প্রতীকী ছবি।
সব সময়ে গলায় যন্ত্রণা হত। যে কোনও খাবার গিলতে কষ্ট হত। এমনকি ঢোক গিলতেও পারতেন না। আতঙ্কে খাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বছর আটষট্টির অনুপম মুখোপাধ্যায়ের। ফলে ওজন কমছিল দ্রুত। রোগীকে বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন পরিজনেরা। এন্ডোস্কোপি করে দেখা যায়, ডান দিকের টনসিল ও জিভের গোড়ায় টিউমার আছে। যার বায়োপ্সি রিপোর্টে ধরা পড়ে, পলিমরফোস এডেনোকার্সিনোমা। কিন্তু মুখগহ্বরের (ওরাল) ক্যানসারে স্কোয়ামা সেল কার্সিনোমাই সচরাচর শোনা যায়।
তা হলে কী এই পলিমরফোস এডেনোকার্সিনোমা? চিকিৎসকেরা বলছেন, বিরল এই ক্যানসারের একমাত্র চিকিৎসা অস্ত্রোপচার। কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশনে কোনও ফল মেলে না। ফলে রোগীর ক্ষেত্রে এর চিকিৎসার জন্য অস্ত্রোপচারই ছিল একমাত্র পথ। গভীরে থাকা টনসিল থেকে যা বার করে আনতে ওপেন সার্জারি ছিল উপায়।
“ডায়াবিটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ওই রোগীকে দীর্ঘদিন হাসপাতালে রাখলে দিলে কোভিড সংক্রমণের আশঙ্কা ছিল। সেই সঙ্গে অস্ত্রোপচারের শারীরিক ধাক্কা, পরবর্তী পর্যায়ে ট্র্যাকিয়োস্টোমির কষ্ট অনেক রোগীই নিতে পারেন না।”— বলছিলেন আটষট্টি বছরের ওই রোগীর চিকিৎসক, হেড ও নেক ক্যানসার শল্য চিকিৎসক শান্তনু পাঁজা।
সে সব ভেবেই অনুপমবাবুর পরিবারকে রোবটিক সার্জারির কথা বলা হলে তাঁরা রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। তার পরেই মুখের ভিতরে পাঁচ মিলিমিটার মাপের রোবটের হাত ঢুকে এই অস্ত্রোপচার করে। আলাদা কনসোল থেকে অস্ত্রোপচার নিয়ন্ত্রণ করেন শল্য চিকিৎসক। আসলে কোনও কাটাছেঁড়া না করে ওই সরু জায়গায় তাঁর হাত ঢুকে সূক্ষ্ম কাজ করতে পারবে না। সেই জন্যই রোবটের হাতকে নিজের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এনে হয় এই অস্ত্রোপচার। এর ফলে অতিরিক্ত যন্ত্রণার অধ্যায় পেরোতে হয়নি রোগীকে। বরং দিন সাতেক হাসপাতালে থাকার পরে বাড়ি ফিরেছেন তিনি।
ক্যানসার শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলছেন, “এই ক্যানসার বিরল অবশ্যই। কোভিডের কথা মাথায় রেখে যে ভাবে রোবটিক সার্জারির মাধ্যমে দ্রুত চিকিৎসা করে রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, সেটিও বহু মানুষকে চিকিৎসার সাহস জোগাবে।”
অনুপমবাবুর জামাই সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলছেন, “প্রথাগত পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করলে রোগীকে অনেক কষ্ট পেতে হত। ওঁর ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেক বেশি ছিল। অতিমারির কথা ভেবে তাই রোবটিক সার্জারিতে রাজি হয়ে যাই। এখন গলায় একটু ব্যথা আছে। তবে খাওয়াদাওয়া স্বাভাবিক ভাবে করছেন, সেটাই বড় কথা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy