ফাইল চিত্র।
রবীন্দ্র সরোবরে রোয়িং করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত সৌরদীপ চট্টোপাধ্যায়ের বাবা সৌভিক চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বুধবার দেখা করলেন লেক ক্লাবের প্রতিনিধিরা। সৌভিকবাবু জানান, লেক ক্লাবের প্রতিনিধিরা তাঁকে জানিয়েছেন, সে দিন নৌকায় যিনি সহকারী ছিলেন (যাঁকে ‘কক্স’ বলা হয়), তিনি খুব বেশি অভিজ্ঞ নন। মাত্র ২০ বছরের এক যুবক সে দিন ওই নৌকায় কক্সের ভূমিকায় ছিলেন। ক্লাবের এই স্বীকারোক্তির পরেই প্রশ্ন উঠেছে, নৌকা উল্টে গেলে কী করণীয়, সে ব্যাপারে জরুরি প্রশিক্ষণ কি ওই যুবকের ছিল? লেক ক্লাবের এক কর্তা দেবব্রত দত্ত বলেন, ‘‘কক্সের প্রশিক্ষণে কোনও খামতি ছিল না। এ কাজে তিনি যথেষ্ট যোগ্য। তবে দুর্ঘটনা ঘটলে অনেক সময়ে কিছু করার থাকে না।’’
সৌভিকবাবু এবং শহরের অভিজ্ঞ রোয়ারদের একাংশের মতে, রবীন্দ্র সরোবরের মাঝে যদি নৌকা উল্টে যায়, তা হলে সাঁতার জানা থাকলেও পাড় পর্যন্ত সাঁতরে আসা কঠিন। বরং নৌকা ধরে ভেসে থাকতে পারলে অনেক সহজেই উদ্ধার পাওয়া সম্ভব। সৌভিকবাবু বলেন, ‘‘ঘটনাটি ঘটে গিয়েছে গত শনিবার। কিন্তু, আমাকে একটা বিষয়ই কুরে কুরে খাচ্ছে। তা হল, নৌকা উল্টে যাওয়ার পরে ওদের নৌকা ধরে ভাসতে বলা হল না কেন? কক্স তো শুনেছি নৌকা ধরেই ভেসে ছিলেন। ওরাও তো নৌকা ধরে ভেসে থাকলে প্রাণে বাঁচত।’’
এই ঘটনায় কোনও মতে উদ্ধার পাওয়া, সাউথ পয়েন্টের ছাত্র দেবাংশ চক্রবর্তী জানিয়েছে, ওই নৌকায় সাউথ পয়েন্টের চার পড়ুয়া বাদে কক্সের দায়িত্বে যিনি ছিলেন, নৌকা উল্টোনোর পরে তিনি সাঁতার কাটার চেষ্টাও করেননি। নৌকা ধরেই ভেসে ছিলেন। সৌভিকবাবুর কথায়, ‘‘আমি ওই কক্সের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করছি না। এখন আর পারস্পরিক দোষারোপ করে কী-ই বা হবে? কিন্তু যে সমস্ত বিধি মেনে চলার কথা, সেগুলি সব ঠিক মতো মানা হল না কেন?’’
সৌভিকবাবু জানান, এ দিন লেক ক্লাবের তরফে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে এক প্রতিনিধি জানান, তিনি ১৯৬৭ সাল থেকে রবীন্দ্র সরোবরে রোয়িং করছেন। তাঁকে যিনি রোয়িংয়ের প্রাথমিক পাঠ দিয়েছিলেন, তিনি শুরুতেই বলে দিয়েছিলেন, কোনও কারণে সরোবরের মাঝামাঝি জায়গায় নৌকা উল্টে গেলে যতই ভাল সাঁতার জানা যাক, সাঁতরে পাড়ে আসতে গেলে সমস্যা হতে পারে। তাই নৌকার আংটা ধরে ভেসে থাকটাই কর্তব্য। সৌভিকবাবুর প্রশ্ন, ‘‘এই প্রাথমিক পাঠটুকুও কি ওদের দেওয়া যেত না?’’
আজ, বৃহস্পতিবার লালবাজারে কেএমডিএ, কলকাতা পুলিশ ও ক্লাব কর্তৃপক্ষের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা। রবীন্দ্র সরোবরে ভবিষ্যতে রোয়িং হলে রোয়ারদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে, তা নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হবে বলে সূত্রের খবর। সৌভিকবাবু বলেন, ‘‘গঠনমূলক কিছু আলোচনায় অংশ নিতে ওই বৈঠকে আমিও যোগ দিতে চাই। আমার তো আর হারানোর কিছু নেই। গত কয়েক দিনে ছেলের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে বুঝতে পেরেছি, রোয়িংয়ের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ের উন্নতি ঘটানো দরকার। আমি এ নিয়ে ওই বৈঠকে কিছু বলতে চাই।’’
সৌভিকবাবুর মতে, রোয়িংয়ের সময়ে কেউ বিপদে পড়লে তাঁকে উদ্ধারের জন্য প্যাডেল বোট নয়, স্পিডবোট থাকা জরুরি। মাঝির সংখ্যাও বাড়ানো দরকার। রোয়িংয়ের কক্স যিনি হবেন, তাঁর যথেষ্ট অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ থাকাটাও জরুরি। সৌভিকবাবু বলেন, ‘‘রোয়িং করতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আর কারও সন্তান যেন এ ভাবে বেঘোরে প্রাণ না হারায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy