Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Government Hospital

পাঁচটি হাসপাতাল ঘুরে ফের ‘রেফার’! বন্ধ হল শোরগোলে

সন্তানকে শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি করাতে পেরে কান্নায় ভেঙে পড়া মায়ের আর্তি, ‘‘এর পরেও বাচ্চাটা বাঁচবে কি না জানি না।’’

অসহায়: তখনও ভর্তি করানো যায়নি দীপকে। ছেলেকে কোলে নিয়ে মা প্রিয়াঙ্কা। বুধবার, এন আর এস হাসপাতাল চত্বরে।

অসহায়: তখনও ভর্তি করানো যায়নি দীপকে। ছেলেকে কোলে নিয়ে মা প্রিয়াঙ্কা। বুধবার, এন আর এস হাসপাতাল চত্বরে। নিজস্ব চিত্র

চন্দন বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:১৫
Share: Save:

দগ্ধ শিশুকে কোলে নিয়ে পাঁচটি সরকারি হাসপাতালের চক্কর কেটেছেন মা-বাবা। কিন্তু কিছুতেই চিকিৎসা মিলছে না। বার বার তাকে ‘রেফার’ করে দেওয়া হচ্ছে অন্য সরকারি হাসপাতালে। চিকিৎসক-নার্সদের হাতে-পায়ে ধরেও কাজ হচ্ছে না। এ দিকে, অ্যাম্বুল্যান্সে এক জায়গা থেকে আর এক হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে সর্বস্বান্ত হওয়ার দশা শিশুটির মা-বাবার! শেষে ব্যান্ডেজ জড়ানো আড়াই বছরের শিশুকে নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে পথে বসে পড়লেন তাঁরা। বুধবার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (এনআরএস) জরুরি বিভাগের সামনে সেই দৃশ্য শোরগোল ফেলতে অবশেষে ওই হাসপাতালে ঠাঁই হল শিশুটির।

সন্তানকে শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি করাতে পেরে কান্নায় ভেঙে পড়া মায়ের আর্তি, ‘‘এর পরেও বাচ্চাটা বাঁচবে কি না জানি না। আর একটু আগে আমাদের উপরে হাসপাতালের কারও দয়া হলে ভাল হত!’’

উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার কুলসুর এলাকার বাসিন্দা, দীপ সাধুখাঁ নামে ওই শিশুটির গায়ে গরম জল পড়ে গিয়েছিল মঙ্গলবার। তার বাবা সৌরভ সাধুখাঁ জানান, তিনি একটি দোকানে কাজ করেন। মঙ্গলবার তাঁর কাছে বাড়ি থেকে ফোন আসে। স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা ফোনে জানান, কাপড় ধোয়ার জন্য তিনি গরম জল করেছিলেন। সেই গরম জলের পাত্রের পাশেই বছর দশেক বয়সি দাদা সৌম্যের সঙ্গে খেলছিল দীপ। খেলতে খেলতে দু’জনেই গরম জলের পাত্রে পড়ে যায়। পাড়ার লোকেরাই এর পরে দুই ভাইকে নিয়ে যান দেগঙ্গার বাউগাছি গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে সৌম্যকে ছেড়ে দেওয়া হলেও ছোট্ট দীপের শরীরের ৬০ শতাংশই পুড়ে গিয়েছে বলে জানানো হয়। সেই রাতেই দীপকে বারাসত জেলা হাসপাতালে ‘রেফার’ করে দেওয়া হয়।

যদিও অভিযোগ, বারাসত হাসপাতালও শিশুটির চিকিৎসা করতে চায়নি। শিশু-চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই— এই কারণ দেখিয়ে দীপকে ‘রেফার’ করে দেওয়া হয় ফুলবাগান শিশু হাসপাতালে। সেখানে কোনও মতে দীপকে ভর্তি করানো গেলেও বুধবার দুপুরে ওই হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, দগ্ধ শিশুর চিকিৎসার কোনও পরিকাঠামো তাদের নেই। সৌরভ বলেন, ‘‘ফুলবাগানের হাসপাতাল বলল, তাদের বার্ন ইউনিট নেই। আর জি করে যেতে হবে।’’ অভিযোগ, দগ্ধ শিশুকে নিয়ে আর জি করে গেলে সেখানেও তাকে ভর্তি নেওয়া হয়নি। শিশুটির অবস্থা কী রকম, তা না দেখেই সেখান থেকে তাকে এন আর এসে রেফার করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এর পরে সেখানে পৌঁছেও সুরাহা মেলেনি।

দীপের পরিবারের দাবি, বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ এন আর এসে পৌঁছেও দগ্ধ শিশুকে নিয়ে তাঁদের শুধু এ দিক ও দিক ছোটাছুটিই করতে হয়। শেষে একাধিক পরীক্ষার পরে তাঁদের জানানো হয়, হাসপাতালে শয্যা নেই। সে কারণে এসএসকেএমে শিশুকে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয় তাঁদের। সৌরভ বলেন, ‘‘তত ক্ষণে আমরা অ্যাম্বুল্যান্স ছেড়ে দিয়েছি। কোনও মতে জোগাড় করা সাড়ে চার হাজার টাকাও পাঁচটা হাসপাতাল ঘুরতে গিয়ে শেষ হয়ে গিয়েছে।’’ তাই এক প্রকার বাধ্য হয়ে শিশুকে কোলে নিয়ে এন আর এসের জরুরি বিভাগের সামনের বসে পড়েন তাঁরা। শিশুটির মা প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘‘মনে মনে ভাবছিলাম, আমরা কি কলকাতায় ঘুরে বেড়াতে এসেছি? কোথাও ভর্তি করাতে পারব না?’’ শিশুকে কোলে নিয়ে রাস্তায় বসে পড়া সেই দৃশ্যই শোরগোল ফেলে দেয়।

এর পরে এন আর এস হাসপাতালের সুপার ইন্দিরা দে-র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি শুনে জানান, শয্যা ফাঁকা না থাকার কারণে অনেক রোগীকেই ট্রলিতে ভর্তি করানো হচ্ছে। ফলে ট্রলিও পাওয়া যাচ্ছে না। তবু এই শিশুটির বিষয়টি দেখা হচ্ছে। এর মধ্যে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি শিশুটির নাম-বয়স জেনে ভর্তির ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন। শেষে রাত পৌনে ৯টা নাগাদ শিশুটিকে ভর্তি নেয় এন আর এস।

যদিও দগ্ধ কোনও শিশুকে চিকিৎসা পেতে কেন এতগুলি সরকারি হাসপাতাল ঘুরতে হবে, সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি স্বাস্থ্য দফতরের কারও কাছেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Government Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy