এগরার খাদিকুল গ্রামে বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত বেআইনি বাজি কারখানা। মঙ্গলবার। ছবি: শুভেন্দু কামিলা।
বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ। গ্রেফতার কারখানার মালিক। কিছু দিনের মধ্যেই জামিন। বাইরে এসেই আবারও বাজির ব্যবসা। ফের বিস্ফোরণ, গ্রেফতারি, জামিন। ফের বাজির ব্যবসা!
অভিযোগ, বেআইনি বাজির ব্যবসায়ীদের কাছে গোটা ব্যাপারটাই কার্যত জলভাত। আর সেই কারণেই একের পর এক বিস্ফোরণ এবং মৃত্যুর ঘটনার পরেও বদলায় না চিত্রটা। ভুক্তভোগীরা প্রশ্ন তোলেন, কবে বদলাবে পরিস্থিতি? এগরায় বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের পরেও উঠেছে এই প্রশ্ন। জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগে গ্রেফতার হয়েছিলেন কারখানার মালিক। কিন্তু ব্যবসা বন্ধ করেননি। এমন উদাহরণ কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাতেও রয়েছে প্রচুর।
কিছু দিন আগেই মহেশতলায় একটি বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে তিন জন মারা যান। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ওই কারখানার মালিক ভরত হাতির স্ত্রী এবং পুত্র। মারা গিয়েছিল ভরতের প্রতিবেশী, সদ্য মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া এক কিশোরীও। পুলিশ ভরতকে গ্রেফতার করলেও বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্ত। স্থানীয় সূত্রের দাবি, নতুন করে বাজির ব্যবসা শুরুর ছক কষছেন তিনি। ভরত নিজেই বুধবার বললেন, ‘‘ওই কাজ ছাড়া আর তো কিছু জানি না। কিছু করে তো দিন কাটাতে হবে!’’
কলকাতা এবং লাগোয়া যে সমস্ত এলাকায় এখনও এমন কারখানা চলছে, সেখানকার বাসিন্দাদের দাবি, মূলত দু’টি কারণে এই ব্যবসা ছাড়েন না কেউ। এক, এতে তিন-চার গুণ বেশি লাভ। দুই, ধরা পড়লেও কড়া শাস্তি না হওয়ার নিশ্চয়তা। এ ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। অভিযোগ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গ্রেফতারির পরে বিস্ফোরক আইনে মামলা করা হয়। আদালতে পুলিশ জেল হেফাজতের দাবি জানায়। প্রায় সব ক্ষেত্রেই বলা হয়, বিস্ফোরক তেমন উদ্ধার করা যায়নি বা ফেটে গিয়েছে। নয়তো বাজি তৈরির সময়ে বিস্ফোরণ ঘটেছে না বলে তৈরি করা বাজিতে আগুন ধরে গিয়েছে জানিয়ে দুর্ঘটনার মতো করে বিষয়টি দেখানো হয় বলেও অভিযোগ। যে হেতু বাজেয়াপ্ত বাজি তেমন থাকে না এবং আরও জেরার প্রয়োজনের কথা বলে না পুলিশ, তাই জেল হেফাজত হয় ধৃতের। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দিন ১৪ কাটিয়েই জামিন পান তিনি।
এর সঙ্গেই সামনে আসে আরও এক অনিয়ম। এমনিতে ১৫ কেজি পর্যন্ত বাজি এবং বাজির মশলা তৈরির ক্ষেত্রে লাইসেন্স নিতে হয় জেলাশাসকের কাছ থেকে। ১৫ থেকে ৫০০ কেজি হলে ‘কন্ট্রোলার অব এক্সপ্লোসিভস’-এর কাছ থেকে লাইসেন্স নেওয়ার নিয়ম। তারও বেশি ওজনের বাজির ব্যবসার ক্ষেত্রে লাইসেন্স দেন ‘চিফ কন্ট্রোলার’। পাশাপাশি, মশলা তৈরি, বাজি তৈরি এবং তা প্যাকেটবন্দি করার কাজও আলাদা ভাবে করতে হয়। এই সব কাজের জায়গার মধ্যে দূরত্ব থাকা উচিত ১৫ মিটার করে। কিন্তু অভিযোগ, এই সব নিয়ম থেকে যায় শুধুই খাতায়-কলমেই।
বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শুধুমাত্র সবুজ বাজি তৈরি এবং বিক্রি হওয়ার কথা। বাকি সবই বেআইনি। কিন্তু রাজ্যে সবুজ বাজি তৈরির জন্য ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (নিরি)-এর ছাড়পত্র রয়েছে মাত্র ২৬টি সংস্থার কাছে। যার মধ্যে দুই মেদিনীপুরের একটি সংস্থাও নেই। ‘পশ্চিমবঙ্গ বাজি শিল্প উন্নয়ন সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর মান্না বললেন, ‘‘সবুজ বাজি তৈরির জন্য জেলাশাসকের ছাড়পত্র থাকতে হবে। পুলিশ সব দিক খতিয়ে দেখার পরে রিপোর্ট দিলে ছাড়পত্র পাওয়া যাবে। এর পরে চাই পরিবেশ দফতরের ছাড়পত্র। তৈরি হওয়া বাজি বিক্রি করার জন্য তারও পরে চাই দমকলের ছাড়পত্র। সব ঠিকঠাক থাকলে এর পরে সবুজ বাজি তৈরির পদ্ধতি শিখিয়ে এবং তৈরি হওয়া বাজি পরীক্ষা করে নিরি ছাড়পত্র দেবে। একটাও গাফিলতি থাকলে বাজি তৈরি করাই যাবে না।’’
কিন্তু এত কিছু দেখবে কে? বাজি সংক্রান্ত বিষয় দেখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কলকাতা পুলিশের রিজ়ার্ভ ফোর্সের এক কর্তা এ দিন বললেন, ‘‘পর পর এমন কয়েকটা ঘটনা সামনে আসায় প্রশাসন কড়া অবস্থান নিয়েছে। কোমর বেঁধে এ বার সব দিক থেকে নামা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy