Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

শহরে উল্টোল তীব্র গতির স্কুলবাস, আহত ২২

প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে, বেপরোয়া গতিতে চলার জেরেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। ওই বাসে ছিল হেদুয়ার হোলি চাইল্ড স্কুলের ছাত্রীরা। সঙ্গে কয়েক জন অভিভাবকও ছিলেন।

বেপরোয়া গতিতে চলা স্কুলবাসটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।

বেপরোয়া গতিতে চলা স্কুলবাসটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৯ ০২:২৬
Share: Save:

শহরে ফের দুর্ঘটনার কবলে পড়ল একটি স্কুলবাস। সোমবার সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ চিৎপুর লকগেট উড়ালপুলের কাছে ওই বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেলে জখম হয় ১৪ জন ছাত্রী। আহত হন ছ’জন অভিভাবকও। গুরুতর জখম হয়েছেন বাসের চালক সোনু হালদার ও ধনঞ্জয় ভুঁইয়া নামে এক পথচারী। জখম সকলকেই আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ছাত্রী ও অভিভাবকদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হলেও বাসচালক ও সেই পথচারী সেখানেই চিকিৎসাধীন। বাসচালকের লাইসেন্স এবং বাসের ফিটনেস সার্টিফিকেট ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে, বেপরোয়া গতিতে চলার জেরেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। ওই বাসে ছিল হেদুয়ার হোলি চাইল্ড স্কুলের ছাত্রীরা। সঙ্গে কয়েক জন অভিভাবকও ছিলেন। পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ছাত্রীদের বেশ কয়েক জন মাথায় চোট পেয়েছে। কারও আবার হাত-পা কেটে গিয়েছে। কারও আবার চোট লেগেছে কোমরে। দু’জন অভিভাবকের চোট কিছুটা বেশি। তবে তাঁদেরও ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অভিভাবকেরা জানান, বাসটি যে ভাবে চলছিল, তাতে আরও বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। হাসপাতালে এ দিন ছাত্রীদের দেখতে এসেছিলেন স্কুলের শিক্ষিকারা।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বাপি প্রামাণিক ও বিনোদকুমার যাদব জানান, বাসটি উল্টে যাওয়ার পরেই ভিতর থেকে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার শুনতে পান তাঁরা। বাসের উইন্ডস্ক্রিন ভেঙে সামনের অংশটি পুরোপুরি দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছিল। সেখান দিয়েই ভিতরে ঢুকে অভিভাবক ও ছাত্রীদের পিছনের দরজা দিয়ে বার করে আনেন তাঁরা। বাসচালক পুলিশকে জানিয়েছেন, ব্রেক ফেল করেই এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বাসে কিন্ডারগার্টেন থেকে দশম শ্রেণি— বিভিন্ন ক্লাসের ছাত্রীরা ছিল। স্কুলে গিয়ে ফি জমা দেওয়ার জন্য কয়েক জন অভিভাবকও ওই বাসে উঠেছিলেন।

দুর্ঘটনায় আহত ও আতঙ্কিত পড়ুয়ারা। (ডান দিকে) আহত এক অভিভাবক। নিজস্ব চিত্র ও দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

দুর্ঘটনার খবর জানার পরেই অন্য অভিভাবকেরা ছুটে চলে আসেন আর জি কর হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার ইউনিটের সামনে। সকলেই তখন জানতে চাইছেন, তাঁদের মেয়েরা কেমন আছে? কোথায় আছে? ট্রমা কেয়ারের ভিতরে তখন অভিভাবক ও ছাত্রীদের চিকিৎসা চলছে। আহত ছাত্রীদের অনেকেই আতঙ্কে কান্নাকাটি করছে। এক অভিভাবক বলেন, ‘‘বাচ্চারা মানসিক ভাবে এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল যে, কী ভাবে সান্ত্বনা দেব, বুঝতে পারছিলাম না।’’

আরও পড়ুন: যথেচ্ছ প্লেটলেট ব্যবহার, সতর্ক করল স্বাস্থ্য ভবন

আহত অভিভাবক তীর্থ গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘‘বাসটি প্রথম থেকেই খুব জোরে চলছিল। লকগেট উড়ালপুলে উঠে গতি যেন আরও বেড়ে গেল। উড়ালপুলে থেকে নামার পরে হঠাৎ দেখি, বাঁ দিকে ঘুরে গেল বাসটি। তার পরে সজোরে গিয়ে ধাক্কা মারল একটি দেওয়াল ও সিগন্যাল পোস্টে। আমরা সকলে এ দিকে-ও দিকে ছিটকে পড়লাম। আমার মাথা ফেটে গিয়েছে।’’ তীর্থবাবুর মেয়ে তয়োস্মিতা গঙ্গোপাধ্যায় চোট পেয়েছে গালে। আতঙ্কিত তয়োস্মিতা কোনও রকমে বলল, ‘‘আমি ছিটকে পড়লাম সিটের নীচে। দেখলাম আমার গালে অনেকটা কেটে গিয়েছে। রক্ত ঝরছে গলগল করে। প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছিল। কে আমাকে উদ্ধার করল জানি না।’’

অন্য অভিভাবকদেরও অভিযোগ, বাসটি প্রথম থেকেই বেপরোয়া গতিতে চলছিল। দুর্ঘটনার সময়ে সেটির গতি ছিল ঘণ্টায় প্রায় ৬০ কিলোমিটার। প্রথমে বিটি রোডে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এক স্কুটারচালককে ধাক্কা মারে সেটি। সেখানে পুলিশ বাসটিকে ধরলেও ছেড়ে দেয়। তার পরে বাসটি আরও জোরে চলতে শুরু করে। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী শ্রেয়সী সেনগুপ্ত দুর্ঘটনায় জখম হয়েছে। আহত হয়েছেন তার মা ঝুমাদেবীও। তাঁর অভিযোগ, ‘‘এই বাসচালক নতুন। দিন কয়েক আগে থেকে তিনি বাসটি চালাচ্ছেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bus Accident School Bus Chitpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy