Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
medicine

Rare disease: বছরে ৬০ লক্ষের ওষুধের সাহায্য চেয়ে ফিরে আসছেন

চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছেন, বিরল রোগ স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফিতে (এসএমএ) আক্রান্ত আত্রেয়ী।

আত্রেয়ী।

আত্রেয়ী। নিজস্ব চিত্র

জয়তী রাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২২ ০৬:৩১
Share: Save:

বয়স সবে চার। নিজে হাঁটতে গিয়ে টলমল করে সে। একটু গিয়েই বলে ওঠে, ‘‘বাবা, আমাকেধরো। আর পারছি না।’’ বসা অবস্থা থেকে দাঁড়াতে আগে যে চেষ্টাটা সে করত, তাতেও এখন ক্লান্তি নেমেছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এখনই ওষুধ শুরু না হলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পেশির কর্মক্ষমতা হারিয়ে পঙ্গু হয়ে যাবে আত্রেয়ী। তবে ওষুধের জন্য ছোট্ট আত্রেয়ী সিংহরায়ের প্রয়োজন বছরে ৬০ লক্ষ টাকা! কে দেবে সেই টাকা? উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না ব্যারাকপুরের দেবপুকুরের তথাগত সিংহরায়। ইতিমধ্যেই মেয়ের চিকিৎসার জন্য সাহায্য চেয়ে সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাকে চিঠি লিখেছেন তিনি।

চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছেন, বিরল রোগ স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফিতে (এসএমএ)আক্রান্ত আত্রেয়ী। এই রোগ জিনঘটিত। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আজীবন উপযুক্ত ওষুধের প্রয়োগে রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। বর্তমানে একটি সংস্থার তৈরি সেই ওষুধ মিলছে এ দেশে। কিন্তু তার খরচ আকাশছোঁয়া। এসএমএ আক্রান্তদের জন্য এ দেশে বিক্রির অনুমতি পাওয়া সেটিই একমাত্র খাওয়ার ওষুধ। রোগীর বয়স এবং ওজন বুঝে চিকিৎসকেরা সেটি দিয়ে থাকেন। একটি বোতলের দাম দু’লক্ষ টাকা। আত্রেয়ীর ওজন অনুযায়ী, বছরে ৬০ লক্ষ টাকার ওষুধ লাগবে বলে জানাচ্ছেন তার চিকিৎসক।

জন্মের কয়েক মাস পরে আত্রেয়ীকে হামাগুড়ি না দিতে দেখে খটকা লেগেছিল তথাগত এবংতাঁর স্ত্রী ঋতুপর্ণার। বুক দিয়ে ঘষে চলত সে। সেই শুরু চিকিৎসার। সন্তোষজনক ফল না পেয়ে একাধিক চিকিৎসকের কাছে তাঁরা ছুটেছেন। একের পর এক পরীক্ষাতেও ত্রুটি ধরা পড়েনি। শহরেরই এক বরিষ্ঠ শিশু-স্নায়ুরোগ চিকিৎসকের কথায় এসএমএ পরীক্ষা বাদেযাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হয়। কিন্তু ওই চিকিৎসক হাত তুলে নেন বলেই অভিযোগ আত্রেয়ীর বাবার। অবশেষে দিল্লি এমস থেকে অবসর নেওয়া, শিশুদের স্নায়ুরোগের এক চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি জানান, আত্রেয়ী এসএমএ আক্রান্ত। নিশ্চিত হতে রক্তের এসএমএ পরীক্ষা হয়। রিপোর্ট আসে পজ়িটিভ।

এসএমএ টাইপ থ্রি আক্রান্ত হওয়ায় এখনও আত্রেয়ীর শরীরে রোগের উপস্থিতি তেমন বোঝা যাচ্ছে না বলে মত চিকিৎসকদের।বর্তমানে তাকে দেখছেন শিশুরোগ চিকিৎসক সংযুক্তা দে। তিনি বলছেন, ‘‘শিশুটির শারীরিক অবস্থা যে পর্যায়ে আছে, এত দিনে ওষুধ পেলে দ্রুত সাড়া দিত। ওই সময়ে এসএমএ-র অন্য একটি ওষুধ নির্মাতা সংস্থা, এ দেশে কমপ্যাশনেট গ্রাউন্ডেবিনামূল্যে অনেক রোগীকে ওষুধ দিচ্ছিল। ওই ওষুধটি ইনজেকশন হিসাবে স্পাইনের ভিতরে কয়েক মাস অন্তর দেওয়া হয়।’’ এ দেশে ওই ওষুধ শুধুই কমপ্যাশনেট গ্রাউন্ডে দেওয়া হচ্ছে। তার জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষা করতে হবে। অপেক্ষা করলে আত্রেয়ীর শারীরিক সমস্যা উত্তরোত্তর বাড়বে। ফলে খাওয়ার ওষুধ শুরু হওয়া জরুরি বলে জানাচ্ছেন সংযুক্তা।

এসএমএ রোগীদের অভিভাবকদের সংগঠন, ‘কিয়োর এসএমএ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া’-র সহ প্রতিষ্ঠাতা মৌমিতা ঘোষ বলছেন, ‘‘আত্রেয়ীর চিকিৎসা পেতে দেরি হলে ধীরে ধীরে বিকলাঙ্গ হয়ে দৈনন্দিন কাজ করার সব ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। ওর মতো আরও বহু বাচ্চা আছে, তাদেরও দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন।’’ মৌমিতার প্রস্তাব, ‘‘রাজ্যে দুর্গা, কালী বা জগদ্ধাত্রীপুজোর মতো উৎসবে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়, সেই সব পুজো কমিটি একজোট হয়ে কি বিরল রোগের চিকিৎসার জন্য তহবিল গড়তে পারে না? তা হলে তো কিছু শিশু চিকিৎসা পেতে পারে। এই ভাবনা কবে জাগবে?’’

এ সব বোঝে না আত্রেয়ী। অন্য বাচ্চাদের খেলতে দেখে আর জানলা ধরে আকাশ দেখে দিন কাটছে তার। পরিকাঠামো না থাকার অজুহাত দেখিয়ে একের পর এক স্কুল তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। অবশেষে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ভর্তি নিয়েছে। আর বাকি পথ? জানা নেই কারও।

অন্য বিষয়গুলি:

medicine Rare Disease
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy