পানিপথ: চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে হাঁটুজল ঠেলেই এগোনোর চেষ্টা পথচারীর। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
আশঙ্কা ছিল। কিন্তু ‘বর্ষাসুর’-এর ষড়যন্ত্র খুব একটা কাজে আসেনি। কখনও সকাল থেকে কালো মেঘে আকাশ ঢেকে, কখনও বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু জায়গায় জল ঢেলে ‘ভয়’ দেখানোর চেষ্টা করেও আটকানো যায়নি পুজো-জনতাকে। একাদশী থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হলেও তা নিয়ে অবশ্য তেমন আক্ষেপ নেই মানুষের।
কারণ, সব মিলিয়ে মোটের উপর চার দিন ঘরের মেয়ে উমাকে নিয়ে আনন্দেই কেটেছে বাঙালির। যদিও বিদায়ের আবহ, ভারাক্রান্ত মনের সুযোগ নিয়ে দশমীর সন্ধ্যায় কিছু ক্ষণ নিজের কেরামতি দেখিয়ে ছিল বর্ষাসুর। তাতেও দমানো যায়নি আট থেকে আশিকে। বিজয়ার মিষ্টিমুখ, কোলাকুলির পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেচ্ছার জোয়ারে ভেসে গিয়েছে সব কিছু। ব্যর্থ হয়েছিল পুজো-জনতার আনন্দে জল ঢালার চক্রান্তও।
তবে সপরিবার দুর্গা কৈলাসের পথে কিছুটা এগিয়ে যেতেই ফের স্বমূর্তি ধারণ করে বঙ্গে ফিরেছে বর্ষাসুর। মঙ্গলবার রাত থেকেই দফায় দফায় জল ঢেলে নিজের কেরামতি দেখাতে শুরু করেছে সে। হাওয়া অফিস অবশ্য জানাচ্ছে, বর্ষার বিদায়-লগ্ন শুরু হয়েছে। যদিও তারই মধ্যে উত্তরবঙ্গ থেকে ওড়িশা পর্যন্ত তৈরি হয়েছে নিম্নচাপ অক্ষরেখা। শেষ বেলার বর্ষা ও নিম্নচাপ অক্ষরেখার সেই জোড়া ফলায় বুধবার কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের একাংশ ভাসল ভারী বৃষ্টিতে। সবচেয়ে বেশি ভুগল দুই ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর ও নদিয়া।
আমজনতার আক্ষেপ না থাকলেও একাদশীতে বঙ্গ ভাসাতে পেরে অবশ্য বাঁকা হাসি হাসছে বর্ষাসুর। কিন্তু কত দিন চলবে তার কেরামতি? আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশ দাস জানান, এই বৃষ্টি বেশি দিন স্থায়ী হবে না। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে কমবে তার মাত্রা। কাল, শুক্রবার থেকে আকাশ পরিষ্কার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তা না হয় হল। কিন্তু ফের কালো মেঘের আড়াল থেকে আসন্ন দীপাবলি আর জগদ্ধাত্রী পুজোয় বর্ষাসুর জল ঢালবে কি না, তা নিয়ে একটা সংশয় তৈরি হয়েছে।
বঙ্গ থেকে বর্ষা কবে বিদায় নেবে, তা নিয়ে অবশ্য এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলতে চাইছেন না আবহবিদেরা। তাঁদের মতে, ধাপে ধাপে বর্ষা যেমন দেশে ছড়ায়, তেমনই ধাপে ধাপে বিদায় নেয়। কাজেই বাংলা থেকে বিদায় নিতে তার কয়েক দিন সময় লাগবেই। কিন্তু বর্ষাকে বিদায় জানানোর জন্য বায়ুপ্রবাহের বদল-সহ যে উপাদানগুলি প্রয়োজন, তা ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। অন্য দিকে মৌসম ভবনের খবর, উত্তর-পশ্চিম ভারতের একাংশ থেকে বর্ষা ইতিমধ্যেই বিদায় নিতে শুরু করেছে।
তবে বর্ষাসুর কবে পুরোপুরি বঙ্গ ছাড়বে তা নিয়ে সংশয় যেমন রয়েছে, তেমনই একাদশীতে তার দাপটে যথেষ্ট নাস্তানাবুদ হতে হল বেশ কিছু বড় পুজোর উদ্যোক্তাদের। নিয়ম মেনে দশমীতে তাদের ঘট বিসর্জন হলেও মণ্ডপে রয়েছে প্রতিমা। কারণ, কাল শুক্রবার রেড রোডে দুর্গাপুজোর কার্নিভালে অংশ নেবে ওই সব পুজো কমিটি। পুজোর আগে থেকেই বর্ষাসুরের চোখ রাঙানির বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়ে রেখেছিল হাওয়া অফিস। সেই দুশ্চিন্তা মাথাই নিয়েই দর্শনার্থী টানার লড়াইয়ের প্রস্তুতিতে মেতেছিলেন শহর থেকে শহরতলির পুজো উদ্যোক্তারা। সেই পরীক্ষায় উতরোলেও কার্নিভালে চমক দেওয়ার প্রস্তুতি-লগ্নে ফের দুশ্চিন্তার মেঘ জমাট বেঁধেছে অংশগ্রহণকারী পুজো কমিটিগুলির মধ্যে। এক পুজো কমিটির উদ্যোক্তার কথায়, ‘‘বর্ষার চক্রান্তে আমাদের দফারফা হওয়ার জোগাড়। টানা বৃষ্টি হলে তো কার্নিভালের প্রস্তুতিতেও সমস্যা।’’
যদিও শুক্রবার থেকে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে আকাশ ফর্সা হবে, হাওয়া অফিসের এই বার্তায় কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে আমজনতা। পাশাপাশি বাকি উৎসবের মরসুমে ‘বর্ষাসুর’ যাতে আর কোনও চক্রান্ত না করে এ বার বিদায় নেয়, তার জন্য আট থেকে আশি জপছেন ‘দুগ্গা-দুগ্গা’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy