Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
R G Kar Hospital Incident

চাপে ইস্তফা আরজি করের অধ্যক্ষ সন্দীপের, দাবি: স্বেচ্ছায় ছেড়েছেন, পড়ুয়াদের দাবি: লিখিত চাই

আরজি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ পদত্যাগ করলেন। সোমবার সকালে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, কারও চাপে নয়, স্বেচ্ছায় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

পদত্যাগ আরজি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষ  সন্দীপ ঘোষের।

পদত্যাগ আরজি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৪ ১০:৩২
Share: Save:

জুনিয়র চিকিৎসকদের লাগাতার আন্দোলনের চাপে পদত্যাগ করলেন আরজি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। সোমবার সকালে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, কারও চাপে নয়, স্বেচ্ছায় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে অধ্যক্ষের এই ইস্তফার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রী এবং জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি, লিখিত আকারে পদত্যাগপত্র জমা দিতে হবে সন্দীপকে। মুখের কথায় তাঁরা পদত্যাগ মানতে নারাজ। সূত্রের খবর, পদত্যাগপত্র জমা দিতে স্বাস্থ্য ভবনে গিয়েছেন সন্দীপ।

ইস্তফা ঘোষণা করে সোমবার সাংবাদিকদের সামনে সন্দীপ বলেন, ‘‘আমার ইস্তফাই ছাত্র-ছাত্রীদের কাম্য ছিল। সারা রাজ্যের এটাই কাম্য ছিল বলে আমার মনে হয়েছে। আশা করব, এ বার ছাত্র-ছাত্রী এবং জুনিয়র চিকিৎসকেরা কাজে ফিরবেন। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন মাধ্যমে আমি যে কটূক্তি সহ্য করেছি, আমার পরিবার, সন্তানেরা যা সহ্য করেছে, তাতে বাবা হিসাবে আমি লজ্জিত। তাই আমি পদত্যাগ করলাম। আশা করি আপনারা ভাল থাকবেন।’’

স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন বলে জানালেও আরজি করের ঘটনায় সন্দীপ ‘রাজনীতির খেলা’ দেখছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার মুখে কথা বসিয়ে রাজনীতির খেলা চলছে। বিরুদ্ধ গোষ্ঠী এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক খেলায় নেমেছে। আমি কোনও দিন এ সব খেলা খেলিনি। আমি সরকারি কর্মচারী। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সেই দায়িত্ব পালন করব। আশা করব, ছাত্র-ছাত্রীরা শীঘ্রই কাজে যোগ দেবেন।’’

অধ্যক্ষের পদত্যাগের খবর পেয়ে আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, তাঁরা মুখের কথা বিশ্বাস করেন না। অধ্যক্ষের লিখিত পদত্যাগপত্র দেখতে চান। সেই সঙ্গে অধ্যক্ষকে ক্ষমা চাইতে হবে বলেও জানাচ্ছেন তাঁরা। আন্দোলনকারীদের দাবি, এই ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত যেন কোনও প্রাতিষ্ঠানিক পদে না থাকেন সন্দীপ। তাতে তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে। এখনই আন্দোলন উঠছে না। আন্দোলনরক এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘মুখের কথায় আমরা বিশ্বাস করি না। আমাদের লিখিত চাই। সব দাবি না মেনে নেওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। কারণ, অধ্যক্ষের পদত্যাগ আমাদের একমাত্র দাবি ছিল না।’’

উল্লেখ্য, আরজি কর হাসপাতালে যুবতী চিকিৎসককে কর্তব্যরত অবস্থায় ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার প্রতিবাদে গত শুক্রবার থেকে আন্দোলনে নেমেছেন বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকেরা। প্রথমে তাঁরা জরুরি বিভাগ বাদে অন্যান্য বিভাগে কর্মবিরতি ঘোষণা করেছিলেন। পরে সোমবার থেকে জরুরি বিভাগেও কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে। বিক্ষোভরত চিকিৎসকদের দাবি, উপযুক্ত তদন্তের মাধ্যমে চিকিৎসক হত্যায় দোষীকে কঠোর শাস্তি দেওয়া এবং হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ ছাড়াও, হাসপাতালের সুপার, অধ্যক্ষ-সহ একাধিক আধিকারিকের পদত্যাগের দাবি জানান আন্দোলনকারীরা। সুপারকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় রবিবারই। সোমবার সকালে অধ্যক্ষও পদত্যাগ করলেন।

গত কয়েক দিন ধরে আরজি করের ঘটনা নিয়ে সমাজমাধ্যমে নানা তত্ত্ব উঠে এসেছে। অনেকেই পুলিশের বক্তব্য মানতে পারছেন না। ঘটনার সঙ্গে এক জন নন, একাধিক ব্যক্তি জড়িত বলে সমাজমাধ্যমে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকে। আরজি করের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ করা হয়েছে। অনেকের দাবি, হাসপাতালে যথেষ্ট প্রভাবশালী অধ্যক্ষ। ইস্তফার কথা জানিয়ে সমাজমাধ্যমের সে সব অভিযোগ সম্বন্ধে নিজের বক্তব্য জানিয়েছেন সন্দীপ। তাঁর বক্তব্য, গত কয়েক দিন ধরে তাঁকে সমাজমাধ্যমে নানা কটূক্তি সহ্য করতে হয়েছে। এতে তাঁর পরিবারও বিধ্বস্ত। সেই লজ্জার হাত থেকে বাঁচতেই ইস্তফার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান সন্দীপ। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক খেলার অভিযোগও করেছেন কিছু ‘স্বার্থান্বেষী বিরুদ্ধে গোষ্ঠী’র বিরুদ্ধে।

সোমবার সকাল থেকে আরজি কর-সহ বিভিন্ন হাসপাতালে জুনিয়র চিকিৎসকদের বিক্ষোভ চলছে। স্লোগান উঠছে, ‘নো সেফ্‌টি নো ডিউটি’। যার বাংলা তর্জমা করলে হয়, ‘নিরাপত্তা না পেলে পরিষেবা নয়’। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে লাগাতার এই বিক্ষোভের প্রভাব পড়ছে রোগী পরিষেবাতেও। দূরদূরান্ত থেকে চিকিৎসার জন্য এসেও অনেককে ফিরে যেতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি ক্রমে ঘোরালো হচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

R G Kar Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE