সিদ্ধান্ত: দুই ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যুর পরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে রোয়িং প্রতিযোগিতা। রবীন্দ্র সরোবর থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে নৌকা। রবিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
রবীন্দ্র সরোবরে রোয়িং করতে নেমে ঝড়-বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়া দুই কিশোরকে গ্রাস করল কি ক্লান্তিই? সাঁতার জানলেও প্রবল ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে লড়ে সাঁতরে আসার দৈহিক জোর কি তাদের ছিল না? রবিবার এই প্রশ্নই ঘুরপাক খেল রোয়িংয়ের সঙ্গে যুক্তদের অনেকের মনে। জানা গিয়েছে, সকালের সেমিফাইনালের পরে আরও দু’দফায় রোয়িংয়ের জন্য জলে নেমেছিল পূষন সাধুখাঁ এবং সৌরদীপ চট্টোপাধ্যায়। এক দফায় প্রায় এক কিলোমিটার রোয়িং করে এসে দ্বিতীয় বারওই পথই ঘুরে আসার জন্য বেরিয়েছিল তারা।
রোয়িংয়ের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই জানাচ্ছেন, এই খেলায় এমনিতেই প্রচণ্ড শারীরিক দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। দু’হাতে নাগাড়ে দাঁড় টেনে যাওয়ায় নির্দিষ্ট সময় অন্তর হাতকে বিশ্রাম দেওয়ার কথা। সেই কারণে একটি প্রতিযোগিতামূলক খেলা শেষ হলে সে দিন বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দেন প্রশিক্ষকেরা। এমনকি, অনুশীলন করার জন্যও জলে নামা উচিত নয় বলেই মত তাঁদের।
রবীন্দ্র সরোবরের এক রোয়িং প্রশিক্ষক নির্মল ঘোষ জানান, কলকাতায় মূলত স্কাল (এক জনই দাঁড় বাইবেন), ডাবল স্কাল (দাঁড় বাহক দু’জন), পেয়ার্স (জোড়ায়বসলেও এক জন ডান দিকে দাঁড় বাইবেন, অন্য জন বাঁ দিকে) এবং ফোর্স (চার জন পর পর বসে দু’হাতেই দাঁড় বাইবেন)— এই চার ধরনের নৌকা ব্যবহার করা হয়। ফোর্সে এক জন নির্দেশক বা কক্স থাকেন। দাঁড় বাহকদের তিনি নির্দেশ দিয়ে থাকেন। নির্মলবাবু বলেন, ‘‘পারস্পরিক বোঝাপড়া এই খেলার মূল। একসঙ্গে দাঁড় টানা না হলে নৌকা এগোবে না। সমান তালে, সমান জোরে দাঁড় টানতে হয়। শারীরিক গঠন যাঁর যেমনই হোক, নিরন্তর সমান জোর দিয়ে দাঁড় টানা যথেষ্ট ক্লান্তিকর।’’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লেক ক্লাবের আর এক প্রশিক্ষক বললেন, ‘‘যেখানে বসে দাঁড় টানা হয়, সেটা ওঠানামা করে। ফলে শরীরের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখাও বড় ব্যাপার। এ জন্য নৌকার নীচে এক জায়গায় ভেলক্রো দিয়ে পা আটকানোথাকে। কারণ, পা নড়লে শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে যেতে পারে। সব কিছু ঠিক রেখে লাগাতার নৌকা চালিয়ে যাওয়া কম ধকল নয়।’’ওই প্রশিক্ষকের দাবি, ‘‘যেহেতু এই নৌকাগুলি খুব কম চওড়া হয়, তাই প্রথমেই বলা হয়, যা-ই হোক না কেন, নৌকা ছেড়ে যাওয়া চলবে না। উল্টে গেলে নৌকা ধরে থাকতে হবে। তা হলে সহজেই ভেসে থাকা যাবে। পিছনে থাকা উদ্ধারকারী দলই তুলে নেবে। অথচ শনিবার কোনও উদ্ধারকারী দল ছিল না। তা ছাড়া হাওয়ার তোড়ে নৌকাই অনেক দূরে উড়ে গিয়েছিল। তবু ভেসে থাকা যেত, কিন্তু ঝড়ে ওই শারীরিক ধকল নিয়ে সাঁতার কেটে ফেরার চেষ্টা করতেই বিপত্তি ঘটে!’’
ছোট ছেলে সৌরদীপের আকস্মিক মৃত্যুতে ক্লান্তির তত্ত্ব মানতে পারছেন না বাবা সৌভিক চট্টোপাধ্যায়।তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ক্লান্ত হলেই বা, কেন উদ্ধারের ব্যবস্থা থাকবে না?’’ এক সময়ে আন্তঃস্কুলরোয়িংয়ে অংশ নেওয়া অনন্যা ভট্টাচার্য নামে এক মহিলা অভিজ্ঞতার কথা শোনাতে গিয়ে বললেন, ‘‘কমলা গার্লস স্কুলে পড়তাম। লেক ক্লাবের তরফে রোয়িং প্রতিযোগিতায়দল পাঠানোর জন্য স্কুলে যোগাযোগ করা হয়েছিল। ২০০৭ পর্যন্ত আমিও লেকে রোয়িং করেছি। তখন সাঁতার না জানলেও প্রতিযোগিতায় নামা যেত। শুধু বলে দেওয়া হত, ‘সাঁতার জানো বা না জানো, উল্টে গেলেও নৌকা ছেড়ে যাওয়া চলবে না।’ কোনও রকম সাহায্য নেই, অথচ রোয়িং করতে নেমে ঝড়-বৃষ্টিতে পড়েছি আমরাও!— আজ বার বার মনে হচ্ছে, সৌভাগ্য যে আমাদের কিছু হয়নি!’’
লেক ক্লাবের জয়েন্ট অনারারি সেক্রেটারি দেবব্রত দত্ত বললেন, ‘‘এখন সাঁতার না জানলেরোয়িংয়ে নেওয়াই হয় না। স্কুল থেকে পাঠানোর পরে আমরা ছেলে-মেয়েদের ধরে ধরে নিজেদের পুলে সাঁতার কাটতে বলি। যে দুই কিশোর মারা গিয়েছে, তারা দু’জনেই ভাল সাঁতার জানত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy