Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Hotels and Guest Houses

শহরের হোটেল ও অতিথিশালা যেন ‘খোলা হাট’, প্রশ্নে নজরদারি

উত্তরের খোঁজে শনিবার শহরে ঘুরে চোখে পড়ল হোটেল, অতিথিশালা বা ধর্মশালায় অনিয়মের ছবি। প্রায় কোথাওই কেউ জানেন না, কোন আবাসিক কেন শহরে এসেছেন।

—প্রতীকী চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:২৮
Share: Save:

উৎসবের মরসুমে শোনা যায় কড়াকড়ির কথা। স্বাধীনতা বা প্রজাতন্ত্র দিবসের মতো বিশেষ দিনের আগে থানা থেকে নজরদারি চালানোর কথাও প্রচারিত হয়। কিন্তু বিশেষ দিন বা উৎসব মিটতেই কি কলকাতার হোটেল, অতিথিশালাগুলি ‘খোলা হাট’-এর চেহারা নেয়? তখন কে, কোথা থেকে, কী ঘটিয়ে এসেছেন, কার সঙ্গে, কেনই বা থাকছেন, সে ব্যাপারে কি কোনও খোঁজই নেওয়া হয় না? বেঙ্গালুরুর রামেশ্বরমের কাফেতে বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত জঙ্গিরা নাম ভাঁড়িয়ে বেশ কিছু দিন কলকাতার বিভিন্ন হোটেল, অতিথিশালায় থেকেছিল বলে জানা গিয়েছে। তার পরেই উঠেছে এই প্রশ্ন।

উত্তরের খোঁজে শনিবার শহরে ঘুরে চোখে পড়ল হোটেল, অতিথিশালা বা ধর্মশালায় অনিয়মের ছবি। প্রায় কোথাওই কেউ জানেন না, কোন আবাসিক কেন শহরে এসেছেন। ‘রেজিস্টার’ খাতা থাকলেও তাতে যে নাম-ঠিকানা লেখা হয়েছে বা কলকাতায় থাকার যে কারণ দেখানো হয়েছে, তা সত্যি কি না, তারও নিশ্চয়তা নেই। কারণ, জানা গিয়েছে, জঙ্গিরা ভুয়ো ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং আধার কার্ড দেখিয়েই ঘর নিয়েছিল। বেশ কিছু হোটেল, অতিথিশালায় আবার দেখা গেল, নাম-পরিচয় লিখে তবেই যে ঘর নিতে হবে, এমন কড়াকড়িও নেই। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ছবি তুলে রাখা বা নিয়ম করে সরকারি পোর্টালে সে সব আপলোড করারও ব্যাপার নেই। কিছু জায়গায় আবার বাড়তি টাকা দিলেই সব ছাড়!

নিউ মার্কেটের ক্যাপিটল গেস্ট হাউসে ঘর নিতে গিয়েছিলেন এক যুগল। কিন্তু নাম-ঠিকানা লেখার পরে তাঁরা জানান, পরিচয়পত্র সঙ্গে নেই। রিসেপশনে থাকা তরুণী বললেন, ‘‘পরে দিলেও হবে।’’ পুলিশ ধরবে না? তরুণীর উত্তর, ‘‘পুলিশ সে ভাবে আসে না। কড়াকড়ি না করলে আমাদেরও কিছু বাড়তি আয় হয়।’’ কিছুটা দূরে সদর স্ট্রিটের ‘কন্টিনেন্টাল গেস্ট হাউস’-এ আবার দেখা গেল, খাতায় লেখা আছে পাঁচ জনের নাম। অথচ, লোক রয়েছে আরও তিনটি ঘরে। রিসেপশনের যুবক বললেন, ‘‘কিছু লোক নিয়মিত আসেন। তাঁদের জন্য কড়াকড়ি করা হয় না।’’ ধর্মতলা চত্বরে ‘হোটেল রিজেন্ট ইন’-এ আবার দেখা গেল, সেখানে খাতাই নেই। ম্যানেজার সুমিত তিওয়ারির দাবি, ‘‘পাতা শেষ হয়ে গিয়েছে। বিকেলের মধ্যে চলে আসবে।’’ কম্পিউটার থাকলেও সেটি অকেজো বলে দাবি করেন তিনি।

ভবানীপুরের একটি হোটেল থেকে কিছু দিন আগেই উদ্ধার হয়েছিল লি রোডের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর দেহ। সেখানেও ঘর চাই, কিন্তু পরিচয়পত্র নেই— এ কথা বলায় রিসেপশনের ব্যক্তি বললেন, ‘‘সমস্যা নেই। পুলিশ এলে বলবেন, ইমেলে সব আছে। বাকিটা দেখে নেব।’’ পরিচয়পত্র না থাকায় ১৫০০ টাকার ঘরের জন্য দিতে হবে ২২০০ টাকা! একবালপুরের যে হোটেলে জঙ্গিরা উঠেছিল, তার ঠিক উল্টো দিকের অতিথিশালার মালিকের দাবি, ‘‘বড় বড় মাথারা এখানে থাকতে আসেন। তাঁদের থেকে পরিচয়পত্র চাওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। অনেকে প্রথমে খাতায় সব লিখলেও পরে কাগজ ছিঁড়ে নিয়ে চলে যান।’’

লালবাজারের কর্তাদের দাবি, এই সব অভিযোগের কারণেই কয়েক বছর আগে তাঁরা ‘অনলাইন গেস্ট ফর্ম’ অ্যাপ চালু করেছিলেন। তাতে পুলিশকর্মীরা থানায় বসেই যেমন সবটা দেখতে পাবেন, তেমনই হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজের সময়ের সঙ্গে পরে ফর্ম পূরণের সময় মিলিয়ে দেখে নেওয়া যাবে। যদিও দেখা গেল, হোটেল, অতিথিশালার মালিকদের বড় অংশেরই অ্যাপটি সম্পর্কে ধারণাই নেই! বড় হোটেল ও অতিথিশালা নিয়ম মেনে ‘ফরেন রিজিয়োনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস’ (এফআরআরও)-এর ওয়েবসাইটে তথ্য তুলে দিলেও ছোট হোটেল বা অতিথিশালার সে সবের বালাই নেই। লালবাজারের কেউই এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি। তবে, যুগ্ম-নগরপাল পদমর্যাদার এক কর্তা শুধু বলেছেন, ‘‘জঙ্গিদের বিষয়টি যবে থেকে জানা গিয়েছে, তবে থেকেই তৎপর হয়েছে কলকাতা পুলিশ। কিন্তু কেউ ভুয়ো পরিচয়পত্র দিয়ে ঘর নিলে বোঝার তো উপায় নেই।’’ তা হলে উপায়? স্পষ্ট উত্তর মেলে না কোথাওই।

অন্য বিষয়গুলি:

Hotels Guest Houses negligence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy