গ্রাফিক-শৌভিক দেবনাথ।
বেলাগাম জীবনযাত্রা এবং উচ্চাশা থেকেই মাসতুতো বোনকে খুন করে টাকা হাতানোর পরিকল্পনা করেছিল টিয়া। বুধবার জোকার ডায়মন্ড পার্কে চিকিৎসক অরূপকুমার দাসের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় ধৃত ঐন্দ্রিলা রায় ওরফে টিয়া এবং তার দুই সঙ্গীকে জেরা করে তাজ্জব তদন্তকারীরা।
পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় টিয়া তদন্তকারীদের জানিয়েছে, সে আর তার বন্ধু রূপম সমাদ্দার বেশ কিছুদিন ধরেই এক লপ্তে বেশ কিছু টাকা রোজগারের পরিকল্পনা করেছিল। সে নিজেই রূপমকে জানিয়েছিল, দুপুর বেলা একটা নির্দিষ্ট সময়ে মেসোমশাইয়ের বাড়িতে কাজের লোক ছাড়া কেউ থাকে না। সেখানে লুঠ করলে মোটা টাকা পাওয়া যাবে। সেই মতোই সে রূপমের সঙ্গে মিলে লুঠের পরিকল্পনা তৈরি করে। ফলতার একটি ডাকাতির মামলায় অভিযুক্ত পবিত্র সমাদ্দারকে জোগাড় করে আলিপুর আদালতের মুহুরি রূপম। জেরায় ধৃতেরা স্বীকার করেছে, পরিচারিকা কল্পনাকে খুন করার পরিকল্পনা নিয়েই গিয়েছিল তারা। তাই বাথরুম থেকে হঠাৎ টিয়ার মাসতুতো বোন শাল্মলী বেরিয়ে এলে তাকেও বটি এবং হাতুড়ির ঘা মেরে খুন করতেই চেয়েছিল তারা। পরিকল্পনা মতো লুঠ করে পালানোর সময় দু’জনেই রক্তাক্ত অবস্থায় সংজ্ঞাহীন অবস্থায় মেঝেতে পড়েছিলেন। জেরায় টিয়া এবং তার সঙ্গী পবিত্র স্বীকার করেছে, তারা ভেবেছিল দু’জনেই মারা গিয়েছে। তাই তাদেরহদিশ যে কেউ পাবে না সে বিষয়ে বেশ নিশ্চিন্ত ছিল তারা।
কিন্তু কেন এত বেপরোয়া হয়ে খুন করে লুঠের পরিকল্পনা করেছিল টিয়া?
আরও পড়ুন- মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে পাচারের পথে কলকাতায় ফের উদ্ধার কোটি টাকার ইয়াবা
আরও পড়ুন-বিদেশবাসের উচ্চাকাঙ্ক্ষা! আত্মীয় ডাক্তার পরিবারের সকলকে খুন করে লুঠের ছক কষেছিল টিয়া
তিনজনকে জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, টিয়া একমাত্র সন্তান। তাঁর বাবা কয়েক বছর আগে অবসর নিয়েছেন একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে। স্বচ্ছল অবস্থা। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই একটু বেলাগাম ছিল টিয়ার জীবনযাত্রা। পড়াশোনায় খুব একটা মন ছিল না। এয়ারপোর্ট এলাকার একটি নামী ইংরেজী মাধ্যম স্কুল থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর শিয়ালদহের একটি কনভেন্টেও ভর্তি হয়। কিন্তু সেখানে পড়া শেষ করেনি সে। যদিও সম্প্রতি সে দূরশিক্ষায় স্নাতক হয়েছে। কোনও চাকরি না করলেও, নিজের মোটা টাকার হাতখরচ জোগাতে নানা ধরনের ফাটকা রোজগারের পথ ধরেছিল সে। এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘টিয়া নিজেই স্বীকার করেছে যে, মোটা টাকা রোজগারের জন্য মাসাজ পার্লারে কাজ করতে পিছপা হয়নি সে।”
তদন্তকারীদের দাবি, এ রকম একটি মাসাজ পার্লারে তার সঙ্গে আলাপ আলিপুর আদালতের মুহুরি রূপমের সঙ্গে। সে-ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী। প্রথমে তারা পরিকল্পনা করেছিল, প্রোমোটিং এবং জমির কারবারে টাকা লগ্নি করবে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী টিয়া তার মেসোমশাই অরূপকুমার দাসের কাছে ১৯ লাখ টাকা চেয়েছিল। বলেছিল, কানাডায় পাকাপাকি থাকবে। তাই টাকা দরকার। কিন্তু সেই সময়ে অরূপবাবু টাকা দেননি। এর পরেই দ্রুত টাকা রোজগার করতে লুঠের পরিকল্পনা। জেরায় টিয়া জানিয়েছে, শুধু মেসোমশাই নয়, এ রকম আরও কয়েকটি লুঠের পরিকল্পনা ছিল তাদের। টিয়া কোনও ভাবে খবর পেয়েছিল অরূপবাবুর ভল্টে ৬০ লাখ টাকা রাখা আছে। সেটাই ছিল টার্গেট।
এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘প্রচণ্ড সিগারেটের নেশা টিয়ার। জেরার সময়েও বার বার সে সিগারেট চাইছিল। দিনে চার প্যাকেট সিগারেট লাগে ওর।’’ তদন্তকারীদের দাবি, দ্রুত গতির জীবন এবং পাল্লা দিয়ে উচ্চাশা ওই তরুণীকে অপরাধের পথে এগিয়ে দিয়েছে। জেরায় নিজের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে স্পষ্ট কোনও জবাব দেয়নি। এক বার জানিয়েছে, সে বিবাহিত। আবার কখনও দাবি করেছে, তার বিয়ে হয়নি। তবে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, বিয়ে হয়েছিল টিয়ার। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই দাম্পত্য অশান্তির জেরে বাপের বাড়ি ফিরে আসে সে।
জেরা করতে গিয়ে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, বুধবার দুপুরে পবিত্রকে সঙ্গে নিয়ে অরূপবাবুর বাড়ি ঢোকে টিয়া। সেই সময় টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর কাছে অপেক্ষা করছিল রূপম। তার কাছে রাখা ছিল টিয়া এবং পবিত্রর মোবাইল ফোন। যাতে পরে পুলিশের কাছে প্রমাণ করা যায় ওরা কেউ জোকায় অরূপবাবুর বাড়িতে যায়নি।
এক গোয়েন্দা কর্তা বলেন,‘‘যেহেতু ওরা ভেবেছিল যে শাল্মলী এবং কল্পনা মারা গিয়েছে, তাই নিশ্চিন্ত ছিল যে কেউ তাদের চিনতে পারেনি।” রাত ১২ টা নাগাদ রূপম টিয়াকে তার বাড়িতে পৌঁছে দেয়। পুলিশ আগে থেকেই ওত পেতে বসে ছিল সেখানে। পুলিশ পাকড়াও করে দু’জনকে। ওদের সাহায্যেই ডায়মন্ডহারবার থেকে রাতেই পাকড়াও করা হয় পবিত্রকে। জানা যায়, অরূপবাবুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে হাইল্যান্ড পার্কের কাছে একটি মলে নতুন জামা কাপড় কিনে পরনের জামা পাল্টে ফেলে টিয়া। তারপর সেই রক্তমাখা জামা এবং হাতুড়ি ফেলে দেয় গড়িয়ার কাছে একটা ভ্য়াটে। পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে সেই হাতুড়ি ও জামাকাপড় উদ্ধার করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy