মালা দাস।
গলব্লাডারের কারণে পেটে ব্যথা হওয়ায় স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন স্বামী। তাঁর দাবি, রিকশা এবং অটোয় করে আসার সময়ে পুরোপুরি স্বাভাবিক ছিলেন স্ত্রী। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছনোর অল্প কিছু ক্ষণের মধ্যেই মারা যান বছর পঞ্চাশের প্রৌঢ়া! সূত্রের খবর, ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে উঠে এসেছে, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। প্রৌঢ়ার স্বামীর কথায়, ‘‘এক জন মানুষ পেটে অস্বস্তি নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পরপরই মারা গেলেন, এটা কী ভাবে হতে পারে?’’ লিখিত অভিযোগে তিনি জানিয়েছেন, হাসপাতালে যাওয়ার পরে তাঁর স্ত্রীর রক্তচাপ বা অক্সিজেনের মাত্রা মাপা হয়নি। করা হয়নি ইসিজি-ও। বদলে গলব্লাডারের চিকিৎসার পুরনো কাগজ দেখে স্যালাইন ও কয়েকটি ইনজেকশন দেওয়া হয়। তাঁর কথায়, ‘‘ওই পরীক্ষাগুলি প্রথমেই করা হলে আমার স্ত্রীর অন্য সমস্যা আছে কি না জানা যেত। সে সব করা হল না কেন? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কি দায় এড়াতে পারেন?’’ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, চার সদস্যের কমিটি গড়ে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
গত ১৩ জুন ঘটনাটি ঘটেছে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কয়েক মাস ধরে সেখানেই গলব্লাডারের চিকিৎসা চলছিল দমদমের বীরপাড়ার বাসিন্দা, পেশায় যন্ত্রশিল্পী বিশ্বজিৎ দাসের স্ত্রী মালা দাসের (৫০)। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘গলব্লাডার অস্ত্রোপচারের জন্য বহির্বিভাগের চিকিৎসকেরা কিছু পরীক্ষা করিয়ে আনতে বলেছিলেন। কিন্তু তার জন্য সময় নেওয়া হয়নি। আবার অতিমারির কারণে রোজগারের যা অবস্থা, তাতে বাইরে থেকেও পরীক্ষাগুলি করাতে পারিনি।’’ তবে বিশ্বজিৎবাবুর দাবি, তাঁর স্ত্রীর যে তড়িঘড়ি অস্ত্রোপচার প্রয়োজন, সে কথাও চিকিৎসকেরা কখনও বলেননি।
তিনি জানাচ্ছেন, ১৩ জুন সকালে বুক ও পেটের সংযোগস্থলে হালকা ব্যথা শুরু হয় মালাদেবীর। প্রেসক্রিপশনে থাকা ব্যথার ট্যাবলেট খান তিনি। দুপুরে জানান, ব্যথা ও অস্বস্তিটা রয়ে গিয়েছে। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘মালাকে জিজ্ঞাসা করি হাসপাতালে যাবে কি না। রাজি হওয়ায় দু’জনে বেরিয়ে পড়ি।’’ প্রথমে রিকশা করে অটোস্ট্যান্ডে, সেখান থেকে অটোয় বিশ্বজিৎবাবু ও মালাদেবী পৌঁছন আর জি করে। জরুরি বিভাগে গেলে চিকিৎসকেরা কাগজপত্র দেখে দম্পতিকে ট্রমা কেয়ারে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘সেখানে এক চিকিৎসক ওই কাগজপত্র দেখে স্ত্রীর ডান হাতে স্যালাইনের চ্যানেলের চেষ্টা করতে থাকেন। আমি জানাই, ওঁর ডান হাতে সমস্যা রয়েছে। তাতে ওই চিকিৎসক বিরক্ত হন।’’ যদিও পরে প্রৌঢ়ার বাঁ হাতে চ্যানেল করে স্যালাইন-সহ কয়েকটি ইনজেকশন দেওয়া হয়। বিশ্বজিৎবাবু জানান, কিছু ক্ষণ পরেই মালাদেবী জানান, তাঁর খুব শীত করছে। বিষয়টি আর এক চিকিৎসককে জানানো হলে তিনি এসে পরীক্ষা করেন। সেই সময়েই এক জন সিনিয়র চিকিৎসক এসে অন্যদের থেকে জানতে চান, মালাদেবীর রক্তচাপ,অক্সিজেনের মাত্রা মাপা কিংবা ইসিজি হয়েছে কি না। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘কিছুই হয়নি শুনে তিনি তড়িঘড়ি সেই পরীক্ষাগুলি করে স্ত্রীকে অক্সিজেন দেওয়ার কথা বলেন। তা দেওয়াও হয়। কয়েক মিনিটের মধ্যে মালার অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় ওঁকে ফের জরুরি বিভাগে নিয়ে যেতে বলা হয়।’’
সেখানে প্রৌঢ়াকে নিয়ে যাওয়ার পরে চিকিৎসকেরা জানান, তিনি মারা গিয়েছেন। হতবাক হয়ে যান বিশ্বজিৎবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘গোটা ব্যাপারটা কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। তাই ময়না-তদন্তে সম্মতি দিই।’’ যদিও ময়না-তদন্তের রিপোর্ট এখনও তিনি হাতে পাননি বলেই জানাচ্ছেন বিশ্বজিৎবাবু।
আর জি করের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান চিকিৎসক সুদীপ্ত রায় বলেন, ‘‘হৃদ্রোগে আক্রান্ত হলে অনেক সময়ে শীত করা, অক্সিজেনের মাত্রা নেমে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়। কিন্তু ওই রোগীর ক্ষেত্রে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ময়না-তদন্তের রিপোর্ট এলে বোঝা যাবে। যে চিকিৎসা তাঁকে দেওয়া হয়েছে, সেখানে খামতি ছিল কি না, শয্যা টিকিট এবং অন্যান্য কাগজপত্র পরীক্ষা করে তা দেখা হচ্ছে।’’
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, ‘‘ওই রোগী আচমকা কেন হৃদ্রোগে আক্রান্ত হলেন, তা বলা মুশকিল। কিন্তু ওঁর চিকিৎসায় কোনও খামতি হয়েছিল কি না, সেই দিকগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy