Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Renu Khatun

Renu Khatun: দেখতে আসা ছাত্রীদেরও সাহসের পাঠ দিলেন রেণু

দুর্গাপুরের হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে সোমবার বিকেলে দিদি পিয়ারি বিবির বাড়ি, বর্ধমানের বাজেপ্রতাপপুরে যান রেণু।

অদম্য: বর্ধমানের বাজেপ্রতাপপুরে দিদির বাড়িতে রেণুর লড়াইয়ের কথা শুনতে এসেছে ছোটরা। সঙ্গে বড়রাও। মঙ্গলবার।

অদম্য: বর্ধমানের বাজেপ্রতাপপুরে দিদির বাড়িতে রেণুর লড়াইয়ের কথা শুনতে এসেছে ছোটরা। সঙ্গে বড়রাও। মঙ্গলবার। ছবি: উদিত সিংহ

সৌমেন দত্ত , রাজীব চট্টোপাধ্যায়
বর্ধমান ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২২ ০৭:৪৫
Share: Save:

কব্জি কাটা হয়েছে ডান হাতের। তাতে দমেননি। কলম ধরেছেন বাঁ হাতে। যন্ত্রণার কথা উঠলে হেসে বলছেন, ‘‘পড়াশোনা করলে প্রতিবাদের ইচ্ছে জাগবে। আসবে মনের জোর।’’ পারিবারিক হিংসার শিকার, পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের রেণু খাতুনকে লড়াইয়ের ‘রোল মডেল’ করতে চায় রাজ্য মহিলা কমিশন। দিতে চায় সংবর্ধনাও।

দুর্গাপুরের হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে সোমবার বিকেলে দিদি পিয়ারি বিবির বাড়ি, বর্ধমানের বাজেপ্রতাপপুরে যান রেণু। মঙ্গলবার সেখানে তাঁকে দেখতে এসেছিল কয়েক জন স্কুলপড়ুয়া। একাদশ শ্রেণির অজিফা খাতুন, নবম শ্রেণির নেহা খাতুন, পঞ্চম শ্রেণির হাসিনা খাতুনদের কথায়, “যাঁর মনের এমন জোর, তাঁকে দেখতে আসব না! দিদি (‌রেণু) বলেছেন, পড়াশোনা মন দিয়ে করলেই সাহস বাড়বে।’’ এসেছিলেন নয়না খাতুন, জাহানারা বিবির মতো স্থানীয় অনেক মহিলাও। রেণুকে নয়না বলেন, “আমার মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে। তোমার সঙ্গে দেখা করে বাড়ি ফিরে বলেছে, ‘তাড়াতাড়ি আমার বিয়ে দেবে না। পড়তে চাই। পড়লে, সাহস বাড়বে’।’’ জাহানারা বিবি রেণুকে বলেন, “ভেঙে পড়বে না। তা হলে, অপরাধীদের সাজা হবে না।’’

রেণুর কাছে এ দিন কেতুগ্রাম থেকে পৌঁছন তাঁর মা রেহেনা বিবি। রেণুর কথায়, ‘‘মায়ের চোখে জল এসেছিল। তবে কাঁদতে দিইনি।’’ মেয়েকে জড়িয়ে রেহেনা বলেন, ‘‘পড়াশোনা করেছিল বলে বিপদেও মনের জোর হারায়নি।’’ কয়েক কিলোমিটার পথ উজিয়ে হাটুদেওয়ান থেকে রেণুকে দেখতে গিয়েছিলেন প্রবীণ খোন্দেকার তফাজ্জল হক। তাঁর কথায়, “এই মেয়ের লড়াই দেখে অভিভূত।’’ গিয়েছিলেন বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থার (বিডিএ) চেয়ারম্যান কাকলি তা, বর্ধমান (১) পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মানস ভট্টচার্য। রেণুকে কাকলি বলেন, “আপনার লড়াই মেয়েদের অনুপ্রেরণা জোগাবে।’’

রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তাঁরা রেণুর লড়াইকে তুলে আনতে চান সকলের সামনে। তাঁর কথায়, ‘‘রেণুকে পারিবারিক হিংসার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের রোল মডেল করতে চাই।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘রেণু আমাদের কার্যালয়ে আসতে চান। আমি ওঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। সংবর্ধনা দেওয়া হবে। পারিবারিক হিংসার বিরুদ্ধে আমাদের প্রচারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা ওঁকে বলা হবে।’’

রেণু বলছেন, ‘‘আমি চাই, কোথাও কোনও মহিলা যেন অত্যাচার সহ্য না করেন। মহিলাদের উপরে নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিজেকে যুক্ত করার ইচ্ছে রয়েছে। সুস্থ হয়ে কমিশনের অফিসে যাব।’’

আপাতত, বাঁ হাতকে দ্রুত ‘কাজের হাত’ করে তোলার চেষ্টা করছেন বছর চব্বিশের এই মেয়ে। বললেন, ‘‘অ-আ-ক-খ, এ-বি-সি-ডি, নিজের নাম বাঁ হাতে লেখার অভ্যাস করছি। কিন্তু শুধু ওইটুকু লিখলে হবে না। তাই গল্পের বই থেকে দেখে অনুচ্ছেদ লেখা শুরু করব ঠিক করেছি। হাসপাতালে আমাকে খাইয়ে দিতে চেয়েছিলেন নার্সরা। বারণ করেছিলাম। নিজেই খেয়েছি বাঁ হাতে।’’

একটা ‘অস্বস্তি’ অবশ্য রয়েছে। রেণুর কথায়, ‘‘যারা আমার সঙ্গে অন্যায় করেছে, তাদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত মনে দুশ্চিন্তা থেকে যাবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

Renu Khatun Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy