Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Nimtala Ghat

বেহাল ঘাটে নেই নজরদারি, তাতেই কি পর পর দুর্ঘটনা?

গোটা শ্রাবণ মাস জুড়েই ভিড় হয় ভূতনাথ মন্দিরে। হাজার হাজার ভক্ত রোজ পুজো দিতে আসেন। সেই কারণে পুজো দিতে এসে দুই যুবকের তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

An image of Ganga Ghat

বিপজ্জনক: এমনই ভাঙাচোরা অবস্থায় রয়েছে নিমতলা ঘাটের সিঁড়ি। সোমবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২৩ ০৬:৫০
Share: Save:

বন্ধুদের সঙ্গে পুজো দিতে রাতেই এসেছিলেন ভূতনাথ ঘাটে। পুজোর লাইনে দাঁড়ানোর আগে স্নান করতে জলে নামেন সকলে। সেই স্নানের সময়েই জোয়ারের টানে তলিয়ে গেলেন দুই যুবক। রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর বন্দর থানার ভূতনাথ ঘাটের কাছে। এ ভাবে গঙ্গায় তলিয়ে যাওয়ার একের পর এক ঘটনায় পুলিশি নজরদারির পাশাপাশি গঙ্গার ঘাটের বেহাল অবস্থা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

পুলিশ জানিয়েছে, নিখোঁজ দুই যুবকের নাম বান্টি কুমার ও কৃষ সোনি‌‌। বছর কুড়ির বান্টি সাঁকরাইলের গোলাঘাটের বাসিন্দা। রিষড়ায় মামার বাড়িতে থাকেন বছর একুশের কৃষ। কলেজপড়ুয়া ওই দুই যুবক শ্রাবণ মাসের প্রতি রবিবার রাতে নিমতলাঘাট সংলগ্ন ভূতনাথ মন্দিরে পুজো দিতে আসেন। গত রবিবার রাতেও চার বন্ধু একসঙ্গে একটি গাড়িতে করে পুজো দিতে এসেছিলেন। রাত ২টো নাগাদ গঙ্গায় নেমে স্নান করার সময়ে আচমকা তলিয়ে যান কৃষ এবং বান্টি। ঘাটের কাছাকাছি থাকায় রক্ষা পান বাকি দুই বন্ধু। রাতেই জলে নেমে তল্লাশি শুরু করেন উত্তর বন্দর থানা এবং লালবাজারের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা। কিন্তু ওই দু’জনের সন্ধান মেলেনি। সোমবার দুপুরেও গঙ্গায় ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। যদিও সন্ধ্যা পর্যন্ত কারও খোঁজ মেলেনি। বান্টির বন্ধু আশিস কুমার বলেন, ‘‘রাতে অনেকেই স্নান করছিলেন। তাঁদের দেখেই আমরা জলে নামি। কিন্তু এ ভাবে জল যে হঠাৎ করে বেড়ে যাবে, বুঝতে পারিনি। চোখের সামনে দুই বন্ধু তলিয়ে যায়।’’ রাতে হাজার হাজার মানুষ পুজো দিতে এসে জলে নামলেও সেখানে পুলিশ বা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ছিল না বলে অভিযোগ।

গোটা শ্রাবণ মাস জুড়েই ভিড় হয় ভূতনাথ মন্দিরে। হাজার হাজার ভক্ত রোজ পুজো দিতে আসেন। সেই কারণে পুজো দিতে এসে দুই যুবকের তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তায় পুলিশি নজরদারি থাকলেও ঘাটে সে ভাবে পুলিশের দেখা নেই। হাতে গোনা সিভিল ডিফেন্সের কর্মী ঘাট ‘পাহারা’ দিচ্ছেন। ভাঙাচোরা ঘাটে নেমেই চলছে স্নান। পুজো উপলক্ষে নিমতলা বা সংলগ্ন লিত্তি ঘাট থেকে শুরু করে প্রতিটি ঘাটেই এ দিন ভিড় উপচে পড়েছে। লিত্তি ঘাটে গিয়ে দেখা গেল, ঘাটের বেশ কিছু সিঁড়ি ভাঙাচোরা অবস্থায়। ভাঙা সিঁড়ির ইটের টুকরো পড়ে রয়েছে পাশেই। সিঁড়ির গায়েই আগাছার জঙ্গল। আগাছার পাশ দিয়েও পুণ্যার্থীরা জলে নামছেন। বর্ষায় সিঁড়ির প্রতিটি ধাপ এতটাই পিচ্ছিল যে, পা পিছলে পড়ে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানালেন স্থানীয়েরা।

এ দিন দুপুরেও জোয়ারের মধ্যে বিপজ্জনক ভাবে স্নান করছিলেন লোকজন। চলছিল জলে পা ডুবিয়ে নিজস্বী তোলা। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাঝেমধ্যে গঙ্গায় পুলিশের দেখা মিললেও অধিকাংশ সময়েই পুলিশ থাকে না। ভোলানাথ পাল নামে স্থানীয় এক যুবক বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীতে অস্থায়ী কর্মী হিসাবে কাজ করেন মাঝেমধ্যে। ভোলানাথ বলেন, ‘‘ঘাটগুলিতে পর পর এত দুর্ঘটনা ঘটছে যে, অনেকে এগুলির সঙ্গে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের তুলনা করছেন। এখানকার বেশ কয়েকটি ঘাট সিঁড়ি দিয়ে কয়েক ধাপ নামার পরে হঠাৎ গভীর হয়ে গিয়েছে। অনেকেই তল খুঁজে না পেয়ে পা হড়কে বেসামাল ভাবে জলে পড়ে যাচ্ছেন। তাতেই অঘটন ঘটছে।’’ ভোলানাথ জানান, ঘাটগুলিতে ইঁদুরের উৎপাত থাকায় সিঁড়ির ধাপ আলগা হয়ে যাচ্ছে। সেই সিঁড়িতে পা ফেললেই ঘটছে দুর্ঘটনা।

ঘাটে ঘাটে নজরদারিতে ঢিলেমির অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছে পুলিশ। লালবাজারের এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘প্রতিটি শিফ্‌টে গঙ্গায় স্পিড বোট নামিয়ে নজরদারি চলে। রাতেও নজরদারি ছিল। এই শ্রাবণ মাসে ভূতনাথ মন্দিরে খুব ভিড় হয় বলে সেখানে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীদের রাখা হচ্ছে।’’ ঘাটগুলির বেহাল দশা প্রসঙ্গে এক পুরকর্তার মন্তব্য, ‘‘একাধিক ঘাটের সংস্কারের কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। কিছু ঘাটের সংস্কারের কাজ চলছে। বাকি ঘাটের কাজও শুরু হবে। মানুষকেও আরও সচেতন হতে হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Ganges Drowning Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy