এ বিষয়ে কলকাতা বা রাজ্য পুলিশের কেউ মন্তব্য করতে চাননি। তবে লালবাজারের অতিরিক্ত কমিশনার পদমর্যাদার এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, সমাজকল্যাণ দফতরের সঙ্গে যৌথ ভাবে বেশ কিছু পদক্ষেপ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। দ্রুত এমন নেশামুক্তি কেন্দ্রগুলিতে আরও বেশি করে হানা দেওয়া হবে।
ফাইল চিত্র।
অন্ধকার জগৎ। কিছুতেই শায়েস্তা করা যায় না! ইতিউতি গজিয়ে ওঠা নেশামুক্তি কেন্দ্রগুলি সম্পর্কে রাজ্যের সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রীর মূল্যায়ন এমনই। বেলঘরিয়ার একটি নেশামুক্তি কেন্দ্রে এক যুবককে পিটিয়ে মারার অভিযোগ এবং তা নিয়ে ধুন্ধুমারের পরিপ্রেক্ষিতে খোদ মন্ত্রীর এমন মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন অনেকে। তাঁদের দাবি, ‘‘কোনও ঘটনা ঘটলে পুলিশ-প্রশাসনের তরফে নজরদারি চালানো হলেও দিনকয়েক বাদে পরিস্থিতি আবার যে কে সে-ই হয়ে যায়! কোনও মতে একটা বন্ধ করা হলে আর একটা খুলে যায়।’’
ভুক্তভোগীদের দাবি, নেশামুক্তি কেন্দ্র রাতারাতি খুলে বসতে দরকার একতলা বা দোতলা একটি বাড়ি, একটি অফিসঘর আর মাদক সম্পর্কে সচেতনতার প্রচার সংক্রান্ত গুটিকয়েক ইংরেজিতে লেখা পোস্টার বা ছবি! আর নেশামুক্তির ‘ব্যবসা’র জন্য প্রয়োজন ইন্টারনেটে সংস্থাটির নাম, ফোন নম্বরটুকু তুলে দেওয়া। সেই সঙ্গে সোসাইটি আইনে বেসরকারি সংস্থার রেজিস্ট্রেশন। তার পরেই চালু করে দেওয়া যায় নেশামুক্তি কেন্দ্র। আর এক বার চালু হয়ে গেলে মোটামুটি মৌখিক প্রচারেই মাদকাসক্তদের পরিবারের যাওয়া-আসা শুরু হয়ে যাবে। ‘রোগী’ রাখতে এর পরে যেমন খুশি দর হাঁকলেই হল! মোটামুটি কিছু দিন চালাতে পারলে মিলে যেতে পারে কেন্দ্রের অনুদানও।
উত্তর ২৪ পরগনার এমনই একটি নেশামুক্তি কেন্দ্রে গত বছর মৃত্যু হয় মানিকতলার এক যুবকের। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, ছেলেকে রাখতে এককালীন ১২ হাজার টাকা নেওয়া হয়। পরে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে পাঠাতে বলা হয়। বেলঘরিয়ার ঘটনার কথা শুনে ওই যুবকের মা বৃহস্পতিবার বললেন, ‘‘আমার ছেলেকেও এ ভাবেই পিটিয়ে মারা হয়েছে। ওখানে দিয়ে আসার সময়ে বলেছিল, দু’মাসের আগে দেখা করতে দেবে না। সপ্তাহখানেকের মধ্যে ফোন করে বলল, ছেলে সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়েছে। হাসপাতালে গিয়ে দেখি, ছেলের গায়ে মারধরের দাগ। থানা-পুলিশ করেও লাভ হয়নি।’’
অভিযোগ, ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রে আবাসিকদের মাটিতে শুতে দেওয়া হত। কথার অবাধ্য হলেই জুটত লাঠিপেটা। জোর করে নেশামুক্তি কেন্দ্রের মালিকের বাড়ির কাজ করানোরও অভিযোগ ছিল। গত কয়েক বছরে হরিদেবপুরের একটি নেশামুক্তি কেন্দ্রে একই ভাবে মৃত্যু হয়েছে এলাকার বাসিন্দা অনির্বাণ ভট্টাচার্যের। নিমতার পাইকপাড়ার একটি নেশামুক্তি কেন্দ্রে মারা যান বিরাটির কলাবাগানের পার্থ রাহা। অভিযোগ, এই কেন্দ্রগুলির প্রায় কোনওটিতেই নেশাগ্রস্ত এবং মানসিক সমস্যায় ভোগা রোগীদের আলাদা রাখা হয় না। থাকেন না সর্বক্ষণের কোনও চিকিৎসকও। কেন্দ্রে ভর্তি হওয়া কোনও নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির কী চিকিৎসা হচ্ছে বা তাঁকে কী ওষুধ দেওয়া হচ্ছে— সে সম্পর্কে পরিবারের কাউকে জানানোও হয় না। কেন্দ্রের মালিকের রাখা লোকই নিজের মতো ওষুধ দিয়ে দেন।
সমাজকল্যাণ দফতরের আধিকারিকেরা যদিও জানাচ্ছেন, নেশামুক্তি কেন্দ্রের অনুমতি দেন না তাঁরা। ‘সোসাইটি অ্যাক্ট ১৯৬১’-এর ভিত্তিতে এই ধরনের কেন্দ্র চালানো যায় না। মানসিক রোগীদের রেখে কাজ করার অনুমোদন নিলে তবেই এগোনো যায়। সে ক্ষেত্রে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মেন্টাল হেল্থ লাইসেন্স নিতে হয়। কিন্তু নেশামুক্তি কেন্দ্রগুলির বেশির ভাগেরই তা নেই। তাতেও নেশাগ্রস্তদের মানসিক সমস্যায় ভোগা রোগীদের থেকে আলাদা রাখাই বাধ্যতামূলক। ১৪ বাই ১২ ফুটের ঘরে সর্বাধিক তিন জনকে রাখার নিয়ম। ভবনের জন্য দমকলের ছাড়পত্র এবং ফুড লাইসেন্স থাকাও আবশ্যিক। সর্বক্ষণের এক জন চিকিৎসক ও দু’জন নার্স রাখা বাধ্যতামূলক। রাখতেই হবে সিসি ক্যামেরা, নিরাপত্তাকর্মী। স্থানীয় থানায় নতুন আসা আবাসিকদের সম্পর্কে তথ্য জানানোটাও নিয়মের মধ্যে পড়ে।
কিন্তু এ সব ছাড়া নেশামুক্তি কেন্দ্রগুলি চলছে কী করে? রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘‘পুরো অন্ধকার জগৎ। কিছুতেই কিছু করা যাচ্ছে না। ধরে ধরে নজরদারি চালানোর মতো আমাদের লোকও নেই। পুলিশেরই এ ব্যাপারে আরও সতর্ক হওয়া উচিত। বেলঘরিয়ার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বলি, আলাদা করে কী করা যায় দেখছি।’’
এ বিষয়ে কলকাতা বা রাজ্য পুলিশের কেউ মন্তব্য করতে চাননি। তবে লালবাজারের অতিরিক্ত কমিশনার পদমর্যাদার এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, সমাজকল্যাণ দফতরের সঙ্গে যৌথ ভাবে বেশ কিছু পদক্ষেপ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। দ্রুত এমন নেশামুক্তি কেন্দ্রগুলিতে আরও বেশি করে হানা দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy