Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Rehabilitation Centre

খুলে যাচ্ছে মনের অসুখজয়ীদের নতুন করে বাঁচার ভুবন

মনোরোগ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষদের এই অধিকার নিয়ে জনস্বার্থ মামলার ভিত্তিতে আগেই সরব হয়েছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

নবরূপে: এখন গিরীন্দ্রশেখর বসুর বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

নবরূপে: এখন গিরীন্দ্রশেখর বসুর বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২০ ০৩:৪৭
Share: Save:

প্রতিভার গুণে অনেককেই পিছনে ফেলে দেবেন তাঁরা। বোধবুদ্ধির ধারে-ভারেও কারও থেকে কম নন। গত লোকসভা নির্বাচনে ভোট পর্যন্ত দিয়েছিলেন তাঁরা কেউ কেউ। অথচ খাতায়-কলমে তাঁদের ঠিকানা সেই মানসিক হাসপাতাল। মনের অসুখজয়ী সেই সুস্থ আবাসিকদের জন্য বহু প্রতীক্ষিত একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র এ বার চালু হতে চলেছে।

মনোরোগ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষদের এই অধিকার নিয়ে জনস্বার্থ মামলার ভিত্তিতে আগেই সরব হয়েছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সুস্থ আবাসিকদের কেন মানসিক হাসপাতালে পড়ে থাকতে হবে, সেই প্রশ্ন তোলেন সমাজকর্মীরাও। তবু কাজটা থমকে ছিল এত দিন। করোনার সংক্রমণের ভয়ে সেই কাজ হতে পারে কিছু দিনেই। কলকাতায় লুম্বিনী পার্ক মানসিক হাসপাতালের পুরনো বাড়িটি একদা মনোরোগীদের উত্তরণের জন্য ব্যবহার করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সমাজকল্যাণ দফতরের হাতে সেটি তুলে দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। পিকনিক গার্ডেনে ঠিক উল্টো দিকে একটি নতুন বাড়িতে গত বছরে উঠে গিয়েছেন ওই হাসপাতালের আবাসিকেরা।

এ দেশে মনোরোগের চিকিৎসার অন্যতম পুরোধা তথা মনঃবিশ্লেষক গিরীন্দ্রশেখর বসুর পুরনো বাড়িতেই এতদিন লুম্বিনী হাসপাতাল চালু ছিল। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সেই বাড়িটি সংস্কারের পরে ঢেলে সাজা হয়েছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পরামর্শে ঘরগুলিতে উজ্জ্বল রং করে মানসিক হাসপাতালে দীর্ঘদিন কাটানো আবাসিকদের অতীতের ক্লেদ মুছে ফেলার তাগিদ দেখা যাচ্ছে। প্রাক্তন মনোরোগীর তকমা বয়ে সমাজের মূল স্রোতে ফেরার পথে নানা প্রতিকূলতার উজান ঠেলতে সাহায্য করবে এই বাড়ি। সংশ্লিষ্ট কর্তারা চাইছেন সংবেদনশীল একটি সামাজিক পরিসর গড়তে, যেখানে থেকে মনের অসুখজয়ীরা কাজ করতে পারবেন। সমাজকল্যাণ দফতরের সচিব সঙ্ঘমিত্রা ঘোষের কথায়, “পরিকাঠামো তৈরি। আবাসিকেরা নতুন বাড়িতে কী ভাবে থাকবেন, সরকারি তরফে কার কী দায়িত্ব থাকবে এ সবও প্রায় ঠিক।” এই প্রয়াসে কাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার কাজ করবে, তা ঠিক করতে দরপত্র বিলি করা হয়েছে বলে সঙ্ঘমিত্রা জানিয়েছেন। বহরমপুরেও একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র হবে বলে সরকারি সূত্রের খবর।

লকডাউন শুরুর পরেই করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হোমগুলিতে গাদাগাদি, ঘেঁষাঘেঁষি এড়ানো নিয়ে উদ্যোগী হতে বলে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু পাভলভ বা বহরমপুরের মানসিক হাসপাতালে যতগুলি শয্যা, আবাসিকের সংখ্যা তার প্রায় আড়াই গুণ। ডাক্তারদের মতে, তাঁদের মধ্যে আবার কয়েকশো আবাসিকই সুস্থ। কিন্তু নিজের লোক কেউ না-থাকায় বা দায়িত্ব নিতে না-চাওয়ায় তাঁরা মানসিক হাসপাতালেই কার্যত বাতিল আসবাবের মতো পড়ে রয়েছেন। শীর্ষস্তরের এক স্বাস্থ্যকর্তার মতে, ‘‘সুস্থ আবাসিকেরা পুনর্বাসন কেন্দ্রে গঞ্জনা-কটূক্তি ছাড়া নিরাপদে থাকবেন। কেউ কেউ কাজকর্মও করতে পারবেন। পরিস্থিতি অনুযায়ী তাঁরা কত দিন সেখানে থাকবেন, তা ঠিক করা হবে।’’

সদ্য সুস্থ হয়ে সবার সঙ্গে বাঁচতে চাওয়া মানুষগুলির মন থেকে পুরনো হাসপাতালের চেহারাটা মুছে ফেলতে চান এ কাজের শরিকেরা। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ত্রী রত্নাবলী রায় বলেন, “গিরীন্দ্রশেখরের বাড়িটির রং, আলো সব কিছুতেই মানসিক হাসপাতালের ওয়ার্ডের স্মৃতি মুছে নতুন জীবনের আমেজ উঠে আসছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Rehabilitation Centre Mental Patient
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy