মর্মান্তিক: সেই বাড়ির দোতলায় বৃদ্ধার মৃত্যুর তদন্তে পুলিশ। মঙ্গলবার, শোভাবাজারে। নিজস্ব চিত্র
বয়স ৭৯। শিরদাঁড়ার সমস্যা ছিল। সারা বছর তাই বেল্ট পরে থাকতে হত তাঁকে। কারও সাহায্য ছাড়া শৌচাগারেও যেতে পারতেন না। বাসন্তী লাহা নামে সেই বৃদ্ধাকে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করেছিল পুলিশ। কলকাতা পুলিশের ‘প্রণাম’-এর সদস্য বাসন্তীদেবীকে এসএসকেএমে ভর্তি করা হলে দুপুরে তিনি মারা যান। জোড়াবাগানের বাড়িতে ওই ঘটনার পরে অন্য ঘরে দরজা এঁটে বসে ছিলেন বাসন্তীদেবীর ননদ, বছর ষাটের শোভা মল্লিক লাহা। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এর জন্য ওই ঘরের দরজা ভাঙতে হয়েছে পুলিশকে! এ দিন ঘটনার খবর পেয়ে আসেন লালবাজারের হোমিসাইড শাখার অফিসারেরাও।
জোড়াবাগান থানার বাবুরাম ঘোষ লেনের ওই বাড়ির একটি অংশে থাকতেন বাসন্তীদেবী। তাঁর তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। একমাত্র ছেলে থাকেন বরাহনগরে। বাড়ির দোতলার এক দিকে বাসন্তীদেবীর দেওর, অবিবাহিত গোবিন্দলাল লাহার ঘর। তেতলায় ছাদের ঘরে থাকেন বৃদ্ধার স্বামী, ৮৩ বছরের গোপাললাল লাহা। শিরদাঁড়ার সমস্যার জন্য বৃদ্ধা ইদানীং ছাদের ঘরে উঠতে পারতেন না। দেওরের ঘরের উল্টো দিকে একটি ঘরে থাকতেন। গত মাসে ওই বাড়িতেই উঠেছেন গোপাললালবাবুর বোন শোভা। গোপাললালবাবুর অভিযোগ, বাড়ি দখলের অভিসন্ধি থেকেই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনি।
গোবিন্দলালবাবু জানান, তাঁরা দুই ভাই, চার বোন। তিনি ছাড়া সকলেই বিবাহিত। তবে বিয়ের মাত্র ১০ দিনের মাথায় শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে এ বাড়িতে এসে ওঠেন শোভা। কিন্তু তাঁর থাকা নিয়ে অশান্তি শুরু হলে চলে যান। ৩০ বছর পরে আবার ফিরে এসেছেন। গোবিন্দলালবাবু বলেন, ‘‘বোন ফিরে এসে বলে, আমি এখানে থাকব। ওকে আমার ঘরেই থাকতে দেওয়ার পরে সম্পত্তির দাবি জানাতে শুরু করে। এক লক্ষ টাকাও চায়। আমি এক সময়ে ছাত্র পড়াতাম। আজ কুড়ি বছর হল, দাদা চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। অত টাকা পাব কোথায়?’’ তাঁর দাবি, টাকা দেওয়া সম্ভব নয় বলায় শোভা ঝামেলা করতে শুরু করেন। মাঝেমধ্যেই বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিতেন।
আরও পড়ুন: ভোল বদলে যাত্রীর অপেক্ষায় সুসজ্জিত কলকাতা স্টেশন
আরও পড়ুন: বৌবাজারের রাস্তায় ‘হেনস্থা’য় জামিন পুলিশকর্তার
কী ঘটেছিল সোমবার রাতে? গোবিন্দলালবাবু বলেন, ‘‘আমি রাতে মাটিতে শুই। শোভা শুয়েছিল চৌকিতে। বৌদিকে প্রায়ই দেখতে আসত ভাইঝি। খাওয়াদাওয়া করিয়ে, শুইয়ে দিয়ে ফিরত। ওই রাতে ১১টা নাগাদ শোভা জানতে চায়, ভাইঝি ফিরে গিয়েছে কি না। তার পরে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ভোরে চিৎকার শুনে উঠে দেখি, বৌদির ঘর জ্বলছে। তখনই ছুটে এসে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় শোভা। পুলিশ এসে বহু ডাকলেও খোলেনি।’’ শেষে দরজা ভেঙে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
স্ত্রীর মৃত্যুর খবর শুনে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছেন গোপাললালবাবু। তিনি বলেন, ‘‘শোভা হঠাৎ কোথা থেকে এসে থাকতে শুরু করল, পুলিশ তদন্ত করুক। কোনও প্রোমোটার ওকে পাঠিয়েছেন কি না, তা-ও দেখা হোক।’’ পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনা শোভাই ঘটিয়েছেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। তবে ঘটনাস্থল থেকে একটি কেরোসিনের বোতল উদ্ধার হয়েছে। পুলিশের অনুমান, কেরোসিন ঢেলে বাসন্তীদেবীর গায়ে আগুন ধরানো হয়েছিল। পাশাপাশি এই প্রশ্নও উঠছে, কারও সাহায্য ছাড়া যিনি চলতে পারেন না, তাঁর পক্ষে কি গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যা করা সম্ভব? শোভাই বা কেন ঘটনার পরে দরজা বন্ধ করে বসে থাকলেন? আপাতত সেই সব প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy