Advertisement
E-Paper

ফুটেজ উন্নত না হলে ক্যামেরা থেকেই বা কী লাভ, প্রশ্ন ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের ‌

সম্প্রতি কসবার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ছাদ থেকে পড়ে এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আদালতে জমা দিয়েছিল রাজ্য। কিন্তু দেখা যায়, সেই ফুটেজের মান তত উন্নত নয়।

An image of CCTV Camera

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:০১
Share
Save

শহরের বেশ কিছু সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুল এবং অধিকাংশ বেসরকারি স্কুলে বর্তমানে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুল কর্তৃপক্ষেরা জানাচ্ছেন, তাঁরা নিজেদের উদ্যোগে ওই ক্যামেরা লাগিয়েছেন। বেসরকারি স্কুলগুলিরও দাবি, তাঁদের স্কুলে পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসি ক্যামেরা আছে। সম্প্রতি কসবার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ছাদ থেকে পড়ে এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আদালতে জমা দিয়েছিল রাজ্য। কিন্তু দেখা যায়, সেই ফুটেজের মান তত উন্নত নয়। এমনকি, পুরনো ফুটেজও সংরক্ষিত নেই। যার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবারই আদালত প্রশ্ন তুলেছে, স্কুলে কেন ভাল মানের ক্যামেরা থাকবে না এবং পুরনো ফুটেজই বা সংরক্ষিত করা হবে না কেন? প্রায় একই রকম প্রশ্ন তুলছেন অভিভাবকেরাও। তাঁদের জিজ্ঞাস্য, স্কুলের সিসি ক্যামেরার অবস্থা এমন হলে এত টাকা খরচ করে আদৌ কি কোনও লাভ হচ্ছে? পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসি ক্যামেরা স্কুলগুলিতে আছে কি না, সেই প্রশ্নও তুলছেন তাঁরা।

সরকার পোষিত স্কুল, বাঙুরের নারায়ণ দাস বাঙুর মেমোরিয়াল মাল্টিপারপাজ়-এর প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া জানাচ্ছেন, তারা নিজেদের উদ্যোগে ক্যামেরা বসিয়েছেন। তবে, সেই ক্যামেরা খারাপ হলে সারানোর দায়িত্ব স্কুলের। সঞ্জয় জানান, কিছু দিন আগে বল লেগে একটি ক্যামেরা খারাপ হয়। তাঁরা নিজেরাই সেটি সারানোর ব্যবস্থা করেছেন। ওই শিক্ষকের মতে, ক্যামেরা খারাপ থাকা অবস্থায় কোনও অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটলে তার তথ্য জানা কঠিন হয়ে দাঁড়াত।

‘মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি’র নেতা অনিমেষ হালদার বলেন, ‘‘স্কুলের রক্ষণাবেক্ষণ খাতে শিক্ষা দফতর থেকে যত টাকা আসে, তাতে সিসি ক্যামেরা লাগানো অসম্ভব। পড়ুয়াদের বার্ষিক বেতন ২৪০ টাকা। ওই টাকাতেও ক্যামেরা লাগানো সম্ভব নয়। তবু কিছু স্কুল নিজেদের উদ্যোগে সিসি ক্যামেরা বসায়। কিন্তু এই সামান্য টাকায় সেগুলি ঠিক মতো দেখাশোনা করা কি সম্ভব?’’

খারাপ ফুটেজ তো আছেই। আবার, সিসি ক্যামেরা থাকা সত্ত্বেও তা দরকারের সময়ে কাজে আসেনি বিদ্যাসাগর কলেজে। ২০১৯ সালে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনার তদন্তে ক্যামেরার সহায়তা পাওয়া যায়নি। কারণ, ক্যামেরার হার্ড ডিস্ক তখন ছিল না। অন্য একটি ঘটনার তদন্তের জন্য সেই হার্ড ডিস্ক নিয়ে গিয়েছিল সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থা। প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’-এর রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতির মতে, ‘‘শুধু পড়ুয়াদের নিরাপত্তার কারণেই নয়, স্কুলে বহু জরুরি নথিপত্র থাকে। সেগুলি যাতে ঠিক মতো রক্ষিত হয়, তার জন্য পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা দরকার। একটি বা দু’টি ক্যামেরা আছে, এমন ক্ষেত্রে ক্যামেরা ভেঙে চুরির ঘটনা অতীতে ঘটেছে। কিন্তু পর্যাপ্ত ক্যামেরা না থাকায় সেই সব ঘটনার কিনারা হয়নি।’’ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অবশ্য জানিয়েছেন, সরকারি তরফে প্রথমে মেয়েদের স্কুলে সিসি ক্যামেরা বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর পরে ছেলেদের স্কুলেও তা বসানো হবে।

বেসরকারি স্কুলগুলির দাবি, তাদের প্রয়োজনীয় সিসি ক্যামেরা আছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে সেগুলির মান নিয়ে। অভিভাবকদের আরও প্রশ্ন, ক্যামেরার ফুটেজ ঠিক মতো সংরক্ষণ করা হয় কি? কারণ, তাঁদের মতে, প্রয়োজনীয় সংখ্যায় ও আধুনিক মানের ক্যামেরা থাকলে কসবার ঘটনাটির তদন্ত দ্রুত করা যেত। বেসরকারি স্কুলগুলির অভিভাবকদের সংগঠন ‘ইউনাইটেড গার্ডিয়ান্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজ্য সম্পাদক সুপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আগে শহরের বিভিন্ন স্কুলে পড়ুয়া-নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে। সে সব ক্ষেত্রেও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ঠিক মতো পাওয়া যায়নি। বেসরকারি স্কুলে প্রতি বছর ফি বাড়ানো হয়। কিন্তু সেই তুলনায় নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে কি? ফুটেজ কেন বেশি দিন সংরক্ষণ করা হবে না? কেনই বা মান্ধাতা আমলের ক্যামেরা লাগানো থাকবে?’’ প্রয়োজনে উন্নত প্রযুক্তির ক্যামেরা বসানোর দাবিও জানিয়েছে ওই সংগঠন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CCTV Camera Schools cctv footage

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}