প্রতীকী ছবি
কয়েকটি রুটে বিশেষ ট্রেন পরিষেবা চালু হলেও শিয়ালদহ ও হাওড়া শাখায় এখনও বন্ধ লোকাল ট্রেন। কবে পরিষেবা চালু হবে তা কেউ জানেন না। এমন পরিস্থিতিতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে লোকাল ট্রেনের উপরে নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করা হকার এবং ফেরিওয়ালাদের জীবন। লোকাল ট্রেনের মতোই খেলনা, বই, পেন, লজেন্স, ফল, মিষ্টি কিংবা রুমাল, বাদাম, চানাচুর, চা-বিস্কুট, ফটাসজল বিক্রি করা হকারদের জীবনের চাকাও এখন থেমে রয়েছে। বেকার হয়ে গিয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার হকার।
নরেন্দ্রপুরের বাসিন্দা সুকুমার বিশ্বাস দু’দশকের বেশি সময় ধরে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ট্রেনে ট্রেনে সেফটিপিন, রেশন কার্ডের কভারের মতো নানা জিনিস ফেরি করতেন। লকডাউন শুরুর পর থেকে বেকার সুকুমারবাবু। সংসারে আরও চার সদস্য রয়েছেন। তাই গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পাড়ায় ঘুরে ঘুরে মাছের ব্যবসা করছেন তিনি। রবিবার মাছ বিক্রির ফাঁকে সুকুমারবাবু বলেন, ‘‘এই ভাবে সংসার টানা যাচ্ছে না। সরকারি কিছু সাহায্য মিলছে তাই দিয়ে আপাতত চলছে।’’
একই অবস্থা রয়েছেন কসবার শম্ভু রায়। বালিগঞ্জ স্টেশনের উপরে তাঁর মিষ্টির দোকান ছিল। যে দোকান এখন বন্ধ পড়ে রয়েছে। তিরিশ বছরের বেশি সময় ধরে ওই ব্যবসা করেছেন তিনি। বয়সের কারণে এখন সব কাজ করতে পারেন না। তা-ও যখন যা কাজ পাচ্ছেন তাই করছেন। শম্ভু বলেন, “বিভিন্ন জায়গা থেকে সাহায্য আসছে বলেই বেঁচে আছি।”
বারাসত শাখায় ট্রেনে ফল বিক্রি করা অমিত এখন পাড়ায় পাড়ায় তা সরবরাহ করেন। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার হকার্স ইউনিয়নের নেতা তাপস চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁরা সোনারপুর-ক্যানিং শাখার ট্রেনের হকারদেরও বিভিন্ন জায়গায় আনাজ, মাছ নিয়ে বসার সুযোগ করে দিয়েছেন। তবে সকলের জন্য সেই ব্যবস্থা করা যায়নি।
পেটের দায়ে অনেকে আবার পেশা বদলাতেও বাধ্য হচ্ছেন। বারুইপুরের আব্দুল আলি লাদেন। ট্রেনে চানাচুর, বাদাম বিক্রি করতেন। এখন হকারি ছেড়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ঘুগনি বিক্রি করছেন। কিন্তু তাতে খুব একটা সুবিধা হচ্ছে না বলেই তিনি জানাচ্ছেন।
কবে ট্রেন চালু হবে কিংবা চালু হলেও পরিস্থিতি আগের মতো থাকবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান হকারদের একটি বড় অংশ। ইতিমধ্যে পশ্চিম রেলে লোকজন নিয়ে ট্রেন পরিষেবা চালু হলেও ট্রেন কিংবা প্ল্যাটফর্মে যাত্রী ও রেলকর্মী ছাড়া সকলের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে ছোঁয়াচের আশঙ্কায়। এ রাজ্যের ট্রেন পরিষেবা চালু হলে ওই পদক্ষেপ করা হবে বলে রেল সূত্রের খবর।
শহর ও শহরতলির বহু স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে নানা ধরনের সামগ্রী নিয়ে স্টল রয়েছে হকারদের। সেগুলির কী হবে, তা জানেন না তাঁরা। বালিগঞ্জের একটি হকার সংগঠনের নেতা আশিষ হাজরার কথায়, ‘‘রেলকে যাত্রী-সুরক্ষার কথা মাথায় রাখতে হচ্ছে। ফলে আমরা জোর করে ট্রেন চালাতে বলতে পারি না। আবার আমাদের অবস্থাও শোচনীয়।’’
আইএনটিটিইউসি-র রেলওয়ে হকার্স ইউনিয়নের বালিগঞ্জ ইউনিটের সম্পাদক গোপাল সরকার আবার কয়েক হাজার হকার এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের কথা মাথায় রেখে সরকারের কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করেছেন। একই দাবি করছেন দমদম স্টেশনে চপের ব্যবসা করা শান্ত সাহা। তিনি বলেন, ‘‘সরকার যদি আমাদের পাশে দাঁড়ায় তা হলে উপকার হয়।’’
লকডাউনের জেরে ট্রেন বন্ধ। আবার ট্রেন চালু হলে ব্যবসা করা যাবে কি না, সেই অনিশ্চয়তার মধ্যেই রেলের বিরুদ্ধে নিজেদের জীবিকার সুরক্ষার কথা ভেবে কাল, মঙ্গলবার শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার বিভিন্ন স্টেশনে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে হকার্স ইউনিয়নের একাংশ।
শিয়ালদহ স্টেশনে ডাব বিক্রি করেন আলাউদ্দিন। তাঁর কথায়, ‘‘পুরো বসে আছি। জমানো টাকা দিয়ে সংসার চলছে। কিন্তু সে আর কত দিন? নতুন করে কিছু
করতেই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy