানিয়ে যাচ্ছেন— চিংড়িঘাটা মোড়ে প্রচুর পুলিশ এসেছে, নতুন কী সব করার কথা হচ্ছে। তা ঘিরেই যতটুকু উত্তেজনা। বাকি সময়টায় বিষণ্ণতার আবহ বিয়েবাড়িতে।
শনিবার চিংড়িঘাটা সুকান্তনগরের ওই বিয়েবাড়ির গায়ে হলুদের তত্ত্বের মিষ্টি নিয়ে ফেরার পথেই বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে বরের ভাইয়ের দুই বন্ধুর। রবিবারও তা নিয়ে শোকস্তব্ধ গোটা পাড়া। প্রিয় দুই বন্ধুর মৃত্যুর পরে আর নিজের দাদার বিয়েতে যাননি বরের ভাই সায়ন বরা। রবিবার তিনি বলেন, ‘‘একসঙ্গে কত কাজ করেছি। কালও তো আমার দাদার বিয়ের তত্ত্বের মিষ্টি আনতে গিয়েই দুর্ঘটনা ঘটে গেল। বিয়েতে যেতে ভাল লাগে কারও?’’
সায়ন জানান, তিনি নিজে আর পড়াশোনা না করলেও স্কুলের বন্ধু সঞ্জয় বনু ও বিশ্বজিৎ ভুঁইয়ার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল আগের মতোই। দাদার বিয়ে নিয়ে একসঙ্গেই করেছেন পরিকল্পনা। শনিবারও তো বিয়েবাড়ির কাজেই বেরিয়েছিলেন ওঁরা।
সায়ন জানান, সাইকেল নিয়ে সকলের একসঙ্গে বিয়ের তত্ত্ব আনতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁদের। তবে সঞ্জয়ের সাইকেল খারাপ হয়ে যায়। ঠিক হয়, বিশ্বজিতের বাড়ি গিয়ে সেখান থেকে সাইকেলেই তাঁরা তত্ত্ব আনতে যাবেন। বিশ্বজিতেরা পৌঁছনোর আগেই তত্ত্বের জিনিস এক বার বিয়েবাড়িতে রেখে গিয়েছিলেন সায়নেরা। পরে বিশ্বজিতেরা পৌঁছলে তাঁদের হাতে মিষ্টির পাত্র ধরিয়ে দেওয়া হয়। সায়ন বলেন, ‘‘সঞ্জয় সাইকেল চালাচ্ছিল। বিশ্বজিৎ পিছনে মিষ্টি ধরে বসেছিল। ওদের পিছনেই আমাদের আসার কথা ছিল। চিংড়িঘাটা মোড়ের কাছে পৌঁছে দেখি রাস্তায় ভিড়। তখনও জানি না সঞ্জয়দের সঙ্গেই এ রকম হয়েছে। পরে ফোনে শুনলাম এই কাণ্ড।’’
পাড়ার ক্লাবে বিশ্বজিৎ ও সঞ্জয়কে স্মরণ । রবিবার। চিংড়িঘাটার সুকান্তনগরে।
এর পরে কোনওরকমে বিয়ে হয়েছে সায়নের দাদা সৌরভের। সায়ন বলেন, ‘‘বিয়ে আটকে গেলে সমস্যা হত। তাই পরিবারের সকলকে পাঠিয়েছিলাম।’’ সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘পাড়ায় পুলিশ ঢুকে মেরেছে। বিয়েবাড়ির লোকজন আটকে পড়েছিলেন। ঘটনার পর থেকেই নিজেকে দোষী বলে মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে ওদের মিষ্টি আনতে না বললেই ভাল হত। কোনও রকমে বিয়েটা কেটে গেলে হয়। ওদের পরিবারের সামনে যেতেই ভয় করছে।’’
আজ, সোমবার সায়নের দাদার বৌভাত। অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ভাড়া বাড়িতে। সৌরভের বাড়ির লোকজন বলছেন, এই অনুষ্ঠানটা ভালয় ভালয় মিটে যাক। আর বর সৌরভ বলছেন, ‘‘আমার বিয়ের মিষ্টি আনতে গিয়ে ছোট দুটো ছেলের প্রাণ গেল। এর মধ্যে মাথা ঠিক রাখা যায়!’’ নববধূ সোমা বললেন, ‘‘বিয়ের তারিখটা সকলেই মনে রাখেন। কিন্তু আমাদের মনে থাকবে খুব কষ্টের সঙ্গে।’’
—নিজস্ব চিত্র
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy